আবাসিকে দ্বিতীয় দফায় গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধি অবৈধ : হাইকোর্ট
দ্বিতীয় ধাপে আবাসিকে ও গাড়ির জ্বালানি হিসেবে ব্যবহৃত গ্যাসের দাম বাড়ানোর সিদ্ধান্ত অবৈধ ঘোষণা করে রায় দিয়েছেন হাইকোর্ট। একই সঙ্গে ১ জুন থেকে দুই মাস পর্যন্ত দেয়া (গৃহস্থালি) বিল মওকুফ করা হয়েছে।
এ সংক্রান্ত জারি করা রুলের ওপর চূড়ান্ত শুনানি শেষে রোববার হাইকোর্টের বিচারপতি জিনাত আরা ও বিচারপতি কাজী মা. ইজারুল হক আকনের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ এ রায় দেন।
আদালতে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের (বিইআরসি) পক্ষে শুনানি করেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম। তিতাস গ্যাসের পক্ষে শুনানিতে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মোতাহার হোসেন সাজু। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল ইশরাত জাহান। রিট আবেদনের পক্ষে ছিলেন অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী ও মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম।
রিটকারীপক্ষের আইনজীবী সুব্রত চৌধুরী বলেন, দ্বিতীয় দফায় গৃহস্থালি গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধিকে অবৈধ ঘোষণা করেছেন হাইকোর্ট। একই সঙ্গে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের (বিইআরসি) গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধির সিদ্ধান্ত কার্যকর হওয়ার পর গ্রাহকরা যে গ্যাসের বাড়তি বিল দিয়েছে, সেটি তারা ফেরত পাবে না। আদালত এটি মার্জনা করে দিয়েছেন। অর্থাৎ এখন থেকে আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী গ্রাহকের কাছ থেকে এক চুলার জন্য ৭৫০ টাকা ও দুই চুলার জন্য ৮০০ টাকা নেয়া হবে। ১ আগস্ট থেকে নির্ধারিত এই দাম বহাল রাখতে নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। আদালতের এ আদেশ পত্রিকায় গণবিজ্ঞপ্তি আকারে প্রকাশ করে জনগণকে জানানোর নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
গত ২৩ ফেব্রুয়ারি বিকেলে রাজধানীর কারওয়ানবাজারে বিইআরসি ভবনে সংবাদ সম্মেলন করে গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধির ঘোষণা দেন বিইআরসির চেয়ারম্যান মনোয়ার ইসলাম।
দাম বাড়ানোর বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে রিট করেন কনজ্যুমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) কনজ্যুমার কমপ্লেইন হ্যান্ডলিং ন্যাশনাল কমিটির আহ্বায়ক স্থপতি মোবাশ্বের হোসেন।
আবেদনের শুনানি নিয়ে গত ২৮ ফেব্রুয়ারি ১ জুন থেকে দ্বিতীয় দফা গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধি ছয় মাসের জন্য স্থগিত করে রুল জারি করেন হাইকোর্ট। পরে বিইআরসির আপিলে হাইকোর্টের আদেশ স্থগিত করে রুল শুনানির নির্দেশ দেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ। সে অনুসারে ২৪ জুলাই রুলের ওপর শুনানি শেষ হয়েছে।
বিইআরসির ঘোষণা অনুসারে, মার্চের ১ তারিখ থেকে প্রতি চুলা গ্যাসের দাম বেড়ে হয় ৭৫০ টাকা, যা জুনে বেড়ে দাঁড়ায় ৯০০ টাকায়। আর মার্চ থেকে দুই চুলা গ্যাসের দাম হয় ৮০০ টাকা, যা জুন থেকে হয় ৯৫০ টাকা।
অন্যদিকে মার্চ থেকে প্রতি ঘনমিটার সিএনজি গ্যাসের দাম বেড়ে হয় ৩৮ টাকা, যা জুনে বেড়ে দাঁড়ায় ৪০ টাকায়। মার্চ থেকে গ্যাসের বাণিজ্যিক ইউনিটপ্রতি খরচ বেড়ে হয় ১৪.২০ টাকা, জুন থেকে এ ক্ষেত্রে খরচ বেড়ে দাঁড়ায় ১৭.৪০ টাকা।
গত ২৮ ফেব্রুয়ারি হাইকোর্ট এক আদেশে ১ জুন থেকে দ্বিতীয় ধাপে গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত ৬ মাসের জন্য স্থগিত করে আদেশ দেন। একইসঙ্গে আদালত গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধি করে অ্যানার্জি রেগুলেটরি কমিশনের প্রকাশ করা বিজ্ঞপ্তি কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না- তা জানতে চেয়ে রুলও জারি করেন।
চার সপ্তাহের মধ্যে অ্যানার্জি রেগুলেটরি কমিশনের চেয়ারম্যান, সচিবসহ তিনজনকে এ রুলের জবাব দিতে বলা হয়। ফলে ১ জুন থেকে ৯০০ টাকা ও ৯৫০ টাকা মূল্য নির্ধারণ করে গ্যাসের দাম বাড়ানোর সিদ্ধান্ত স্থগিত হয়ে যায়।
তবে প্রথম দফায় বাড়িয়ে গত ১ মার্চ থেকে এক চুলা ৭৫০ টাকা ও ডাবল চুলা ৮০০ টাকা মূল্য নির্ধারণের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন হয়। পরে হাইকোর্টের আদেশ আপিলে স্থগিত হওয়ায় দ্বিতীয় দফায়ও দাম বৃদ্ধি কার্যকর হয়।
গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধির সিদ্ধান্তের বিষয়ে ২৭ ফেব্রুয়ারি হাইকোর্টে রিটটি দায়ের করেন কনজ্যুমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) পক্ষে মুবাশ্বির হোসেন। রিট আবেদনে গ্যাসের দাম বাড়ানো সংক্রান্ত বাংলাদেশ অ্যানার্জি রেগুলেটরি কমিশনের (বিইআরসি) জারি করা বিজ্ঞপ্তির কার্যকারিতা স্থগিত চাওয়া হয়।
রিটে বলা হয়, ‘বাংলাদেশ অ্যানার্জি রেগুলেটরি কমিশন আইন-২০০৪’ অনুসারে বছরে একবারের বেশি গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধির সুযোগ নেই। অথচ এ দফায় একবারেই দুই ধাপে মূল্যবৃদ্ধির সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। তাছাড়া গণশুনানির মাধ্যমে ৯০ দিন পর গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধির কথা। ফলে এবারের মূল্যবৃদ্ধিতে আইনের সেসব বিধানের ব্যত্যয় ঘটেছে।
এফএইচ/এনএফ/পিআর