‘জেনে-বুঝে অবহেলায় ভুল বিচার করিনি’

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০৩:৩২ পিএম, ২৯ জুলাই ২০১৭

বাংলাদেশের নারী বিচারকদের অগ্রদূত বিচারপতি নাজমুন আরা সুলতানা বলেছেন, ‘বিচারিক জীবনে দায়সারাভাবে কোনো বিচার করিনি। জেনে-বুঝে অবহেলা, অমনোযোগীভাবে ভুল বা অন্যায় বিচার করিনি।’

শনিবার সুপ্রিম কোর্ট মিলনায়তনে বাংলাদেশ মহিলা জজ অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে দেয়া আজীবন সম্মাননা প্রদান অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন।

বিজ্ঞাপন

উপস্থিত নারী বিচারকদের উদ্দেশে বিচারপতি নাজমুন আরা সুলতানা বলেন, ‘গভীর মনোযোগ ও একাগ্রতা দিয়ে বিচার করবে। এখানে কঠিন পরিশ্রম করতে হবে। অবহেলা বা অমনোযোগিতার কোনো সুযোগ নেই। দ্রুত বিচার পাওয়ার লক্ষ্যে কঠিন পরিশ্রম করবে। ন্যা্য্য বিচার করবেন। কারণ আল্লাহর পরে ন্যায়বিচারকদের স্থান।’

উচ্চ আদালতে নারী বিচারকের সংখ্যা বাড়ানোর বিষয়ে প্রধান বিচারপতি ও আইনমন্ত্রীকে উদ্দেশ্য করে বিচারপতি নাজমুন আরা সুলতানা বলেন, ‘আপনারা দুই কর্ণধার আছেন। উচ্চ আদালতে নারী বিচারকের সংখ্যা বাড়ানো হোক।’

বিজ্ঞাপন

বিজ্ঞাপন

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার (এসকে) সিনহা। বিশেষ অতিথি ছিলেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক। বক্তব্য রাখেন আপিল বিভাগের জ্যেষ্ঠ বিচারপতি মো. আবদুল ওয়াহহাব মিঞা ও বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন।

আরও বক্তব্য রাখেন হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি সালমা মাসুদ চৌধুরী, সাবেক জেলা জজ ও মহিলা জজ অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক সভাপতি নুরুন্নাহার ওসমানী, খুলনার সিনিয়র জেলা জজ জেসমিন আরা, কুমিল্লার অতিরিক্ত জেলা জজ বেগম জেবুন্নেসা, সিলেটের যুগ্ম জেলা জজ উম্মে শারাবান তহুরা, নোয়াখালীর সিনিয়র সহকারী জজ ফারহানা ভূঁইয়া, কিশোরগঞ্জের সহকারী জজ মহসিনা হোসেন তুসি প্রমুখ।

নারায়ণগঞ্জের জেলা জজ ও অ্যাসোসিয়েশনের সহ-সভাপতি হোসনে আরা আকতারের সঞ্চালনায় স্বাগত বক্তব্য রাখেন ঢাকার সিএমএম কোর্টের বিচারক জেসমিন আরা বেগম। বিচারপতি নাজমুন আরা সুলতানার স্বামীসহ পরিবারের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানে বিচারপতি নাজমুন আরা সুলতানাকে আজীবন সম্মাননার ক্রেস্ট তুলে দেন প্রধান বিচারপতি এবং উত্তরীয় পরিয়ে দেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক।

বিজ্ঞাপন

বিজ্ঞাপন

উল্লেখ্য, ১৯৭৫ সালের ২০ ডিসেম্বর বিচার বিভাগে যোগদান করা এ বিচারপতির শেষ কর্মদিবস ছিল গত ৬ জুলাই। যদিও সুপ্রিম কোর্টের পঞ্জিকা অনুসারে তার অবসরের মেয়াদ ছিল ৭ জুলাই। ওইদিন শুক্রবার হওয়ায় আগের দিন বৃহস্পতিবারই তার শেষ কর্মদিবস।

১৯৫০ সালের ৮ জুলাই মৌলভীবাজারের জন্মগ্রহণ করেন বিচারপতি নাজমুন আরা সুলতানা। বাবা আবুল কাশেম মঈনুদ্দীন ও বেগম রশীদা সুলতানা দীনের এ সন্তান ময়মনসিংহের বিদ্যাময়ী সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ১৯৬৫ সালে এসএসসি পাস করেন। ১৯৬৭ সালে মুমিনুন্নেসা উইমেন্স কলেজ থেকে এইচএসসি এবং আনন্দ মোহন কলেজ থেকে ১৯৬৯ সালে বিএসসি ডিগ্রি অর্জন করেন।

পরবর্তীতে বিচারপতি সুলতানা ১৯৭২ সালে এলএলবি পাস করেন। একই বছর তিনি ময়মনসিংহ জেলা আদালতের আইনজীবী হিসেবে অন্তর্ভুক্ত হন। কিন্তু সেখানে থেমে থাকেননি বিচারপতি নাজমুন আরা সুলতানা। বিসিএস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে ১৯৭৫ সালের ২০ ডিসেম্বর মুনসেফ (সহকারী জজ) হন। হয়ে যান ইতিহাসের অংশ। দেশ ও বিচার বিভাগের ইতিহাসে তিনিই প্রথম নারী বিচারক। পরবর্তীতে যোগ্যতাই তাকে ১৯৯১ সালে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় জেলা জজের আসনে উন্নীত করে। আর এটাও প্রথম কোনো নারীর জেলা জজ হওয়ার ঘটনা।

বিজ্ঞাপন

তবে নিম্ন আদালতেই থেমে থাকেননি বিচারপতি নাজমুন আরা সুলতানার কর্মজীবন। ২০০০ সালের ২৮ মে তিনি হাইকোর্টে অতিরিক্ত বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ পান। এর দুই বছর পর হাইকোর্টে স্থায়ী হন তিনি। হাইকোর্টেও তিনি প্রথম। সবশেষ ২০১১ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি তিনি আপিল বিভাগের প্রথম নারী বিচারপতি হিসেবে শপথ নেন। এর মধ্যে ২০১৩ সালের ১ এপ্রিল তৎকালীন প্রধান বিচারপতি মো. মোজাম্মেল হোসেন আপিল বিভাগের একটি বেঞ্চের নেতৃত্বে বসান বিচারপতি নাজমুন আরা সুলতানাকে।

বিচারিক কাজের পাশাপাশি বিচারপতি নাজমুন আরা সুলাতানা বাংলাদেশ উইমেন জাজেস অ্যাসোসিয়েশনের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ছিলেন। দুইবার সেক্রেটারি ছিলেন ইন্টারন্যাশনাল অ্যাসোসিয়েশন অব উইমেন জাজেসের। বিশ্বের ৮২টি দেশে যে সংগঠনের সদস্য সংখ্যা প্রায় পাঁচ হাজারের মতো।

এফএইচ/বিএ/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন jagofeature@gmail.com ঠিকানায়।