পানি পড়ে প্রধান বিচারপতির চেয়ারেও!

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০৮:২২ এএম, ২৯ জুলাই ২০১৭
ফাইল ছবি

প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার (এসকে) সিনহার চেয়ারেও বৃষ্টির পানি পড়ে বলে জানিয়েছেন তিনি নিজেই। শনিবার দেশের প্রথম নারী বিচারপতি (অবসরপ্রাপ্ত) নাজমুন আরা সুলতানার সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি এ কথা জানান।

প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার (এসকে) সিনহা বলেন, সুপ্রিম কোর্টের মূল ভবনে আমি যে চেয়ারে বসি, সেখানেও পানি পড়ে। আপিল বিভাগ ও হাইকোর্ট বিভাগের মূল রেকর্ড রুমও এ ভবনে।

বাংলাদেশের নারী বিচারকের অগ্রদূত বিচারপতি নাজমুন আরা সুলতানাকে আজীবন সম্মাননা প্রদান অনুষ্ঠানে আজ শনিবার এসব কথা বলেন তিনি। বাংলাদেশ মহিলা জজ অ্যাসোসিয়েশনের উদ্যোগে সুপ্রিম কোর্ট অডিটোরিয়ামে এ সম্মাননা দেয়া হয়।

সুপ্রিম কোর্টের মূল ভবনের বর্তমান অবস্থার কথা উল্লেখ করে প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রধান বিচারপতি আরও বলেন, ২০ তলা নতুন ভবনের প্রস্তাবটি একনেকেই ঘোরাঘুরি করছে। বর্তমান মূল ভবন মনে হয় আর পাঁচ-ছয় বছরের বেশি টিকবে না। এটি ধসে গেলে মনে হয় আমাদের মাঠে বসেই বিচার কাজ পরিচালনা করতে হবে।

মহিলা জজদের অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি তানজীনা ইসমাইলের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক এমপি।

বিচার বিভাগের স্বার্থে আমি কথা বলেই যাব

অনুষ্ঠানে প্রধান বিচারপতি আরও বলেন, বিচার বিভাগের স্বার্থে আমি কথা বলেই যাব, কোনোভাবেই ক্ষান্ত হব না। বিচার বিভাগের স্বার্থে কথা বলাকে নির্বাহী বিভাগ রাজনৈতিক বক্তব্য বলে মনে করলেও এসব বিষয়ে আমি কথা বলেই যাব।

আইনমন্ত্রীর উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, ‘মাননীয় মন্ত্রী আপনাকে বলছি, সুপ্রিম কোর্টের মূল ভবন ভঙ্গুর অবস্থায় রয়েছে। আমি যে চেয়ারে বসি সেখানেও বৃষ্টির পানি পড়ে। নতুন একটা অ্যানেক্স ভবন না করলে মাঠে বসে বিচার কাজ করতে হবে। মাননীয় মন্ত্রী বিচার বিভাগ কীভাবে চলবে?’

এ সময় প্রধান বিচারপতি বিভিন্ন সেক্টরে দেশ উন্নত হলেও মানের দিক থেকে বিচার বিভাগকে শূন্যে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ করেন।

justice

বিচারপতি নাজমুন আরা সুলতানাকে নারী বিচারকদের পথপ্রদর্শক উল্লেখ করে তিনি বলেন, পৃথিবীর যেকোনো দেশের চেয়ে আমাদের দেশে নারী বিচারকরা অগ্রগামী। সরকার এগিয়ে আসলে হাইকোর্টে আরও নারী বিচারক নিয়োগ দেয়া সম্ভব।

প্রধান বিচারপতি বলেন, আমাদের দেশে রেওয়াজ হয়ে গেছে পলিটিক্যাল সরকার ক্ষমতায় এসে হাইকোর্ট বিভাগে ইচ্ছামত বিচারপতি নিয়োগ দেন। হাইকোর্টের বিচারপতিদের একটা নির্দিষ্ট সংখ্যা থাকতে হবে।

এ সময় সরকারের প্রতি আপিল বিভাগে আরও তিনজন বিচারপতি নিয়োগ দেয়ার আবেদন জানিয়ে বিচার বিভাগ অকেজো হয়ে যাওয়ার আগে সর্বোচ্চ আদালতের বিভিন্ন শূন্যপদে বিচারক নিয়োগ এবং সার্বিক অবকাঠামো উন্নয়নে মনোযোগী হতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।

অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেন, বিচারপতি নাজমুন আরা সুলতানা এ দেশ এবং বিচার বিভাগের ইতিহাসের অংশ। তিনি এ দেশের বিচার বিভাগের অহঙ্কার। তাকে অনুসরণ করে অনেক নারী এ পেশায় এসেছেন। আজ তাই দেশে ২৪ শতাংশ নারী বিচারক রয়েছেন।

অনুষ্ঠানে বিচারপতি নাজমুন আরা সুলতানা বলেন, ‘আমি আমার বিচারিক জীবনে ন্যায়বিচার করে গেছি। কখনও ইচ্ছাকৃতভাবে কিংবা অবহেলায় ভুল বিচার করিনি।’

নারী বিচারকদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, প্রিয় নারী বিচারকরা মনে রাখবেন, বিচারকের জীবন মানেই ন্যায়বিচারের দায়িত্ব কাঁধে নেয়া। আর এ দায়িত্ব পালন করা খুব কঠিন ও পরিশ্রমের।

সুপ্রিম কোর্ট অডিটোরিয়ামে বাংলাদেশ মহিলা জজ অ্যাসোসিয়েশন আয়োজিত সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ ও হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি এবং দেশের নারী বিচারকরাও উপস্থিত ছিলেন।

এফএইচ/এমএমজেড/এমএআর/আরআইপি

 

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।