আদালতে ফরহাদ মজহার
‘নিখোঁজ’ থাকার ১৯ ঘণ্টা পর যশোরের অভয়নগর থেকে উদ্ধার হওয়া কবি ও কলামিস্ট ফরহাদ মজহারকে ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতে নেয়া হচ্ছে।
মঙ্গলবার দুপুর ২টা ২৫ মিনিটে তাকে বহনকারী পুলিশের গাড়িটি মিন্টো রোডে অবস্থিত ডিবি কার্যালয় ত্যাগ করে। পৌনে ৩টায় গাড়িটি আদালত চত্বরে উপস্থিত হয়।
যশোর থেকে উদ্ধারের পর ফরহাদ মজহারকে প্রথমে আদাবর থানা এবং পরে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ কার্যালয়ে নেয়া হয়।
ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে ডিবির যুগ্ম কমিশনার আব্দুল বাতেন সাংবাদিকদের বলেন, ‘জিজ্ঞাসাবাদে ফরহাদ মজহার আমাদের জানিয়েছেন, সোমবার ভোরে বাসা থেকে বের হওয়ার পরপরই একদল দুর্বৃত্ত তাকে ধরে চোখ বেঁধে একটি সাদা মাইক্রোতে তুলে নিয়ে যায়।’
তিনি স্বেচ্ছায় বাসা থেকে বের হয়েছিলেন, না কি ফোন করে তাকে বাসার বাইরে আনা হয়েছিল- সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে ডিবির এ কর্মকর্তা বলেন, ‘তিনি (ফরহাদ মজহার) আমাদের জানিয়েছেন, ওষুধ কেনার জন্য তিনি বাসা থেকে বের হন। তাকে কেউ ফোন করেননি। বাসা থেকে বের হওয়ার পরই তাকে জোর করে অপহরণ করা হয়।’
স্ত্রীর দায়ের করা ‘অপহরণ’ মামলা প্রসঙ্গে আব্দুল বাতেন বলেন, অপহরণ মামলার বিষয়টি আমরা তদন্ত করে দেখছি। তদন্তের পর এ বিষয়ে বিস্তারিত জানা যাবে।
ফরহাদ মজহারের নিখোঁজের ঘটনায় সোমবার রাতেই স্ত্রী ফরিদা আক্তার বাদী হয়ে আদাবর থানায় একটি অপহরণ মামলা দায়ের করেন। মামলা নং- ০৪। এর আগে, তিনি জিডি করেছিলেন। জিডি নং- ১০১।
ডিবির এ কর্মকর্তা আরও জানান, নিখোঁজের পর উদ্ধার হওয়া পর্যন্ত- পুরো বিষয়টি জবানবন্দি হিসেবে গ্রহণ করা হবে। এ কারণে তাকে ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতে নেয়া হচ্ছে।
সোমবার রাতে যশোরের অভয়নগরের একটি যাত্রীবাহী বাস থেকে ফরহাদ মজহারকে উদ্ধারের পর মঙ্গলবার সকালে তাকে নেয়া হয় আদাবর থানায়। সেখান থেকে তেজগাঁওয়ের ডিসি কার্যালয়ে নেয়ার পর জিজ্ঞাসাবাদ করতে পরে তাকে নেয়া হয় মিন্টো রোডে গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) কার্যালয়ে।
বিপ্লব কুমার সরকার জানিয়েছেন, জিজ্ঞাসাবাদ শেষে ফরহাদ মজহারকে আদালতে সোপর্দ করা হবে। এরপর আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী পরবর্তী ব্যবস্থা নেয়া হবে।
সোমবার ফরহাদ মজহার নিখোঁজ হওয়ার পর পরিবারের অভিযোগের ভিত্তিতে আদাবর থানায় এ সংক্রান্ত একটি অপহরণ মামলা হয়েছে বলে ডিসি বিপ্লব জানালেও পরিবার দাবি করছে, তারা এখনো কোনো মামলা দায়ের করেনি। শুধু লিখিত অভিযোগ করা হয়েছে।
সোমবার ভোরে শ্যামলীর রিং রোড ১ নং হক গার্ডেনের বাসা থেকে বের হওয়ার পর নিখোঁজ হন ফরহাদ মজহার। পরবর্তীতে তিনি স্ত্রীকে মোবাইলে ফোনে জানান, কে বা কারা তাকে ধরে নিয়ে যাচ্ছেন। তাকে মেরেও ফেলা হতে পারে। সন্ধ্যা পর্যন্ত ৬ বার ফোন করে ৩৫ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করা হয়।
নিখোঁজ হওয়ার সংবাদ ছড়িয়ে পড়লে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তাৎক্ষণিক উদ্যোগ নিয়ে মোবাইল ট্রাকিং করে তার অবস্থান সম্পর্কে নিশ্চিত হয়ে ১৯ ঘণ্টা পর যশোরের অভয়নগরের একটি যাত্রীবাহী বাস থেকে তাকে উদ্ধার করে।
তবে কিভাবে তিনি যশোর পৌঁছালেন বা কারা তাকে সেখানে নিয়ে গেছে সে সব বিষয় এখনও পরিষ্কার নয়।
এরই মধ্যে রাতে খুলনা রেঞ্জের ডিআইজি দিদার আহমেদ এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, প্রাথমিকভাবে আমাদের মনে হয়েছে, তিনি ঢাকা থেকে স্বেচ্ছায় খুলনায় ভ্রমণ করেন। তবে এখনই এ বিষয়ে পুরোপুরি নিশ্চিত করে কিছু বলা যাবে না।
তাকে ঢাকায় নিয়ে বিস্তারিত জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।
ঠিক কি কারণে ফরহাদ মজহার বাসা থেকে বের হয়েছিলেন- জাগো নিউজের এমন প্রশ্নের জবাবে তেজগাঁও বিভাগের এডিসি ওয়াহিদুল ইসলাম বলেছেন, সে বিষয়ে জানতেই তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। প্রাথমিকভাবে জানা গেছে তার সঙ্গে ছোট একটি ব্যাগ ছিল। সেই ব্যাগে মোবাইলের চার্জার ও শার্টও ছিল। এ থেকে অনুমান করা যায় তার বাসা থেকে বের হওয়ার পেছনে অন্য কোনো উদ্দেশ্য থাকতে পারে।
জেইউ/এমএআর/জেআইএম