অ্যাটর্নি জেনারেল হতাশ


প্রকাশিত: ০৫:৫৩ এএম, ০৩ জুলাই ২০১৭

বিচারপতি অপসারণ সংক্রান্ত সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী অবৈধ ঘোষণা করে হাইকোর্টের দেয়া রায়ের বিরুদ্ধে সরকারের দায়ের করা আপিল সর্বসম্মতিক্রমে খারিজ করে দিয়েছেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ।

সুপ্রিম কোর্টের এ রায়ে হতাশা প্রকাশ করেছেন রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ আইনি কর্মকর্তা অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম।

সকালে রায় ঘোষণা হওয়ার পর নিজ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের তিনি বলেন, সংবিধানের মূলে ফিরে যাওয়ার যে অভিপ্রায় ছিল সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনীর মাধ্যমে তা যেতে পারেনি। এতে আমি হতাশ, দুঃখিত।

একইসঙ্গে অ্যাটর্নি জেনারেল এ কথাও বলেছেন, এ রায়ের মাধ্যমেই প্রমাণিত হয়েছে বিচার বিভাগ স্বাধীন। বিচার বিভাগ স্বাধীন বলেই এ রায় দিতে পেরেছে।

এরআগে সকালে ষোড়শ সংশোধনী অবৈধ ঘোষণা করে হাইকোর্টের দেয়া রায়ের বিরুদ্ধে সরকারের দায়ের করা আপিল সর্বসম্মতিক্রমে খারিজ করে দেন সুপ্রিমকোর্টের আপিল বিভাগ।

গত ১ জুন সুপ্রিম কোর্টের বিচারকদের অপসারণসংক্রান্ত সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী বাতিল করে হাইকোর্টের দেয়া রায়ের বিরুদ্ধে আপিল শুনানি শেষ হয়।

অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, ১৯৭১ সনে রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে ত্রিশ লক্ষ লোক তাদের প্রাণ দিয়েছিলেন এবং দুই লক্ষ মা-বোন ইজ্জত হারিয়েছেন। এই প্রেক্ষাপটে ১৯৭২ সালে আমাদের সংবিধান গৃহীত হয়েছিল। বঙ্গবন্ধু এই সংবিধান সম্পর্কে বলেছিলেন, এই সংবিধান রক্তের আখরে লেখা। আমাদের স্বপ্ন সংবিধানের মূল ধারাতে ফিরে যাওয়া এবং এই ধারাগুলোতে আমরা ফিরেও গিয়েছিলাম। পঞ্চম, সপ্তম, অষ্টম এবং ত্রয়োদশ সংশোধনীর মামলার রায়ের মাধ্যমে। কিন্তু আমি অত্যন্ত হতাশ। আজকে এই রায়ের পরিপ্রেক্ষিতে আমাদের যে আশা ছিল, স্বপ্ন ছিল সংবিধানের মূল অনুচ্ছেদ ৯৬ তে ফিরে যাবো, সেটা আর হলো না। আমি অত্যন্ত দুঃখ অনুভব করছি।

শূন্যতা বিরাজ করছে
আদালতের আজকে রায়ের ফলে বিচারক অপসারণ ক্ষমতা সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলের হাতে ফিরে গেল কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমার মতে পুনর্বহাল হয়নি। আমার মতে সংবিধানের যে অনুচ্ছেদ সংসদ বাতিল করেছে সেটা আপনা-আপনি পুনস্থাপন হবে না। এই অবস্থায় আমার মতে শূন্যতা বিরাজ করছে। সংসদের কাজ তো আর কোর্ট করতে পারে না।

এ রায়ের ফলে সংসদের সঙ্গে বিচার বিভাগের দ্বন্দ্ব আরও বেড়ে গেল কি না জানতে চাইলে অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, দ্বন্দ্বের কথা আমি বলবো না। আমার কথা হলো- আমাদের যে প্রত্যাশা ছিল যে, আমরা মূল সংবিধানের ফিরে যাবো, যে সংবিধান আমরা রক্তের বিনিময়ে পেয়েছিলাম, যেটিকে বঙ্গবন্ধু রক্তের আখরে লেখা বলেছিলেন। এখানেই আমার হতাশা।

আলাপ করে সিদ্ধান্ত
এ রায়ের পর এখন আপনারা কি করবেন এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, এখন মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে সরকারের সঙ্গে আলাপ করে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। সংসদ সদস্যদের সম্পর্কে হাইকোর্ট যে বক্তব্য দিয়েছিলেন তা ছিল খুবই ‘আপত্তিকর’। তা বাদ দেয়া উচিৎ।

৯টায় কোর্ট বসার কথা সেখানে প্রায় ৮৫ মিনিট দেরি করে কেন বসলেন- জানতে চাইলে তিনি বলেন, ওনারা হয়েতো ভিতরে এটা নিয়ে আলাপ-আলোচনা করেছেন। এটা অনেক মামলার ব্যাপারেই হয়।

এ রায়ে সরকার এবং প্রশাসনের মধ্যে কোনো প্রভাব পড়বে কি না- জানতে চাইলে তিনি বলেন, সরকার তো চলে শাসনতন্ত্র মেনে। এখন দেখা যাক বিচারপতিদের অপসারণের ব্যাপারে কী পদ্ধতি অনুসরণ করতে হয়।

সংবিধান তো পরিবর্তনশীল, বিভিন্ন সময় সংবিধান পরিবর্তন হয়েছে এই বিষয়টি নিয়ে আপনারা এতো হতাশ হচ্ছেন কেন- এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, হতাশ এই জন্য যে এটাতো পরিবর্তনের প্রশ্ন না..এটা হলো আগের জায়গায় যাওয়া, পুনঃস্থাপন করা। তার চেয়ে বড় কথা সুপ্রিম জুডিশিয়ালের বিষয়টি..যা একমাত্র পাকিস্তান...আর আমাদের দেশে সামরিক সরকার এসে জিয়াউর রহমানের আমলে অন্যায়ভাবে সংবিধান সংশোধন করেছিল। কাজেই আমাদের কথা হলো আমরা সংবিধান থেকে সামরিক শাসনে যা করেছিল এগুলোকে মুছে ফেলতে চাই।

মূল সংবিধানের ফিরে যেতে পারলেন না তাতে কী ক্ষতি হলো জানতে চাইলে তিনি বলেন, সবচেয়ে বড় ক্ষতি হলো, এটা একটা প্রক্রিয়ার কথা। বিচারপতি অপসারণের বিষয়ে সংসদে বা সংবিধানে যেটা আছে। সেখানে ফিরে যাওয়ার প্রত্যাশা সবারই। পৃথিবীর কোনো দেশেই কিন্তু মূল সংবিধানে ফিরে যাওয়ার বিষয়ে বাধা সৃষ্টি হয়নি। পঞ্চদশ সংশোধনীতে এ বিষয়টি শুধু ‘কাট অ্যান্ড পেস্ট’ করা হয়েছে। বিচারপতি অপসারণের বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্তই হয়নি। ১৬তম সংশোধনীতে আইনমন্ত্রী বিবৃতি দিয়ে বিস্তারিত ব্যাখ্যা দিয়েছেন, কেন আমরা ৯৬ অনুচ্ছেদে ফিরে যেতে চাই।

এফএইচ/এনএফ/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।