রোববার থেকে আলোচিত মামলার শুনানি


প্রকাশিত: ০৩:৫০ পিএম, ০১ জুলাই ২০১৭

ঈদের ছুটি ও অবকাশ শেষে আগামীকাল রোববার থেকে খুলছে সর্বোচ্চ আদালত। সুপ্রিম কোর্ট খোলার পর নারায়ণগঞ্জের আলোচিত সাত খুন মামলার আপিল, পুরান ঢাকায় ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের হামলায় দর্জি দোকানদার বিশ্বজিৎ হত্যা মামলার শুনানি এবং বিডিআর বিদ্রোহের ঘটনায় পিলখানা সেনা কর্মকর্তা হত্যা মামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিদের ডেথ রেফারেন্স ও আসামিদের আপিলের রায় ঘোষণা করা হবে।

আলোচিত ও গুরুত্বপূর্ণ এসব মামলার শুনানি ও রায় ঘোষণার জন্য রোববার থেকে আইনজীবী-বিচারপ্রার্থীদের পদচারণায় সরগরম থাকবে সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণ।

সর্বোচ্চ আদালত খোলার দিনই নিম্ন আদালতে বিচারকদের চাকরির শৃঙ্খলাবিধি, ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের আপিলের রায়, বাড়ি থেকে উচ্ছেদের বৈধতার বিষয় চ্যালেঞ্জ করে ব্যারিস্টার মওদুদের রিটের শুনানি, রমনায় বোমা হামলার ঘটনায় দায়ের করা মামলার আপিলের শুনানি ও রায় ঘোষণা করা হতে পারে।

আলোচিত সাত খুন মামলার আপিল শুনানি

নারায়ণগঞ্জের আলোচিত সাত খুন মামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিদের ডেথ রেফারেন্স ও আপিলের শুনানি শুরু হয়েছে। মামলার বিষয়ে কয়েকদিন শুনানি করে অবকাশকালীন ছুটির পর আপিল মুলতবি ছিল। রোববার কোর্ট শুরু হওয়ার পর এ মামলার শুনানি যথারীতি চলবে।

গত ২২ মে বিচারপতি ভবানী প্রসাদ সিংহ ও বিচারপতি মোস্তফা জামান ইসলামের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চে রাষ্ট্রপক্ষের পেপারবুক উপস্থাপনের মধ্য দিয়ে আপিল শুনানি শুরু হয়।

এর আগে, চলতি বছরের ৮ ফেব্রুয়ারি নারায়ণগঞ্জের আলোচিত সাত খুন মামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত নূর হোসেনসহ বাকি আসামিদের নিয়মিত ও জেল আপিল শুনানির জন্য গ্রহণ করেন হাইকোর্ট।

গত ১৬ জানুয়ারি খুনের দায়ে সাবেক কাউন্সিলর নূর হোসেন, র্যাব কর্মকর্তা (বরখাস্ত) লে. কর্নেল তারেক সাঈদ মোহাম্মদসহ ২৬ জনকে মৃত্যুদণ্ড দেন আদালত। বাকি নয় আসামিকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দেয়া হয়।

২০১৪ সালের ২৭ এপ্রিল ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ লিংক রোড থেকে অপহৃত হন নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের কাউন্সিলর নজরুল ইসলাম, আইনজীবী চন্দন সরকারসহ সাতজন। ৩০ এপ্রিল শীতলক্ষ্যা নদীতে তাদের লাশ ভেসে উঠে। পরদিন আরেকটি লাশ পাওয়া যায়। নিহত অন্যান্যরা হলেন- নজরুলের বন্ধু মনিরুজ্জামান স্বপন, তাজুল ইসলাম, লিটন, গাড়িচালক জাহাঙ্গীর আলম ও চন্দন সরকারের গাড়িচালক মো. ইব্রাহীম।

ওই ঘটনায় কাউন্সিলর নজরুলের স্ত্রী সেলিনা ইসলাম আওয়ামী লীগের নেতা নূর হোসেনসহ ফতুল্লা মডেল থানায় মামলা করেন।

বিশ্বজিৎ হত্যা মামলা

বহুল আলোচিত দর্জি দোকানদার বিশ্বজিৎ দাস হত্যা মামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিদের ডেথ রেফারেন্স ও আপিল শুনানি প্রায় শেষের দিকে। ইতোমধ্যে রাষ্ট্রপক্ষ এ মামলায় যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষ করেছেন।

কোর্ট খোলার পর এ মামলার চূড়ান্ত শুনানি শেষে বিচারপতি মো. রুহুল কুদ্দুস ও বিচারপতি ভীষ্মদেব চক্রবর্তীর সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ রায় ঘোষণা করার দিন ঠিক করবেন।

গত ১৬ মে বিশ্বজিৎ দাস হত্যা মামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিদের ডেথ রেফারেন্স ও আপিল শুনানি শুরু হয়। গত ২৬ ফেব্রুয়ারি বিশ্বজিৎ দাস হত্যা মামলা অগ্রাধিকার ভিত্তিতে শুনানির জন্য নির্ধারণ করেন প্রধান বিচারপতি।

২০১৩ সালের ১৮ ডিসেম্বর বিশ্বজিৎ দাস হত্যা মামলায় আটজনকে মৃত্যুদণ্ড ও ১৩ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেন আদালত।

২০১২ সালের ৯ ডিসেম্বর ১৮ দলের অবরোধ কর্মসূচি চলাকালে রাজধানীর পুরান ঢাকার ভিক্টোরিয়া পার্কের সামনে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) ছাত্রলীগ ক্যাডাররা নির্মমভাবে খুন করেন দর্জি দোকানি বিশ্বজিৎ দাসকে।

শাঁখারীবাজারে বিশ্বজিতের দর্জি দোকান ছিল। তিনি থাকতেন লক্ষ্মীবাজার। গ্রামের বাড়ি শরীয়তপুর।

পিলখানা হত্যা মামলার আপিলের রায়

বিডিআর (বর্তমানে বিজিবি) বিদ্রোহের সময় পিলখানায় সেনা কর্মকর্তা হত্যা মামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত ১৫২ আসামির ডেথ রেফারেন্স ও আসামিদের আপিলের ঘোষণা যেকোনো দিন ঘোষণা করবেন হাইকোর্ট।

গত ১৩ এপ্রিল হাইকোর্টের বিচারপতি মো. শওকত হোসেনের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের বিশেষ বেঞ্চে শুনানি শেষে মামলাটি রায় ঘোষণার জন্য অপেক্ষমাণ রয়েছে।

২০০৯ সালের ২৫ ও ২৬ ফেব্রুয়ারি তৎকালীন বিডিআর সদর দফতর পিলখানায় সংঘটিত বিদ্রোহে ৫৭ সেনা কর্মকর্তাসহ ৭৪ জন প্রাণ হারান।

ষোড়শ সংশোধনী বাতিলে আপিলের রায়

সুপ্রিম কোর্ট খোলার পর বিচারপতিদের অপসারণ ক্ষমতাসংক্রান্ত সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী অবৈধ ঘোষণা করে হাইকোর্টের দেয়া রায়ের বিরুদ্ধে আপিল মামলার রায় যেকোনো দিন ঘোষণা করবেন আপিল বিভাগ। এর আগে, ১ জুন শুনানি শেষে মামলাটি রায়ের জন্য অপেক্ষমাণ রাখা হয়।

প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার নেতৃত্বাধীন সাত সদস্যের আপিল বেঞ্চ শুনানি শেষে মামলাটি রায় ঘোষণার জন্য অপেক্ষমাণ রাখেন।

গত ৮ মে ষোড়শ সংশোধনী অবৈধ ঘোষণা করে হাইকোর্টের দেয়া রায়ের বিরুদ্ধে আপিল শুনানি শুরু হয়। ধারাবাহিকভাবে টানা ১১ দিন শুনানি হয়।

আপিল শুনানিতে আদালতে মতামত উপস্থাপনকারী ১০ এমিকাস কিউরির (আদালতের বন্ধু) মধ্যে শুধু ব্যারিস্টার আজমালুল হোসেন কিউসি সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনীর পক্ষে মত দেন।

অপর নয় এমিকাস কিউরি ড. কামাল হোসেন, জ্যেষ্ঠ আইনজীবী এম আই ফারুকী, আব্দুল ওয়াদুদ ভূঁইয়া, প্রাক্তন অ্যাটর্নি জেনারেল এ এফ এম হাসান আরিফ, ব্যারিস্টার এম. আমিরুল ইসলাম, বিচারপতি টিএইচ খান, ব্যারিস্টার রোকন উদ্দিন মাহমুদ, ফিদা এম কামাল ও এ জে মোহাম্মদ আলী সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনীর বিপক্ষে তাদের মতামত তুলে ধরেন।

গত ৮ ফেব্রুয়ারি ষোড়শ সংশোধনীর আপিল শুনানিতে এমিকাস কিউরি নিয়োগ দেন আপিল বিভাগ।

গত বছরের ১১ আগস্ট সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী অবৈধ ঘোষণা করে দেয়া রায় সুপ্রিম কোর্টের ওয়েব সাইটে প্রকাশ করা হয়। পরে ওই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করে রাষ্ট্রপক্ষ।

বিচারকদের শৃঙ্খলাবিধি প্রণয়ন

নিম্ন আদালতের বিচারকদের চাকরির শৃঙ্খলাসংক্রান্ত বিধিমালা গেজেট আকারে প্রকাশ সংক্রান্ত শুনানির জন্য আগামীকাল রোববার দিন ধার্য রয়েছে।

রাষ্ট্রপক্ষের সময় আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার নেতৃত্বাধীন সাত সদস্যের আপিল বেঞ্চ সরকারকে সময় দিয়েছিলেন। এর আগেও গেজেট প্রকাশে কয়েক দফা সময় নেয় সরকার।

নিম্ন আদালতের বিচারকদের চাকরির শৃঙ্খলাসংক্রান্ত বিধিমালা প্রণয়ন না করায় আইন মন্ত্রণালয়ের দুই সচিবকে ১২ ডিসেম্বর তলব করেন আপিল বিভাগ।

গত বছর ৭ নভেম্বর বিচারকদের চাকরির শৃঙ্খলাসংক্রান্ত বিধিমালা ২৪ নভেম্বরের মধ্যে গেজেট আকারে প্রণয়ন করতে সরকারকে নির্দেশ দিয়েছিলেন আপিল বিভাগ।

১৯৯৯ সালের ২ ডিসেম্বর মাসদার হোসেন মামলায় ১২ দফা নির্দেশনা দিয়ে রায় দেয়া হয়। ওই রায়ে নিম্ন আদালতের বিচারকদের চাকরির শৃঙ্খলাসংক্রান্ত বিধিমালা প্রণয়নের নির্দেশনা ছিল।

বাড়ি সংক্রান্ত ব্যারিস্টার মওদুদের রিটের শুনানি

গুলশানের বাড়ি থেকে উচ্ছেদ করার বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে বিএনপি নেতা মওদুদ আহমদের দায়ের করা রিটের শুনানির জন্য আগামীকাল রোববার দিন ধার্য রয়েছে।

গত ৮ জুন বিচারপতি সৈয়দ মোহাম্মদ দস্তগির হোসেন ও বিচারপতি আতাউর রহমান খানের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ শুনানির জন্য এ দিন ধার্য করেন।

নোটিশ না দিয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মওদুদ আহমদের গুলশান-২ এর বাড়িতে উচ্ছেদ কার্যক্রম চালানোর বৈধতা চ্যালঞ্জ করে ৮ জুন সকালে হাইকোর্টে রিট দায়ের করা হয়। রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) পাশাপাশি রাষ্ট্রকেও রিটে বিবাদী করা হয়।

রাজধানীর গুলশান- ২ নম্বরের ওই বাড়িতে দীর্ঘদিন ধরে বসবাস করে আসছিলেন মওদুদ আহমদ। আইনি লড়াইয়ে হেরে যাওয়ার পর গত ৭ জুন তাকে বাড়িটি ছাড়তে হয়। ওইদিনই রাজউক বাড়িটি নিয়ন্ত্রণে নেয়ার কার্যক্রম শুরু করে।

রমনায় বোমা হামলা মামলা  

রমনার বটমূলে পহেলা বৈশাখের অনুষ্ঠানস্থলে বোমা হামলার ঘটনায় দায়ের করা হত্যা মামলার আপিল শুনানি শেষ পর্যায়ে রয়েছে। সুপ্রিম কোর্ট খোলার পরপরই এ মামলার চূড়ান্ত শুনানি শেষে রায় ঘোষণার জন্য দিন ধার্য করার কথা রয়েছে।

চলতি বছরের ৮ জানুয়ারি বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহিম ও সহিদুল করিমের হাইকোর্ট বেঞ্চে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্তদের ডেথ রেফারেন্স (মৃত্যুদণ্ড অনুমোদন) ও দণ্ডপ্রাপ্ত আসামিদের আপিল শুনানি শুরু হয়।

২০০১ সালের ১৪ এপ্রিল রমনা বটমূলে বর্ষবরণ অনুষ্ঠানে বোমা হামলায় ১০ জন নিহত ও বেশ কয়েকজন আহত হন। ঘটনাস্থলেই মারা যান নয়জন।

এছাড়া খালেদা জিয়ার চার মামলা বাতিলের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষের আবেদনের শুনানি, গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধির বিরুদ্ধে রুলের শুনানি, এক শ্রমিককে নাকে খত দেয়া নিয়ে চেয়ারম্যান-ওসিকে তলবের শুনানিসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ মামলা ও রিটের শুনানি শুরু হবে সুপ্রিম কোর্ট খোলার পর।

এফএইচ/এমএআর/আরআইপি

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।