বনানীর ধর্ষণ : জবানবন্দি প্রত্যাহারের আবেদন


প্রকাশিত: ০৯:১৬ এএম, ০৮ জুন ২০১৭

বনানীর আলোচিত ‘দ্য রেইন ট্রি’ হোটেলে দুই বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রীকে ধর্ষণের অভিযোগে দায়ের করা মামলায় আদালতে দেয়া স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রত্যাহারের আবেদন করা হয়েছে।

বৃহস্পতিবার মামলার প্রধান আসামি সাফাত আহমেদ, নাঈম আশরাফ ও সাফাতের গাড়িচালক বিল্লাল হোসেনের পক্ষে তাদের আইনজীবীরা এ আবেদন করেন।

শুনানি শেষে ঢাকা মহানগর হাকিম দোলোয়ার হোসেন আবেদনটি নথিভুক্ত করেন।

শুনানিতে তাদের আইনজীবীরা বলেন, রিমান্ডের নামে সুই, গরম পানি, বৈদ্যুতিক শক দিয়ে অমানবিকভাবে আমাদের মক্কেলদের নির্যাতন করা হয়েছে। তাদের বিভিন্নভাবে ভয়ভীতি দেখিয়ে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি আদায় করা হয়েছে। এ কারণে দেয়া জবানবন্দি প্রত্যাহারের আবেদন জানাচ্ছি।

এদিকে, বৃহস্পতিবার আলোচিত এ ধর্ষণ মামলায় সাফাত আহমেদ’সহ পাঁচজনকে অভিযুক্ত করে আদালতে অভিযোগপত্র (চার্জশিট) দাখিল করা হয়। ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পুলিশের নারী সহায়তা ও তদন্ত বিভাগের পরিদর্শক ইসমত আরা এমি। তিনি জাগো নিউজকে বিষয়টি নিশ্চিত করেন।

১৮ মে মামলার প্রধান আসামি শাফাত আহমেদ ও সাদমান সাকিফ আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতে তারা এ জবানবন্দি দেন। পরে তাদের কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন আদালত।

ঢাকার মহানগর হাকিম আহসান হাবিব আসামি শাফাত আহমেদের জবানবন্দি রেকর্ড করেন। আর সাদমান সাকিফের জবানবন্দি রেকর্ড করেন মহানগর হাকিম ছাব্বির ইয়াসির আহসান চৌধুরী।

২৫ মে বনানীতে দুই ছাত্রী ধর্ষণ মামলার অন্যতম আসামি আবদুল হালিম ওরফে নাঈম আশরাফ আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। ঢাকার মহানগর হাকিম সত্যব্রত শিকদার হালিম তার জবানবন্দি রেকর্ড করেন। এরপর তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।

ঢাকা মহানগর পুলিশের অপরাধ ও তথ্য বিভাগের জ্যেষ্ঠ সহকারী কমিশনার মিরাস উদ্দিন ওই সময় জানান, জবানবন্দিতে হালিম ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছেন।

মামলার প্রধান আসামি শাফাত আহমেদের গাড়িচালক বিল্লাল হোসেন ২১ মে আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। ঢাকার মহানগর হাকিম মাহমুদুল হাসান তার জবানবন্দি রেকর্ড করে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।

মামলার প্রধান আসামি শাফাত আহমেদ ও সাদমান সাকিফকে ১১ মে সিলেট থেকে গ্রেফতার করা হয়। ১৫ মে ঢাকা থেকে গ্রেফতার হন মামলার ৪ ও ৫ নম্বর আসামি শাফাতের গাড়িচালক বিল্লাল ও দেহরক্ষী রহমত আলী। ১৭ মে গ্রেফতার হন আবদুল হালিম ওরফে নাঈম আশরাফ।

গত ২৮ মার্চ রাজধানীর ‘দ্য রেইন ট্রি’ হোটেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই ছাত্রী ধর্ষণের শিকার হয়েছেন বলে ৬ মে বনানী থানায় মামলা হয়। আদালতে দেওয়া জবানবন্দিতে দুই ছাত্রী জানান, ২৮ মার্চ বনানীর রেইন ট্রি হোটেলে জন্মদিনের অনুষ্ঠানে দাওয়াত দিয়ে তাদের নেয়া হয়। সেখানে ধর্ষণের শিকার হন তারা।

এর আগে, রাজধানীর বনানীর ‘দ্য রেইন ট্রি’ হোটেলে ধর্ষণের শিকার দুই ছাত্রী আদালতে জবানবন্দি দেন। জবানবন্দিতে দুই ছাত্রী জানান, গত ২৮ মার্চ বনানীর ‘দ্য রেইন ট্রি’ হোটেলে জন্মদিনের অনুষ্ঠানে দাওয়াত দিয়ে তাদের নেয়া হয়। শাফাতের গাড়িচালক বিল্লাল ও দেহরক্ষী তাদের বনানীর ২৭ নম্বর রোডের দ্য রেইন ট্রি হোটেলে নিয়ে যান। হোটেলে যাওয়ার আগে দুজনই জানতেন না সেখানে পার্টি হবে। এ সময় তাদের সঙ্গে শাহরিয়ার নামের এক বন্ধু ছিলেন। তাদের বলা হয়েছিল, এটা একটা বড় অনুষ্ঠান, অনেক লোকজন থাকবে। হোটেলে যাওয়ার পর শাফাত ও নাঈমের সঙ্গে তারা আরও দুই তরুণীকে দেখেন। পরিবেশ ভালো না লাগায় শাহরিয়ারসহ দুই তরুণী চলে আসতে চেয়েছিলেন।

তখন আসামিরা শাহরিয়ারের কাছ থেকে গাড়ির চাবি নিয়ে নেন এবং তাকে মারধর করেন। এরপর দুই তরুণীকে অস্ত্রের মুখে একটি কক্ষে নিয়ে যান। ধর্ষণ করার সময় শাফাত গাড়িচালককে ভিডিও চিত্র ধারণ করতে বলেন। আর নাঈম তাদের মারধর করেন। তারা এ ঘটনা জানিয়ে দেবেন বলে জানানোর পর শাফাত তার দেহরক্ষীকে ওই দুই তরুণীর বাসায় তথ্য সংগ্রহের জন্য পাঠান। লোকলজ্জার ভয় এবং মানসিকভাবে তারা অসুস্থ হয়ে পড়েন। তাদের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছেড়ে দেওয়ার হুমকি দেন আসামিরা। তাদের কথামতো না চললে বা এ ঘটনা কাউকে জানালে মেরে ফেলার হুমকি দেয়া হয়।

জেএ/এমএআর/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।