ঐশীর সাজা কমানোর বিষয়ে হাইকোর্টের ব্যাখ্যা


প্রকাশিত: ১১:৫৯ এএম, ০৫ জুন ২০১৭

মা-বাবাকে হত্যার দায়ে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত ঐশী রহমানের সাজা কমিয়ে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয়ার ব্যাখায় হাইকোর্ট বলেছেন, বাবা পুলিশ ও মা ডেসটিনিতে ব্যস্ত ছিলেন। তাই সন্তানকে পরযাপ্ত সময় দিতে পারেননি। এছাড়া আরও কিছু কারণে ঐশীর সাজা মৃত্যুদণ্ড থেকে কমিয়ে যাবজ্জ্জীবন করা হয়েছে।

সোমবার হাইকোর্টের বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেন সেলিম ও বিচারপতি মো. জাহাঙ্গীর হোসেনের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ এ রায় ঘোষণা করেন।

সাজা কমানোর বিষয়ে হাইকোর্টের রায়ে বলা হয়, মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি জোড়া খুনের ঘটনা ঘটিয়েছে সুস্পষ্ট উদ্দেশ্য ছাড়া ও মানসিকভাবে বিচ্যুতির কারণেই। মামলার আসামি (ঐশী রহমান) অ্যাজমাসহ নানা রোগে আক্রান্ত।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালের প্রতিবেদন অনুযায়ী, আসামি ঐশীর দাদি ও মামা অনেক আগে থেকেই মানসিকভাবে বিপর্যস্ত ছিলেন। তার পরিবারে মানসিক বিপর্যস্তের ইতিহাস রয়েছে।

হত্যাকাণ্ডের ঘটনার সময় তার বয়স ছিল ১৯ বছর। সে এ ঘটনার সময় সাবালকত্ব পাওয়ার মুহূর্তে ছিল। তার বিরুদ্ধে অতীতে ফৌজদারি অপরাধের নজির নেই। সে ঘটনার দুইদিন পরই স্বেচ্ছায় থানায় আত্মসমর্পণ করে। উদ্ভূত পারিপার্শিক অবস্থা বিবেচনায় নিয়ে সাজা কমানো হয়েছে।

`তার (ঐশী) বাবা পুলিশে ও মা ডেসটিনিতে চাকরিরত ছিলেন। জীবন-জীবিকা নিয়ে ব্যস্ত ছিলেন তারা। ঐশীকে পর্যাপ্ত সময় দিতে পারেননি। তারা যখন উপলব্দি করছিলেন ঠিক সেসময় তার জীবন আসক্তিতে ও উচ্ছন্নে (ধ্বংস) চলে গেছে।`

আমেরিকা, অস্ট্রেলিয়া, কানাডাসহ বিভিন্ন দেশে মৃত্যুদণ্ডকে নিরুৎসাহীত করা হয়েছে। কিন্তু আমাদের দেশে মৃত্যুদণ্ড কমানোর কোনো গাইডলাইন নেই। এমনকি তা বিলুপ্ত করার পরিবেশ আসেনি। শিক্ষার হার বেড়েছে। জনসংখ্যাও বেড়েছে। ফলে অপরাধের প্রবণতাও বাড়ছে। এ অবস্থায় মৃত্যুদণ্ড রহিত করা যুক্তি সংগত নয়।

মৃত্যুদণ্ড-ই একমাত্র দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নয়। এটা কার্যকর করলেই যে সমাজ থেকে অপরাধ দূর হয়ে যাবে তা নয়। কম সাজাও অনেক সময় সমাজ থেকে অপরাধ কমাতে সুস্পষ্ট ও গুরুত্বপূর্ণভাবে ভূমিকা রাখতে পারে বা সাহায্য করে।

মৃত্যুদণ্ড রহিত করতে সমাজের প্রতিটি স্তরে সুশাসন ও মানুষের মধ্যে অপরাধ প্রবণতা রোধে সচেতনা বৃদ্ধি করতে হবে। শুধু রাষ্ট্রের মধ্যে নয় সমাজের প্রতিটি স্তরে সুশাসন নিশ্চিত করতে হবে।

নিম্ন আদালত সামাজিক অবক্ষয় বিবেচনায় নিয়ে কিছুটা আবেগ প্রবণ হয়ে এ রায় দিয়েছে। যেখানে বলা হয়েছে, একটা মেয়ে তার পিতা-মাতাকে নিজের হাতে নিষ্ঠুরভাবে হত্যা করার সাহস দেখিয়েছে। কিন্তু সাজা নির্ধারণ ও বিচারের ক্ষেত্রে এ ধরনের আবেগ প্রদর্শনের সুযোগ নেই। আদালত আইনগত তথ্যাদি ও প্রমাণাদি বিবেচনায় নেবে। যেখানে একজন নারী হিসেবে ১৯ বছর বয়সে এ ধরনের অপরাধ করেছে।

রায়ে আরও বলা হয়, সন্তানদের জন্য বাবা-মা ও অভিবাবকই হলেন প্রাথমিক শিক্ষক। এটা হিসেব করেই তাদের জন্য ভালো পরিবেশে ও সময় দেয়া প্রয়োজন।

এর আগে গত ১০ এপ্রিল বিচারকের খাসকামরায় এ মামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত ঐশী রহমানের বক্তব্য শোনেন দুই বিচারপতি। কারাগার থেকে ঐশীকে হাইকোর্টে হাজির করা হয়। আদালতে ঐশীর পক্ষে আইনজীবী ছিলেন অ্যাডভোকটে আফজাল এইচ খান ও সুজিত চাটার্জি।

রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল জহিরুল হক জহির ও সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল আতিকুল ইসলাম সেলিম।

২০১৩ সালের ১৬ আগস্ট রাজধানীর চামেলীবাগে নিজেদের বাসা থেকে পুলিশের বিশেষ শাখার (এসবি) কর্মকর্তা মাহফুজুর রহমান ও তার স্ত্রীর মরদেহ উদ্ধার করা হয়। পরদিন ১৭ আগস্ট নিহত মাহফুজুর রহমানের ভাই মশিউর রহমান বাদী হয়ে পল্টন থানায় মামলা করেন।

ওই দিনই নিহত দম্পতির মেয়ে ঐশী রহমান পল্টন থানায় আত্মসমর্পণ করে তার বাবা-মাকে নিজেই খুন করার কথা স্বীকার করেন। পরে দীর্ঘ শুনানি ও যুক্তিতর্ক শেষে এ মামলায় ২০১৫ সালের ১২ নভেম্বর ঐশীকে মৃত্যুদণ্ড দেন ঢাকার একটি আদালত।

হত্যাকাণ্ডে সহযোগিতার দায়ে ঐশীর এক বন্ধু মিজানুর রহমানকে দুই বছরের কারাদণ্ড দেয়া হয়। অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় ঐশীর আরেক বন্ধু আসাদুজ্জামান জনিকে খালাস দেন আদালত।

এ রায়ের কপি ওই বছরের ১৯ নভেম্বর হাইকোর্টে পৌঁছে। এরপর প্রধান বিচারপতির নির্দেশে সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসন দ্রুত মামলার পেপারবুক প্রস্তুত করে। শুনানির জন্য গতবছর ৩০ নভেম্বর কার্যতালিকায় আসে।

চলতি বছরের ১২ মার্চ থেকে শুরু হয়ে ৭ মে পর্যন্ত মোট ১৩ কার্যদিবস এ মামলায় শুনানি হয়। ওইদিন শুনানি শেষে তা রায়ের জন্য অপেক্ষমান (সিএভি) রাখা হয়েছিল।

এফএইচ/এমএমএ/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।