একরাম হত্যার আসামি আবিদুলের জামিন


প্রকাশিত: ০৩:২৫ পিএম, ০৪ জুন ২০১৭
ফাইল ছবি

ফেনীর ফুলগাজী উপজেলার চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগের সভাপতি একরাম হত্যা মামলার আসামি আবিদুল ইসলাম আবিদের অন্তবর্তী জামিন মঞ্জুর করেছেন হাইকোর্ট।

রোববার সংশ্লিষ্ট কোর্টের বেঞ্চ অফিসার ও অপর এক আসামির আইনজীবী জাগো নিউজকে বিষয়টি নিশ্চিত করেন। তবে জামিনের বিষয়ে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম জাগো নিউজকে বলেন, জামিনের বিষয়টি আমার জানা নেই। খোঁজ-খবর নিয়ে বিষয়টি জানব।

এদিকে সংশ্লিষ্ট কোর্টের বেঞ্চ অফিসার বলেন, ‘গত ২৯ মে (সোমবার) একরাম হত্যা মামলার জামিন শুনানি শেষে আবিদের জামিন মঞ্জুর করেন আদালত। রোববার জামিনের বিষয়ে দেয়া (অর্ডার) আদেশের কপি নামানো হয়।’

জামিন সংক্রান্ত আবেদন শুনানি করে হাইকোর্টের বিচারপতি এ কে এম আসাদুজ্জামান ও বিচারপতি রাজিক-আল-জলিলের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ এই আদেশ দেন।

এর আগে মামলার প্রধান আসামি মাহতাব উদ্দিন চৌধুরী ওরফে মিনার চৌধুরীকে জামিন দিয়েছেন হাইকোর্ট।

একই সঙ্গে মিনারকে কেন স্থায়ী জামিন দেয়া হবে না-এ মর্মে হাইকোর্টের জারি করা রুলের শুনানি শেষে হাইকোর্টের একটি বেঞ্চ জামিন মঞ্জুর করে এই আদেশ দেন।

২০১৪ সালের ২০ মে ফেনীর একাডেমি এলাকার বিলাসী সিনেমা হলের সামনে প্রকাশ্যে ফুলগাজী উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগ সভাপতি একরামুল হককে গুলি করে এবং পুড়িয়ে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা।

এ সময় তার সঙ্গে থাকা সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান, স্থানীয় পত্রিকার সম্পাদক ও গাড়িচালকও দগ্ধ হন।

এ দিন রাত ১টার দিকে নিহত একরামুল হকের বড় ভাই তার নির্বাচনী প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপি নেতা মাহতাব উদ্দিন মিনারকে প্রধান আসামি করে অজ্ঞাতপরিচয়ে ৩৫ জনের বিরুদ্ধে ফেনী সদর থানায় মামলা করেন।

এদিকে ফেনী জেলা ও দায়রা জজ দেওয়ান মো. সফিউল্লাহ আসামিদের উপস্থিতিতে এ মামলার অভিযোগ গঠনের আদেশ দেন। সরকার পক্ষে মামলা পরিচালনা করেন জেলা ও দায়রা জজ আদালতের পিপি হাফেজ আহম্মদ।

পুলিশ জানায়, একরাম হত্যার ঘটনায় গত বছর ২৮ আগস্ট মোট ৫৬ জন আসামির বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দেয়া হয়। মামলার ৪৪ জন আসামিকে গ্রেফতার করা হয়েছে।

তাদের মধ্যে ১৬ জন হত্যাকাণ্ডের ঘটনার সঙ্গে কোনো না কোনোভাবে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছেন। মামলার বাকি ১২ জন আসামি এখনও পলাতক রয়েছেন। আর আবিদ এ হত্যাকাণ্ডের অন্যতম পরিকল্পনাকারী বলে জানা গেছে।

৫৬ আসামির মধ্যে একমাত্র বিএনপি নেতা মাহতাব উদ্দিন চৌধুরী ওরফে মিনার চৌধুরী বাদে বাকিরা সবাই আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মী।

একরাম হত্যা প্রসঙ্গে র‌্যাবের কাছে আবিদের স্বীকারোক্তি
২০১৪ সালের ২৪ মে একরাম হত্যাকাণ্ডে ‘জড়িত’ সাতজনকে গ্রেফতারের পর তাদের দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে র‌্যাবের মুখপাত্র এ টি এম হাবিবুর রহমান সাংবাদিকদের বলেন, আধিপত্য বিস্তার ও দলীয় কোন্দলের জের ধরেই এ হত্যাকাণ্ড ঘটেছে। একরামুল হক হত্যাকাণ্ডের পরিকল্পনায় স্থানীয় দুই আওয়ামী লীগ নেতার সংশ্লিষ্টতা পাওয়া গেছে।

আবিদ র‌্যাব কার্যালয়ে সাংবাদিকদের জানান, সেদিন সকালেই তারা ঘটনাস্থলের আশপাশে জড়ো হয়েছিলেন। সকাল ৮টার দিকে শিফাত, শানান, সানি, রাহাত, মোহন, অনিক ও সৈকত তার কাছে আসেন। রুটি সোহেল নামে এলাকার এক বড় ভাই তিনটা পিস্তল নিয়ে আসেন। তাকে আর শানানকে দুটি দিয়ে নিজে একটি রাখেন। রুটি সোহেল তাকে বলেন, ‘কেউ সামনে এলে গুলি চালাবি’।

আবিদের দাবি, জিহাদ আগের দিন তাকে বলেছিলেন, ‘একরামকে না মেরে ফেললে সে আমাকে মেরে ফেলবে’। ঘটনার দিন রুটি সোহেল তাকে বলেন, ‘জাহিদ ভাই বলেছেন, একরাম চেয়ারম্যানের গাড়িতে থাকা লোকজনের সঙ্গে আমরা ঝগড়া করব। গাড়ির কাচ ভেঙে দেব। ওরা আক্রমণ করলে আমরাও করব’।

হামলার বর্ণনা দিয়ে আবিদ বলেন, ‘বেলা ১১টার দিকে একাডেমির সামনে একরাম ভাইয়ের গাড়ি আসে। আমি, মানিক, রুটি সোহেলসহ কয়েকজন একটা ইজিবাইক নিয়ে সে গাড়ির গতিরোধ করি। সেখানে থাকা অন্তত ৪০/৫০ জন গাড়িতে ইট ছুড়তে থাকে, রামদা দিয়ে গাড়িতে কোপাতে থাকে। আমি ও শানান ওপরের দিকে গুলি ছুড়ি। রুটি সোহেল গাড়ির ভেতরে গুলি চালায়।’

পাপন, নয়ন ও তাদের কয়েক বন্ধু পাশের একটা দোকান থেকে কেরোসিন এনে গাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেয় বলে আবিদের দাবি।

এফএইচ/এমএমএ/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।