‘ষোড়শ সংশোধনী সুপ্রিম কোর্টের মর্যাদা খাটো করেছে’


প্রকাশিত: ০২:০৯ পিএম, ২৯ মে ২০১৭

বিচারপতি অপসারণ সংক্রান্ত সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী অবৈধ ঘোষণা করে হাইকোর্টের দেয়া রায়ের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষের করা আপিলের শুনানিতে অ্যামিকাস কিউরি (আদালতের বন্ধু) হিসেবে নিজের মতামত দিয়েছেন আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন আইনজ্ঞ ও দেশের সংবিধান প্রণেতা ড. কামাল হোসেন।

আদালতে কামাল হোসেন বলেন, ‘বিচার বিভাগের স্বাধীনতার প্রশ্নে সংবিধানের মৌলিক কাঠামোতে পরিবর্তন আনার কোনো সুযোগ নেই।’

সোমবার সকাল ৯টা ৪০ মিনিটে নিজের মত দেয়া শুরু করেন কামাল হোসেন। শেষ করেন ১০টা ২০ মিনিটের দিকে।

নিজের হাতে তৈরি ৭২’র সংবিধানে বিচারপতিদের অপসারণের ক্ষমতা সংসদের হাতে থাকলেও এখন কেন তিনি এর বিরোধিতা করছেন তার ব্যাখ্যাও দেন প্রবীণ এ আইনজীবী।

আদালতে বক্তব্য দিয়ে বাইরে গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলেন সংবিধান বিশেষজ্ঞ ড. কামাল হোসেন।

তিনি বলেন, ‘বিচারপতিদের অপসারণের ক্ষমতা সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলের কাছ থেকে সংসদের হাতে নিয়ে যে সংশোধনী আনা হয়েছে, তা সংবিধানের পরিপন্থী বলে মত দিয়েছি।’

‘ষোড়শ সংশোধনী সুপ্রিম কোর্টের মর্যাদা খাটো করেছে’ উল্লেখ করে ড. কামাল হোসেন বলেন, ‘কার কী ক্ষমতা তা সংবিধানে নির্ধারিত রয়েছে। নিয়ম হলো সংবিধানের মৌলিক কাঠামোতে কেউ হস্তক্ষেপ করতে পারবে না। ষোড়শ সংশোধনী হাইকোর্ট বিভাগ অলরেডি অবৈধ ঘোষণা করে দিয়েছেন। আমি তার সঙ্গে একমত পোষণ করেছি।’

তিনি বলেন, ‘এটা খুব সহজ বিষয়, একদিকে হলো সংবিধান, আর একটা হলো সংশোধনী। তার সঙ্গে যদি পরিপন্থী হয়, কোনটা প্রাধান্য পাবে? অবশ্যই সংবিধান প্রাধান্য পাবে। হাইকোর্টের রায়ে এটাই বলা হয়েছে।’

‘ষোড়শ সংশোধনী এ কারণেই সংবিধানের মৌলিক কাঠামোতে (ব্যাসিক স্ট্রাকচারে) আঘাত করেছে। এটা বিচার বিভাগের স্বাধীনতাকে খর্ব করেছে’- মন্তব্য করেন তিনি।

ষোড়শ সংশোধনী সংবিধানের পরিপন্থী হয়েছে কিনা- জানতে চাইলে প্রবীণ এ আইনজীবী বলেন, ‘অবশ্যই পরিপন্থী হয়েছে। আদালতে আমি এ সাবমিশন রেখেছিলাম, সেইগুলো হাইকোর্ট মেনে নিয়েছেন। আজ আমি সেইগুলো বললাম।’

বিচারক অপসারণ বিধান থাকা উচিত কিনা- এর জবাবে তিনি বলেন, ‘যেটা ছিল সেটাই সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল। ষোড়শ সংশোধনী না থাকলে আমাদের যেটা ছিল সেটাই থাকবে। সেটার ওপর সর্বোচ্চ আদালতের রায়ও আছে।’

তিনি বলেন, ‘বিষয়টা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। মৌলিক মূলনীতিটা খুব ক্লিয়ার। সংবিধান হলো দেশের সর্বোচ্চ আইন। সেখানে কার কী ক্ষমতা তা নির্ধারণ করা আছে। নির্বাহী বিভাগ কী করতে পারে, আইন বিভাগ কী করতে পারে আর বিচার বিভাগ কী করতে পারে। সংবিধানের দায়িত্ব হলো সবাই নিজে নিজের সীমারেখার মধ্যে তারা থাকছে কিনা, যদি সীমা লঙ্ঘন করে থাকে, তখন বিচার বিভাগ বলে যে, না এখানে সীমা লঙ্ঘিত হয়েছে। এখানে সংবিধানের সবচেয়ে মৌলিক দিক, যদি সংবিধানের সীমা নির্ধারণ না করা হয়। যদি রাষ্ট্রের অঙ্গ মনে করে যে, তার ক্ষমতার কোনো সীমা নাই, তখন আর সংবিধানিক শাসন থাকে না।’

‘সংবিধানের মৌলিক কাঠামো সেখানে কেউ হাত দিতে পারে না। এটাই হলো সংবিধানিক শাসনের বৈশিষ্ট্য’- বলেন তিনি।

ড. কামাল হোসেনের পর সোমবার ষোড়শ সংশোধনী নিয়ে শুনানির নবম দিনে অ্যামিকাস কিউরি হিসেবে বক্তব্য পেশ করেন এম আই ফারুকী, ওয়াদুদ ভূঁইয়া ও এএফ হাসান আরিফ। এছাড়া আজমালুল হোসেন কিউসির আংশিক বক্তব্যের পর মঙ্গলবার পর্যন্ত শুনানি মুলতবি করা হয়।

এফএইচ/এসআর/এমএআর/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।