ইংরেজি মাধ্যমে সেশন ফি আদায় অবৈধ
দেশের সব ইংরেজি মাধ্যমের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে এক শ্রেণি থেকে অন্য শ্রেণিতে ওঠার সময় পুনরায় ভর্তি ও সেশন ফি’র নামে শিক্ষার্থীর কাছ থেকে অর্থ আদায় বেআইনি।
শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে সেশন ফি ও ভ্যাট আদায় এবং ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলের নীতিমালা চেয়ে করা পৃথক দুটি রিটের চূড়ান্ত শুনানি শেষে হাইকোর্টের দেয়া রায়ে এ কথা বলা হয়েছে। একই সঙ্গে ২০ দফা নির্দেশনাও দেন আদালত। বৃহস্পতিবার হাইকোর্টের বিচারপতি শেখ হাসান আরিফ ও বিচারপতি মো. বদরুজ্জামানের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ এ রায় ঘোষণা করেন।
রায়ে জাতীয় দিবস যথাযথ মর্যাদায় পালন ও দেশের সংস্কৃতি অনুযায়ী রবীন্দ্র-নজরুল, বঙ্গবন্ধুসহ স্বাধীনতায় আত্মদানকারীদের জীবনী নিয়ে অনুষ্ঠান করার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।
আদালতের নির্দেশনার আলোকে ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলের নীতিমালা করে এক মাসের মধ্যে একটি সার্কুলার জারি করে তা প্রতিটি স্কুলে পাঠাতে বলা হয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিবকে। রায়ে একই সঙ্গে দেশের সব ক’টি ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলে ম্যানেজিং কমিটি গঠনের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এছাড়া অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত বাংলা বিষয়ে পড়া, লেখা ও বলায় বিশেষ গুরুত্ব দেয়ার কথাও বলা হয়েছে।
আদালতে রিটের পক্ষে শুনানি করেন ব্যারিস্টার বদরোদ্দোজা বাদল, অনীক আর হক ও জে আর খান রবিন। অন্যদিকে রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল রাশেদ জাহাঙ্গীর।
ক্লাস ওয়ান থেকে টুতে ভর্তিতে নির্ধারিত বয়স কত হবে তা ম্যানেজিং কমিটিকে নির্ধারণ করে দিতে হবে। সেই সঙ্গে প্রতি ক্লাসে একজন ছাত্রের মাথাপিছু কত টাকা খরচ হয় তার তথ্য দিতে হবে স্কুলের ওয়েবসাইটে। আবার তা অভিভাবককে জানাতে হবে।
মহান স্বাধীনতা ও বিজয় দিবসের মতো দেশের গুরুত্বপূর্ণ দিবসগুলো গুরুত্ব সহকারে পালন করতে হবে। তিন মাসের মধ্যে শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে এগুলো বাস্তবায়ন করতে হবে এবং ছয় মাস পর শিক্ষা সচিবকে এ বিষয়ে আদালতকে প্রতিবেদন আকারে জানানোর বিষয়ে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।
পরে আইনজীবী ব্যারিস্টার বদরোদ্দোজা বাদল ও অনীক আর হক জাগো নিউজকে জানান, ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলের সেশন চার্জ বাতিল ঘোষণা করে ২০ দফা নির্দেশনা দিয়েছেন হাইকোর্ট। এক মাসের মধ্যে একটি সার্কুলার জারি করে তা প্রতিটি স্কুলে দেয়ার জন্য বলা হয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিবকে। একই সঙ্গে দেশের সব ক’টি ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলে ম্যানেজিং কমিটি গঠনের নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
ইংরেজি মাধ্যম স্কুল (প্লে-গ্রুপ থেকে ‘এ’ লেভেল পর্যন্ত) পরিচালনায় ম্যানেজিং কমিটি গঠন, জাতীয় দিবস পালন, দেশীয় সংস্কৃতিসহ বাংলায় গুরুত্ব দেয়াসহ বেশ কিছু নির্দেশনা দেয়া হয় রায়ে।
অনীক আর হক জানান, ইংরেজি মাধ্যমের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পরিচালনা কার্যক্রমে স্বচ্ছতা বজায় রাখতে বেশ কয়েক দফা নির্দেশনা দিয়েছেন উচ্চ আদালত। আদালত বলেছেন, ১৯৬২ সালের বেসরকারি বিদ্যালয় নিবন্ধন অধ্যাদেশ ও ২০০৭ সালের বেসরকারি (ইংরেজি মাধ্যম) বিদ্যালয় নিবন্ধন নীতিমালা অনুসারে দেশের প্রতিটি ইংরেজি মাধ্যম শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে (প্লে গ্রুপ থেকে এ লেভেল পর্যন্ত) ব্যবস্থাপনা কমিটি গঠন করতে হবে। কমিটিতে অভিভাবকদের প্রতিনিধিও থাকতে হবে।
তিনি জানান, রায়ে আরও বলা হয়, ব্যবস্থাপনা কমিটি শিক্ষার্থীদের ভর্তি ফি-বেতন নির্ধারণ করবে, শিক্ষক ও কর্মচারী নিয়োগ দেবে। এক্ষেত্রে মালিক পক্ষের হস্তক্ষেপ থাকবে না। মাসিক বেতন ও পরীক্ষার ফি’র বাইরে আর কোনো ফি নেয়া যাবে না বলেও রায়ে বলেছেন আদালত।
আইনজীবী আরও জানান, এক শ্রেণি থেকে অন্য শ্রেণিতে ওঠার সময় কোনো প্রকার পুনঃভর্তি ও সেশন চার্জ নেয়া যাবে না। কোনো ধরনের ফি বাড়াতে হলে অভিভাবকদের মতামত নিয়ে ওয়েবসাইটে প্রকাশ করতে হবে।
ইংরেজি মাধ্যম স্কুলে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে পুনঃভর্তি ফি বা সেশন চার্জ আদায় থেকে সংশ্লিষ্টদের বিরত রাখতে কার্যকর ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশ দিয়ে ২০১৪ সালর ২৩ এপ্রিল রুলসহ অন্তর্বর্তীকালীন আদেশ দেন বিচারপতি মির্জা হোসেইন হায়দার ও বিচারপতি মুহাম্মদ খুরশীদ আলম সরকারের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ।
২০১৩ সালের ১৬ সেপ্টেম্বর একটি দৈনিকে ‘ফ্রি স্টাইলে চলছে ইংলিশ মিডিয়াম স্কুল’ শিরোনামে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। ওই প্রতিবেদনের ভিত্তিতে এ বিষয়ে নীতিমালা তৈরির প্রয়োজনীয় নির্দেশনা চেয়ে হাইকোর্টে রিট করেন দুই শিক্ষার্থীর অভিভাবক জাবেদ ফারুক।
রুলে এসব স্কুলে মাসিক বেতন, পুনঃভর্তি ফি বা সেশন চার্জ আদায়ের বিষয়ে নীতিমালা তৈরি এবং তদারক সেল গঠনের নির্দেশ কেন দেয়া হবে না তা জানতে চাওয়া হয়। শিক্ষা সচিব, আইন সচিব, স্বরাষ্ট্র সচিব, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদফতর এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা অধিদফতরের মহাপরিচালকসহ বিবাদীদের চার সপ্তাহের মধ্যে রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছিল।
এফএইচ/ওআর/জেআইএম