বিচার বিভাগকে কী মনে করছেন? অ্যাটর্নিকে প্রধান বিচারপতি


প্রকাশিত: ০৫:৫০ পিএম, ২৩ মে ২০১৭

সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতির অপসারণ ক্ষমতা সংসদের হাতে থাকা অবৈধ ঘোষণা করে দেয়া হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে যুক্তি উপস্থাপনের শেষ সময়ে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বলেন, আইন না থাকলেও রাষ্ট্রপতি বিচারপতি অপসারণ করতে পারবেন। এ সময় প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার (এসকে) সিনহা ক্ষোভ প্রকাশ করেন।

যুক্তিতে অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, হাইকোর্টের রায়ে একজন বিচারপতি সংসদ সদস্যদের ফৌজদারি অপরাধের রেকর্ড থাকার কথা বলেছেন। এই বক্তব্য সত্য না হলে তাকে অপসারণের জন্য রাষ্ট্রপতির কাছে পাঠানো উচিত। এ সময় প্রধান বিচারপতি বলেন, আইন না থাকলেও রাষ্ট্রপতি কি একজন বিচারপতিকে অপসারণ করতে পারেন?

জবাবে অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, এখন সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল ব্যবস্থা নেই। আইনও নেই। আইন না থাকলেও নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষ হিসেবে রাষ্ট্রপতি একজন বিচারপতিকে অপসারণ করতে পারেন। অ্যাটর্নি জেনারেলের এ বক্তব্যে ক্ষোভ প্রকাশ করে প্রধান বিচারপতি বলেন, এটা কী বললেন? আইন না থাকলেও রাষ্ট্রপতি একজন বিচারপতিকে সরিয়ে দেবেন? কত হাজার বছর পেছনে নিয়ে যাচ্ছেন? বিচার বিভাগকে কী মনে করছেন?

জবাবে অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, এটা আমার অভিমত। আপনারা বিষয়টি রায়ে বলে দিতে পারেন।

পরে প্রধান বিচারপতিসহ আপিল বিভাগের বিচারপতিরা ক্ষোভ প্রকাশ করে এজলাস থেকে উঠে চলে যান। যদিও ততক্ষণে ঘড়ির কাঁটায় বেলা ১ টা ১৫ মিনিট। এ বিষয়ে বুধবার আবারও শুনানির দিন রয়েছে।

এর আগে দলীয় সিদ্ধান্তের বাইরে ভোট দিলে সংসদ সদস্য পদ থাকবে না এমন বিধান সম্বলিত সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদের প্রসঙ্গ টেনে প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা বলেন, আপনারা নিজেরাই দলীয় সংসদ সদস্যদের ওপর আস্থা রাখতে পারছেন না। তাহলে বিচারকদের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষেত্রে হর্স ট্রেডিং হবে না তার নিশ্চয়তা কোথায়? সংসদ সদস্যরা স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারছেন কি না। আপনারা নিজ দলের সদস্যদের ওপর আস্থা রাখতে পারছেন না কেন?

প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার নেতৃত্বে আপিল বিভাগের সাত বিচারপতির পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে এ শুনানি চলছে। রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম। এ সময় অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল মুরাদ রেজা ও রিট আবেদনকারীপক্ষে অ্যাডভোকেট মনজিল মোরসেদ উপস্থিত ছিলেন।  বুধবার শুনানির জন্য দিন ধার্য রয়েছে।

প্রধান বিচারপতি বলেন, একটি গণতান্ত্রিক সভ্য দেশে একটি কল্যাণকর রাষ্ট্র হিসেবে আমাদের অনেক কিছু চিন্তা করে রায় দিতে হয়। মানবাধিকার, সংবিধান, আইনের শাসন এসব কিছু বিবেচনায় নিতে হয়। আপনারা সামরিক আইনের কথা বলছেন? এখনও ১৯৮২ সালের আইন রয়ে গেছে। আমরা বিচারকরা চিন্তাভাবনা করি, রাষ্ট্রের কাজের ব্যাঘাত না ঘটে।

আপিল বিভাগের জ্যেষ্ঠ বিচারপতি মো. আবদুল ওয়াহহাব মিঞা বলেন, সবসময় সংবিধান বাঁচিয়ে রেখেই রায় দেয়া হয়। প্রত্যেকটি বাক্য, সেমিকোলন আলোচনা করেই রায় দেই। এ সময় প্রধান বিচারপতি বলেন, আমরা সংবিধান মাথায় রেখেই রায় দেব। আপত্তিকর কিছু থাকলে সেটা বিবেচনা করা হবে।

প্রধান বিচারপতি বলেন, মন্ত্রী সাহেবরা অনেক কথা বলেন, যা আমরা হজম করছি, করতে পারি। আমি প্রধান বিচারপতি হিসেবে যা বলি তা বিচার বিভাগের জন্যই বলি। আইনমন্ত্রী বলে থাকেন যে বিচার বিভাগ স্বাধীন। বিচারকদের বেতন বেড়েছে। বেতন বাড়লেই কি বিচার বিভাগ স্বাধীন হয়ে যায়? মন্ত্রীদের উদ্দেশ্য করে এ সময় এসকে সিনহা বলেন, আপনাদের বেড়েছে একবছর আগে। আমাদের একবছর পর।

আইনজীবীদের রিট করার এখতিয়ার নিয়ে প্রশ্ন তুলে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বলেন, তাদের রিট করার এখতিয়ার নেই। এ সময় বিচারপতি মো. আবদুল ওয়াহহাব মিঞা বলেন, এ যুক্তি ঠিক নয়। যারা এসেছেন তারা কি অপরিচিত আইনজীবী। তারা এ বারেরই (আইনজীবী সমিতি) সদস্য। বিচার বিভাগে মর্যাদা রক্ষার স্বার্থে তারা এটা করতে পারেন।

প্রধান বিচারপতি বলেন, তারা এই সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী। তারা সচেতন নাগরিক। তাদের রিট করার এখতিয়ার আছে। তিনি বলেন, আপনি বলছেন, তাদের এখতিয়ার নেই। তাহলে কি আমি নিজে রিট করব? এ সময় তিনি ভারতের বিচারক নিয়োগ সংক্রান্ত রায়ের উদাহরণ দিয়ে বলেন, ওই মামলায় আবেদনকারী ছিলেন সেখানকার বার কাউন্সিলের চেয়ারম্যান।

এফএইচ/জেডএ/ওআর/বিএ

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।