নাঈমের বিষয়ে মুখ খোলেনি ‘ধর্ষক’ সাফাত-সাকিফ
বনানীর দুই তরুণী ধর্ষণের ঘটনায় অভিযুক্ত সাফাত আহমেদ ও সাদমান সাকিফ রিমান্ডের প্রথম দিন (শনিবার) মামলার অন্যতম আসামি নাঈম আশরাফ ওরফে এইচ এম হালিমের অবস্থান সম্পর্কে কিছুই জানায়নি।
ভুক্তভোগী দুই তরুণীর অভিযোগ, ঘটনার দিন নাঈম প্রথম তাদের একজনকে অস্ত্রের মুখে ধর্ষণ করে। তার দেখাদেখি সাফাতও ধর্ষণ করে। নাঈমই সবচেয়ে বেশি নোংরামি করেছে বলে স্বীকারোক্তিতে উল্লেখ করেন দুই তরুণী।
বনানীর আলোচিত দুই তরুণী ধর্ষণের ঘটনায় গ্রেফতার প্রধান আসামি সাফাত আহমেদ ও সাদমান সাকিফকে যথাক্রমে ৬ ও ৫ দিনের রিমান্ড দিয়েছেন আদালত। শনিবার সকালে তাদের প্রথম দিনের মতো রিমান্ডে নেয় পুলিশ।
প্রথম দিনের জিজ্ঞাসাবাদে ধর্ষণ মামলার অন্যতম আসামি নাঈম আশরাফ ওরফে এইচ এম হালিমের অবস্থান সম্পর্কে দুজনের কেউই মুখ খোলেনি। জাগো নিউজকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন তদন্ত সংশ্লিষ্ট পুলিশের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা।
তিনি জানান, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তারা নাঈমের অবস্থানের বিষয়ে কোনো তথ্য দেয়নি। রিমান্ডে দুজনই দাবি করছে, মামলার পর থেকে নাঈমের সঙ্গে তাদের কোনো যোগাযোগ হয়নি।
শনিবার সকাল থেকে সাফাত ও সাদমানকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করে তদন্ত সংস্থা ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) ওমেন সাপোর্ট অ্যান্ড ইনভেস্টিগেশন ডিভিশনের কর্মকর্তারা। এ সময় উপস্থিত ছিলেন প্রধান তদন্ত কর্মকর্তা ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টারের পরিদর্শক (ইন্সপেক্টর) ইসমত আরা এমি।
মামলার তদন্তে সহায়তার জন্য পৃথক একটি তদন্ত সহায়ক কমিটি গঠন করেন ডিএমপি কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া। কমিটির অন্যতম সদস্য মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের উপ-কমিশনার (ডিসি) শেখ নাজমুল আলম জাগো নিউজকে বলেন, ‘ওরা নাঈম সম্পর্কে কোনো তথ্য দিতে পারেনি। নাঈমের অবস্থানও বলেনি। নাঈমসহ বাকি আসামিদের গ্রেফতারে অভিযান চলছে।’
নাঈম দেশ ছেড়ে পালিয়েছে কিনা জানতে চাইলে ডিবির এ কর্মকর্তা বলেন, ‘সে দেশে নাকি বিদেশে পালিয়েছে বিষয়টি এখনও নিশ্চিত হওয়া যায়নি।’
ধর্ষণের ঘটনাটি প্রাথমিকভাবে স্বীকার করলেও তা পূর্বপরিকল্পিত ছিল কিনা জানতে চাইলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক তদন্ত সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা বলেন, ‘এখন পর্যন্ত তাদের কাছ থেকে যেসব তথ্য পাওয়া গেছে সেখানে পূর্বপরিকল্পনার কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি। তবে সব আসামিকে গ্রেফতার করতে পারলে এবং একসঙ্গে জিজ্ঞাসাবাদ করতে পারলে বিষয়টি পরিষ্কার হবে।’
রিমান্ডের বিষয়ে দায়িত্বপ্রাপ্ত তদন্ত কর্মকর্তা ইন্সপেক্টর এমি জাগো নিউজকে বলেন, ‘প্রথম দিনের মতো আজ (শনিবার) তাদের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। যেসব তথ্য পাওয়া যাবে সেগুলো রিমান্ড শেষে আদালতের কাছে সরবরাহ করা হবে। তদন্ত চলছে, এ মুহূর্তে এর চেয়ে বেশিকিছু বলা যাচ্ছে না।’
গত ২৮ মার্চ রাজধানীর বনানীর ‘দ্য রেইন ট্রি’ হোটেলে সাফাত আহমেদ নামে এক বন্ধুর জন্মদিনে যোগ দিতে গিয়ে অপরাপর বন্ধুদের সহায়তায় ধর্ষণের শিকার হন ওই দুই তরুণী। তাদের অভিযোগ, সাফাত আহমেদ ও তার বন্ধুদের যোগসাজশে অস্ত্রের মুখে তাদের ধর্ষণ করা হয়।
ওই ঘটনার ৪০ দিন পর ৬ মে সন্ধ্যায় বনানী থানায় পাঁচজনকে আসামি করে মামলা করেন দুই তরুণী। এজাহারভুক্ত পাঁচ আসামি হলেন সাফাত আহমেদ, সাদমান সাকিফ, নাঈম আশরাফ, সাফাতের গাড়িচালক বিল্লাল ও তার দেহরক্ষী আবুল কালাম আজাদ।
আসামিদের মধ্যে সাফাত ও সাদমান সিলেট থেকে গ্রেফতার হলেও পুলিশের ধরাছোঁয়ার বাইরে আছেন এজাহারের দুই নম্বর আসামি নাঈমসহ অপর দুজন।
কে এই নাঈম আশরাফ
সম্প্রতি দুই তরুণী ধর্ষণের পর নাঈমকে চিহ্নিত করে সিরাজগঞ্জবাসী। তিনি সিরাজগঞ্জের কাজিপুর উপজেলার গান্ধাইল গ্রামের আমজাদ হোসেন ফেরিওয়ালার ছেলে এইচ এম হালিম ওরফে নাঈম আশরাফ। ২০০৪ সালে এসএসসি পাস করে বগুড়া পলিটেকনিকে ভর্তি হন তিনি। সেখানেও নিজের বাবার নামসহ পুরো পরিচয় গোপন করে প্রতারণা করেন এক মেয়ের সঙ্গে। বিষয়টি জানাজানি হলে সেখানে গণপিটুনির শিকার হন নাঈম। এরপর ঢাকায় চলে আসেন এবং চাকরি নেন একটি মিডিয়া হাউজে।
ধর্ষণের রাতে নাঈমের ভূমিকা
ইভেন্ট ম্যানেজমেন্টের কাজের সূত্র ধরে সাদমান সাকিফের সঙ্গে নাঈমের পরিচয় হয়। দুই তরুণী জানান, ঘটনার দিন নাঈম প্রথম তাদের একজনকে অস্ত্রের মুখে ধর্ষণ করে। তার দেখাদেখি সাফাতও ধর্ষণ করে। নাঈমই সবচেয়ে বেশি নোংরামি করেছে বলে স্বীকারোক্তিতে উল্লেখ করেছেন দুই তরুণী।
এআর/এমএআর/আরআইপি