রাজন হত্যা : নূরের সাজা কমেছে, বাকিদের বহাল


প্রকাশিত: ০৭:০৩ এএম, ১১ এপ্রিল ২০১৭

সিলেটের সবজি বিক্রেতা শিশু শেখ সামিউল আলম রাজন হত্যা মামলায় চারজনকে মৃত্যুদণ্ড এবং ৫ আসামির বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ডের সাজাই বহাল রেখেছেন হাইকোর্ট।

তবে প্রধান আসামি কামরুলের সহযোগী ও পুরো হত্যাকাণ্ডের ভিডিও ধারণকারী যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত নূর মিয়ার সাজা কমেছে হাইকোর্টে। হাইকোর্ট তার যাবজ্জীবনের সাজা কমিয়ে ৬ মাসের কারাদণ্ড দিয়েছেন।

মঙ্গলবার হাইকোর্টের বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেন ও বিচারপতি মো. জাহাঙ্গীর হোসেনের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ হত্যা মামলার ডেথ রেফারেন্স (মৃত্যুদণ্ড অনুমোদন) ও আসামিদের করা আপিলের শুনানি শেষে এ রায় ঘোষণা করেন।

বহুল আলোচিত এ মামলার ডেথ রেফারেন্স (মৃত্যুদণ্ড অনুমোদন) ও আসামিদের করা আপিলের ওপর ১৯তম দিনের শুনানি শেষে গত ১২ মার্চ রায় ঘোষণার জন্য ১১ এপ্রিল দিন ধার্য করেন আদালত।

তার আগে গত ৩০ জানুয়ারি পেপারবুক উপস্থাপনের মধ্য দিয়ে শুনানি শুরু করেন রাষ্ট্রপক্ষ। আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে শুনানিতে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল জহিরুল হক জহির, সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল আতিকুল হক সেলিম ও বিলকিস ফাতেমা।

গত বছরের ১০ নভেম্বর রাজন মামলার ডেথ রেফারেন্স হাইকোর্টে এসে পৌঁছায়। পরে প্রধান বিচারপতির নির্দেশে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে পেপারবুক প্রস্তুত করা হয়। ৩০ জানুয়ারি শুনানি শুরু হয়। মোট ১৯ দিন শুনানি শেষে রায় ঘোষণার দিন ধার্য করেন আদালত।

সিলেটের কুমারগাঁওয়ে চুরির অভিযোগে ২০১৫ সালের ৮ জুলাই সিলেট-সুনামগঞ্জ সড়কের কুমারগাঁও বাসস্ট্যান্ড সংলগ্ন শেখপাড়া এলাকার বাদেয়ালি গ্রামের সবজি বিক্রেতা শিশু রাজনকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। পরে তার মরদেহ গুম করার সময় ধরা পড়েন একজন। এরপর পুলিশ বাদী হয়ে জালালাবাদ থানায় মামলা করে।

এদিকে, ফেসবুকে প্রচারের উদ্দেশে নির্যাতনের ভিডিওচিত্র ধারণ করে নির্যাতনকারীরা। পরে তা ভাইরাল হয়ে পড়েল দেশজুড়ে তোলপাড় ও ক্ষোভের সৃষ্টি হয়।

পরে তদন্ত শেষে ওই বছরের ১৬ আগস্ট ১৩ জনকে আসামি করে আদালতে অভিযোগপত্র দেয় পুলিশ। ১৭ কার্যদিবস বিচারিক কার্যক্রম শেষে ওই বছরের ৮ নভেম্বর বিচারিক আদালত রায় দেন।

রায়ে আসামিদের মধ্যে কামরুল ইসলাম, ময়না চৌকিদার, তাজউদ্দিন আহমদ বাদল ও জাকির হোসেন পাভেল আহমদের ফাঁসির আদেশ হয়। কামরুলের সহযোগী নূর মিয়াকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড এবং কামরুলের তিন ভাই মুহিত আলম, আলী হায়দার ও শামীম আহমদকে (পলাতক) সাত বছর করে কারাদণ্ড দেয়া হয়। এক বছর করে কারাদণ্ড হয় দুলাল আহমদ ও আয়াজ আলীর।

গুরুত্বপূর্ণ অনেকে সম্পূর্ণ রায় না পড়ে মন্তব্য করেন
মঙ্গলবার রায় পড়া শুরুর আগে আদালত বলেন, দেশের অনেক গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি সম্পূর্ণ রায় না পড়ে মন্তব্য করেন। সেটি করা ঠিক নয় বলেও মন্তব্য এসেছে।

আদালত বলেন, অভিজ্ঞতা থেকে বলতে পারি ধনী-দরিদ্র হিসেবে বিচার হয় না। প্রত্যেক মামলা বিচারকের কাছে সমান। আদালতে এসে আইনজীবীরা মক্কেলের পক্ষে একটা শব্দ উচ্চারণ করেন না। কিন্তু মিডিয়ার সামনে কথা বলেন। এতে আদালত মর্মাহত হয়।

আদালত আরো বলেন, গরিব মানুষের ভালো উকিল রাখার সামর্থ্য থাকে না। আমরা সেটা বিবেচনা করেই বিচার করি। রায় দেয়ার পরে উভয়পক্ষ অখুশি হতে পারে। এটা সবাইকে স্বাভাবিকভাবে মেনে নিতে হবে। জ্ঞানী ও বুদ্ধিজীবীদের মন্তব্য আইনানুগ হওয়া উচিত বলেও মন্তব্য করেন আদালত।

ন্যায়বিচার পেয়েছি
আদালতের দেয়া রায়ে সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন রাজনের বাবা।

রায় ঘোষণার পর সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণে সাংবাদিকদের রাজনের বাবা শেখ আজিজুর রহমান আলম বলেন, ‘আমি ন্যায়বিচার পেয়েছি। হাইকোর্টের কাছে কৃতজ্ঞ।’

সাংবাদিকদের ধন্যবাদ জানিয়ে তিনি বলেন, ‘তারা সারাবিশ্বে আমার ছেলের মৃত্যুর ঘটনা তুলে ধরেছেন। সারাদেশের মানুষ আমার সাথে একাত্মতা ঘোষণা করেছেন। তাদের ধন্যবাদ জানাই।’

নিম্ন আদালত, উচ্চ আদালত ও প্রধানমন্ত্রীসহ সবাইকে ধন্যবাদ জানিয়ে রাজনের বাবা বলেন, ‘আর কোনো বাবা-মা যেন এ পরিস্থিতির শিকার না হয়।’

এফএইচ/এনএফ/আরআইপি

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।