কান্না চেপে ঐশীর মুচকি হাসি
পুলিশ কর্মকর্তা মাহফুজুর রহমান ও তার স্ত্রী স্বপ্না রহমান হত্যা মামলায় মৃত্যদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি ঐশীকে হাইকোর্টে হাজির করার পর আদালতে বসা অবস্থায় কান্না চেপে ক্ষণিকের জন্য মুচকি হাসির চেষ্টা করেছিল। এর পরই দুই আইনজীবীর উপস্থিতিতে বিচারকের খাস কামরায় নিয়ে ১৫ মিনিট ঐশীর বক্তব্য শোনেন হাইকোর্টের দুই বিচারক।
আদালত বলেছেন, ঐশীকে কারাগার থেকে নিয়ে এসেছি। আইনে সে ক্ষমতা আছে। মামলার এই পর্যায়ে এসেও অনুসন্ধান করার এখতিয়ার আছে। দুই আইনজীবীর উপস্থিতিতে তার কথা শুনেছি। তবে সে কি বলেছে তা এখানে বলছি না।
আদালত বলেন, ঐশীর মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে দেয়া প্রতিবেদনের গুরুত্ব দিচ্ছি।
সোমবার সকালে হাইকোর্টের বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেন সেলিম ও বিচারপতি মো. জাহাঙ্গীর হোসেনের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ খাস কামরায় তার বক্তব্য শোনেন দুই বিচারপতি। এরপর এজলাসে বসে আদালত এমন মন্তব্য করেন।
সোমবার সকাল পৌনে ১০টায় ঐশীকে আদালতে হাজির করা হয়। তাকে আদালত কক্ষে একটি চেয়ারে বসতে দেয়া হয়। সকাল ১০টা ৩৫ মিনিটে দুই বিচারপতি এজলাসে বসেন। এসময় আদালত কক্ষে উপস্থিত আইনজীবী, সংবাদকর্মীসহ উপস্থিত ব্যক্তিরা উঠে দাঁড়ালে ঐশীও উঠে দাঁড়ায়। কিন্তু ঐশী সোজা হয়ে দাঁড়াতে পারছিল না। বিচারকরা চেয়ারে বসার পর সবাই নিজ নিজ আসনে বসেন। এসময় ঐশী ধপাস করে তা চেয়ারে বসে পড়ে। সকাল ১০টা ৪০ মিনিট পর্যন্ত এ চেয়ারেই বসে ছিল ঐশী। এসময় তার ডান হাতে ইনহেলার ছিল।
সালোয়ার-কামিজ পরা ঐশীর ওড়না গলায় পেঁচিয়ে সামনে ঝুলানো অবস্থায় ছিল। তার পাশেই দুই নারী কারারক্ষী দাঁড়িয়েছিলেন। এরপর তাকে আদালতের নির্দেশে বিচারপতির খাস কামরায় নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল আতিকুল ইসলাম সেলিম ও ঐশীর আইনজীবী অ্যাডভোকেট সুজিত চ্যাটার্জির উপস্থিতিতে ঐশীর কথা শোনেন দুই বিচারপতি।
ঐশী যতক্ষণ আদালত কক্ষে বসা ছিলেন প্রায় পুরো সময়টা গালে ডান হাত রেখে মাথা নিচু করে বসেছিল। এসময় দুই গাল বেয়ে চোখের পানি পড়ছিল। সে বারবার চোখ মুচছিল। নির্বিকার ঐশীকে একনজর দেখার জন্য সুপ্রিম কোর্টের বিভিন্ন শাখার কর্মচারী ও আইনজীবীরা ভিড় করেন সেখানে। একপর্যায়ে আদালত সংশ্লিষ্ট ছাড়া অন্যদের বের করার নির্দেশ দেন।
খাস কামরায় নেয়ার সময় ঐশী তার এক আত্মীয়ের সঙ্গে কুশল বিনিময় করে। আদালত কক্ষে বসে থাকা ষাটোর্ধ্ব এক বৃদ্ধের কাছে এসে ঐশী বলে, ‘কেমন আছেন’। জবাবে ওই ব্যক্তি বলেন, ভালো। এসময় ঐশী কান্না চেপে রেখে ক্ষণিকের জন্য মুচকি হাসির চেষ্টা করে।
খাস কামরায় যাওয়ার আগে আদালত বলেন, একটি মানবাধিকার সংস্থা বা একজন কর্মী ঐশীর মানসিক স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য রিট আবেদন করে। এরপর আদালতের নির্দেশে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে তার মানসিক অবস্থা পরীক্ষা করে প্রতিবেদন দেয়া হয়েছে। এ প্রতিবেদন বিচারিক আদালতে উপস্থাপন করেছেন। আসামিপক্ষ এখন সেই প্রতিবেদনকে গুরুত্ব দিচ্ছেন।
আদালত বক্তব্য শোনার পর ১০টা ৫৭ মিনিটে বেরিয়ে আসেন ঐশী। এরপর তাকে সরাসরি কারাগারে নিয়ে যাওয়া হয়। ঐশী চলে যাওয়ার পর দুই বিচারক বেলা ১১টা ৩৮ মিনিটে এজলাসে বসেন। এরপর রাষ্ট্রপক্ষ ও আসামিপক্ষের যুক্তি শোনেন। ঐশীর পক্ষে শুনানি করেন অ্যাডভোকটে আফজাল এইচ খান ও সুজিত চাটার্জি। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল আতিকুল ইসলাম সেলিম।
এফএইচ/জেএইচ/এমএস