ঐশীর আপিল শুনানি শুরু


প্রকাশিত: ১০:৩৩ এএম, ১২ মার্চ ২০১৭
ফাইল ছবি

পুলিশ দম্পতি মাহফুজুর রহমান হত্যা মামলার ডেথ রেফারেন্স ও আপিল শুনানি শুরু হয়েছে। রোববার হাইকোর্টের বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেন ও বিচারপতি মো. জাহাঙ্গীর হোসেনের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চে এ শুনানি শুরু করা হয়।

এ হত্যা মামলায় পুলিশ দম্পতির একমাত্র মেয়ে ঐশী রহমানকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন ঢাকার একটি আদালত। পরে মামলাটির ডেথ রেফারেন্স আকারে হাইকোর্টে আসে। একই সঙ্গে ওই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করেন ঐশীর আইনজীবী। ফলে মামলার ডেথ রেফারেন্স ও আপিলের শুনানির জন্য ২৫টি যুক্তিতে সাড়ে সাতশ পৃষ্ঠার নথিপত্র-পেপারবুক প্রস্তুত করা হয়।

নিজের বাবা-মাকে হত্যার প্রধান আসামি পুলিশ কর্মকর্তার একমাত্র মেয়ে বিচারিক (নিম্ন) আদালত থেকে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত সাজার খালাস চেয়ে করা মামলার ডেথ রেফারেন্স ও আপিল আবেদন হাইকোর্টে শুনানির অপেক্ষায় ছিল।

আইনজীবী মাহবুব হাসান রানা জাগো নিউজকে বলেন, নিম্ন আদালত যে রায় দিয়েছেন, তাতে অনেক ধরনের ত্রুটি রয়েছে। আমরা আপিল করেছি। আপিলে মূলত ঐশীর বয়স বিষয়টাকেই গুরুত্ব সহকার আদালতের কাছে তুলে ধরা হবে। আমরা বিচারিক আদালতে ঐশীর জন্মনিবন্ধন সনদ ডকুমেন্ট হিসেবে তুলে ধরেছি। সেখানে তার জন্মতারিখ ১৭ আগস্ট ১৯৯৬। কিন্তু রাষ্ট্রপক্ষ তার জন্মতারিখ উল্লেখ করেছে ১৯৯৪ সালের ১৭ আগস্ট।

তিনি বলেন, ঐশীর ডিএনএ টেস্ট সঠিক ছিল না। কীভাবে ডিএনএ টেস্ট হয়েছে তার ডকুমেন্টস নেই। যারা ডিএনএ টেস্ট করেছেন, তাদের কাউকে মামলায় সাক্ষী করা হয়নি। আমরা বলেছি, ঐশী এখনও শিশু। রাষ্ট্রপক্ষ বলেছে প্রাপ্তবয়স্ক। আদালত বলেছেন সে কিশোরী। কিন্তু কিশোরী বলতে আইনে বয়সের কোনো সংজ্ঞা নেই।

এছাড়া ২১ নম্বর সাক্ষী ডা. নাহিদ মাহজাবীন মোর্শেদের সাক্ষ্য আমলে নেননি। এ মামলায় বিভিন্ন সময়ে ৪৯ সাক্ষীর মধ্যে ৩৭ জন আদালতে সাক্ষ্য দিয়েছেন। এসব বিষয় যুক্তি হিসেবে আমরা আপিল আবেদনে তুলে ধরেছি। এসব বিষয় আমলে নিয়ে আদালত বিবেচনা করলে আপিলে ঐশী ন্যায়বিচার ও খালাস পাবে বলে আমরা আশা করছি।

পুলিশের বিশেষ শাখার (এসবি) কর্মকর্তা মাহফুজুর রহমান ও তার স্ত্রী স্বপ্না রহমানকে হত্যার দায়ে দুটি অভিযোগের দায়ে এই দম্পতির একমাত্র মেয়ে ঐশী রহমানকে দুবার মৃত্যুদণ্ড দেন। ২০১৫ সালের ১২ নভেম্বর মৃত্যুদণ্ড দেন ঢাকার তিন নম্বর দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের বিচারক সাঈদ আহমেদ।

রায়ে প্রত্যেক মৃত্যুদণ্ডের সঙ্গে ২০ হাজার টাকা করে মোট ৪০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। অনাদায়ে দুই বছর কারাদণ্ড দেয়া হয়। তবে একটি মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হওয়ার পর অন্যটি সরাসরি বাতিল হয়ে যাবে। এছাড়া ঐশীকে আশ্রয় দেয়ায় তার বন্ধু মিজানুর রহমানকে দুই বছরের কারাদণ্ড ও অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় মামলার অন্য আসামি আসাদুজ্জামান জনিকে খালাস দেন আদালত।

রায়ের বিরুদ্ধে ২০১৫ সালের ৬ ডিসেম্বর হাইকোর্টে ঐশীর আইনজীবী আপিল আবেদন করেন। এর আগে মৃত্যুদণ্ড অনুমোদনের জন্য ডেথ রেফারেন্স হিসেবেও মামলাটি হাইকোর্টে পাঠানো হয়। ওইদিন ৬ ডিসেম্বর ২৫টি যুক্তি দেখিয়ে ঐশী রহমান হাইকোর্টে আপিল করেন।

রাজধানীর মালিবাগের চামেলীবাগে একটি বাসায় সপরিবারে থাকতেন পুলিশের স্পেশাল ব্রাঞ্চের (পলিটিক্যাল শাখা) ইন্সপেক্টর মাহফুজুর রহমান। ২০১৩ সালের ১৬ আগস্ট ওই বাসা থেকে স্ত্রী স্বপ্না রহমানসহ তার ক্ষত-বিক্ষত মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। এর পরদিন ঐশী গৃহকর্মী সুমীকে নিয়ে রমনা থানায় আত্মসমর্পণ করেন। হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় নিহত মাহফুজুর রহমানের ভাই মশিউর রহমান ওই দিনই পল্টন থানায় হত্যা মামলা করেন। ২৪ আগস্ট ঐশী আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। তবে পরে তিনি ওই জবানবন্দি প্রত্যাহারের আবেদন করেন।

এফএইচ/আরএস/পিআর

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।