হেফাজতের সুপারিশে পাঠ্যবইয়ে পরিবর্তন কেন অবৈধ নয়?


প্রকাশিত: ০৬:৪৪ এএম, ০৬ মার্চ ২০১৭

চট্টগ্রামভিত্তিক সংগঠন হেফাজতে ইসলামের সুপারিশের পরিপ্রেক্ষিতে পাঠ্যবইয়ে পরিবর্তন কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছেন হাইকোর্ট। আগামী চার সপ্তাহের মধ্যে শিক্ষা সচিব ও জাতীয় পাঠ্যপুস্তক কারিকুলাম বোর্ডের (এনসিটিবি) চেয়ারম্যানকে উক্ত রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে।

এ সংক্রান্ত একটি রিটের প্রাথমিক শুনানি করে বিচারপতি নাইমা হায়দার ও বিচারপতি আবু তাহের মো. সাইফুর রহমানের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ সোমবার এ আদেশ দেন। আদালতে রিট আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী ব্যারিস্টার রোকন উদ্দিন মাহমুদ, সঙ্গে ছিলেন সৈয়দ মামুন মাহবুব।

রিটকারীর পক্ষের আইনজীবী সৈয়দ মামুন মাহবুব সাংবাদিকদের জানান, প্রগতিশীল ও মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের লেখকদের লেখা পাঠ্যপুস্তক থেকে বাদ দেয়া সংক্রান্ত পত্রিকায় প্রকাশ করা খবর সংযুক্ত করে দায়ের করা রিটের পরিপ্রেক্ষিতে হাইকোর্ট রুল জারি করেছেন।
 
তিনি আরো বলেন, আদালতে আজ রিটের শুনানিতে হেফাজতে ইসলামের  দাবির পরিপ্রেক্ষিতে স্বনামধন্য লেখকদের (ওয়েল-নোন) লেখা বাদ দিয়ে পাঠ্যপুস্তকে পরিবর্তন আনা কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছেন হাইকোর্ট। মমতাজ জাহান ও ড. এম আনোয়ার হোসেনের পক্ষে রিটটি দায়ের করা হয়েছে। তাদের দাবি, হেফাজতের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে পাঠ্যপুস্তকে পরিবর্তন আনা হয়েছে।
 
আইনজীবী বলেন, কওমি মাদরাসাভিত্তিক সংগঠন হেফাজতে ইসলামের দাবির প্রেক্ষিতে প্রথম শ্রেণি থেকে নবম শ্রেণি পর্যন্ত বাংলা সাহিত্যে কিছু প্রখ্যাত লেখকদের লেখা বাদ দেয়া হয়েছে। যার মধ্যে পঞ্চম শ্রেণির বাংলা বইয়ে গোলাম মোস্তফার ‘প্রার্থনা’, একই শ্রেণির বাংলা বইয়ে হুমায়ুন আজাদের ‘বই’ কবিতা, ষষ্ঠ শ্রেণির বাংলা চারুপাঠ থেকে এস ওয়াজেদ আলীর ‘রাঁচি ভ্রমণ’, সানাউল হকের কবিতা ‘সভা’, আনন্দ পাঠ থেকে বাদ পড়েছে সত্যেন সেনের গল্প ‘লাল গরুটা’, একই বই থেকে শরৎচন্দ্রের গল্প ‘লালু’ ও উপেন্দ্র কিশোর রায় চৌধুরীর ‘রামায়ন কাহিনী’ বাদ দেয়া হয়েছে।

একইসঙ্গে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে, দ্বিতীয় শ্রেণির পাঠ্য বইয়ে সবাই মিলে করি কাজ, তৃতীয় শ্রেণিতে খলিফা হযরত আবু বকর (রা.), চতুর্থ শ্রেণিতে খলিফা হযরত ওমর (রা.), পঞ্চম শ্রেণিতে বিদায় হজ্জ ও শহীদ তিতুমীর, ষষ্ঠ শ্রেণিতে সৈয়দ মুজতবা আলীর ‘নীল নদ ও পীরামিডের দেশ’, জসিম উদ্দিনের আসমানী কবিতা, মুহাম্মদ শহীদুল্লাহর সততার পুরস্কার, সপ্তম শ্রেণির বাংলা বইয়ে হাবিবুল্লাহ বাহারের মরুভাস্কর, কায়কোবাদের প্রার্থনা, কালিদাস রায়ের বাবরের মহত্ব এবং শাহ মুহাম্মদ সগীরের বন্দনা।

পাঠ্যপুস্তকে এই পরিবর্তন আনয়নের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে গত সপ্তাহে পাঠ্যপুস্তক কারিকুলাম বিশেষজ্ঞ মমতাজ জাহান এবং জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. আনোয়ার হোসেন রিটটি দায়ের করেন।

রিট আবেদনে বলা হয়, এসব বিষয় হেফাজতে ইসলামের সুপারিশক্রমে পাঠ্যপুস্তকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে এবং কিছু বিখ্যাত লেখকের লেখা বাদ দেয়া হয়েছে। অথচ নতুনভাবে অন্তর্ভুক্ত লেখার অধিকাংশই ধর্মশিক্ষা বইয়ে রয়েছে। আবেদনকারীদের একজন মমতাজ জাহান বলেন, ‘আমরা ধর্মনিরপেক্ষ দেশ চাই। এই দেশে মুক্তিযুদ্ধের চেতনাবিরোধী এমন সাম্প্রদায়িকতা আমরা চাই না। এ কারণেই আমরা রিট আবেদনটি দায়ের করেছি।’

উল্লেখ্য, সপ্তম ও অষ্টম শ্রেণির দুটি পাঠ্যবই প্রায় ১৫ লাখ কপি ছাপা হয়ে যাওয়ার পরও দুটি লেখা বাদ দিয়ে নতুন করে বই ছাপানো হয়। যে দুটি লেখা বাদ দেয়া হয়েছে সে লেখা দুটিসহ আরো কিছু লেখা বাদ দেয়ার দাবি ছিল হেফাজতের। তবে হেফাজতের ইসলামের দাবিতেই যে পাঠ্যবইয়ে এ পরিবর্তন আনা হয়েছে তা এখনো পর্যন্ত কেউ স্বীকার করেন নি।

এফএইচ/এনএফ/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।