সুপ্রিম কোর্টের ভাস্কর্য ভাঙার হুমকির প্রতিবাদ ঘাদানিকের


প্রকাশিত: ০৩:২৮ পিএম, ০৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৭

সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণের ভাস্কর্যে হামলা চালিয়ে ভাঙার হুমকির প্রতিবাদ ও নিন্দা জানিয়েছে ‘একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি’। সোমবার সংগঠনের উপদেষ্টা ও কেন্দ্রীয় নেতাদের স্বাক্ষরিত এক বিবৃতিতে এ নিন্দা ও প্রতিবাদ জানানো হয়।

বিবৃতিতে বলা হয়, ‘আমরা অত্যন্ত ক্ষোভের সঙ্গে লক্ষ্য করছি ’৭১-এর ঘাতক দালাল মৌলবাদী সাম্প্রদায়িক অপশক্তির প্রতিভূ হেফাজতে ইসলাম এবং তাদের সহযোগীরা সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণে স্থাপিত ন্যায়বিচারের ভাস্কর্যের বিরুদ্ধে একের পর এক হুমকি দিচ্ছে, সরকার কিংবা উচ্চ আদালত তার বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না।

‘২০১৩ সালে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বানচাল এবং সরকার উৎখাতের জন্য জামায়াত-বিএনপির সহযোগিতায় হেফাজতিরা মাদ্রাসার নিরীহ ছাত্রদের রাজধানীতে এনে যে তাণ্ডব সৃষ্টি করেছিল তা ভুলে যাওয়া উচিৎ হবে না। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সতর্কতার কারণে এরপর বড় কোনও ধরনের সহিংসতার ঘটনা না ঘটালেও হেফাজত বারবার বলছে তাদের ১৩ দফা দাবি থেকে তারা সরে আসেনি। প্রশাসনের অন্দরমহলে অবস্থানকারী হেফাজত-জামায়াতের অনুসারীরা একের পর এক বাংলাদেশের সংবিধান এবং মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস ও চেতনার উপর আঘাত করছে, যার সর্বশেষ অভিব্যক্তি হচ্ছে হেফাজতের দাবিপূরণ করতে গিয়ে স্কুলের পাঠ্যসূচিতে সাম্প্রদায়িকীকরণ।

‘সুপ্রিম কোর্টে স্থাপিত ভাস্কর্যকে হেফাজতিরা মূর্তি বা প্রতিমা বলছে, যা রাজনৈতিক উদ্দেশ্যমূলক নির্জলা মিথ্যা ছাড়া আর কিছু নয়। এই ভাস্কর্য জাতি-ধর্ম নির্বিশেষে বহু দেশের উচ্চতর আদালতে ন্যায়বিচারের প্রতীক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত রয়েছে। এর সঙ্গে ধর্মের কোনও সম্পর্ক নেই। যে ইরানে ইসলামী হুকুমত ও শরিয়া আদালত বিদ্যমান রয়েছে সেখানেও উচ্চতর আদালতের দেয়ালে আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত ন্যায়বিচারের প্রতীক ‘জাস্টিসিয়া’ ভাস্কর্য খোদাই করা রয়েছে। সৌদি আরব, মিসর, তুরষ্ক, ইরাক, ইরান, আফগানিস্তান, পাকিস্তান ও ইন্দোনেশিয়াসহ বহু মুসলমানপ্রধান দেশে ভাস্কর্য রয়েছে নগরের সৌন্দর্যবর্ধনের জন্য। হেফাজতিরা সুপ্রিম কোর্টের ভাস্কর্য অপসারণের নামে আমাদের সর্বোচ্চ আদালতের বিরুদ্ধে ঘৃণা ও বিদ্বেষ সৃষ্টি করে সেখানে হামলার প্রস্তুতি নিচ্ছে। কারণ দেশের সর্বোচ্চ এই আদালত ’৭১-এর শীর্ষস্থানীয় যুদ্ধাপরাধীদের মৃত্যুদণ্ড দিয়েছে যার কয়েকটি ইতোমধ্যে কার্যকরও হয়েছে।

‘আইনশৃঙ্খলা বাহিনীসহ সর্বোচ্চ আদালতের প্রতি আহ্বান জানিয়ে হুমকি প্রদানকারীদের বিরুদ্ধে অবিলম্বে আইনগত পদক্ষেপ গ্রহণ ও যুদ্ধাপরাধীদের আপিল দ্রুত নিষ্পত্তির ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের আহ্বান জানানো হয় বিবৃতিতে।

বিবৃতিতে স্বাক্ষরদাতারা হলেন
বিচারপতি মোহাম্মদ গোলাম রাব্বানী, ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ, বিচারপতি সৈয়দ আমিরুল ইসলাম, বিচারপতি শামসুল হুদা, বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক, অধ্যাপক অজয় রায়, কর্ণেল (অব.) আবু ওসমান চৌধুরী, লেখক সাংবাদিক আবদুল গাফফার চৌধুরী, সাংবাদিক কামাল লোহানী, অধ্যাপক বোরহানউদ্দিন খান জাহাঙ্গীর, অধ্যাপক অনুপম সেন, কথাশিল্পী হাসান আজিজুল হক, ভাস্কর ফেরদৌসী প্রিয়ভাষিণী, শিল্পী হাশেম খান, শিল্পী রফিকুননবী, অধ্যাপিকা পান্না কায়সার, স্থপতি রবিউল হুসাইন, অধ্যাপিকা মাহফুজা খানম, এডভোকেট সুলতানা কামাল, ক্যাপ্টেন শিহাবউদ্দিন বীরউত্তম, ক্যাপ্টেন আকরাম আহমেদ বীরউত্তম, মেজর জেনারেল মোহাম্মদ আবদুর রশীদ (অবঃ), ডা. আমজাদ হোসেন, সমাজকর্মী নূরজাহান বোস, লেখক সাংবাদিক শাহরিয়ার কবির, অধ্যাপক মুনতাসীর মামুন, শহীদজায়া শ্যামলী নাসরিন চৌধুরী, শহীদজায়া সালমা হক, কলামিস্ট সৈয়দ মাহবুবুর রশিদ, শিক্ষাবিদ মমতাজ লতিফ, সাংবাদিক চলচ্চিত্র নির্মাতা শামীম আখতার, অধ্যাপক আবুল বারক আলভী, সমাজকর্মী কাজী মুকুল, সমাজকর্মী খোন্দকার আবদুল মালেক শহীদুল্লাহ, ড. ফরিদা মজিদ, সমাজকর্মী আরমা দত্ত, এডভোকেট জিয়াদ আল মালুম, এডভোকেট খন্দকার আবদুল মান্নান প্রমুখ।

জেইউ/ওআর/পিআর

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।