রাজন-রাকিবের পরেই ঐশীর আপিল শুনানি


প্রকাশিত: ০৬:২২ এএম, ০৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৭
ফাইল ছবি

হাইকোর্টে আসা ব্লগার রাজিব হত্যা মামলায় ডেথ রেফারেন্স নিয়ে করা আপিলের শুনানি শেষে রায় ঘোষণার জন্য সিএভি রাখা হয়েছে। খুব দ্রুত সময়ের মধ্যেই রায় ঘোষণা করা হবে। হাইকোর্টের বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেন ও মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর হোসেনের বেঞ্চে গুরুত্বপূর্ণ এই মামলার রায় ঘোষণার জন্য অপেক্ষমাণ রাখা হয়েছে।

পর্যায়ক্রমে সংশ্লিষ্ট বেঞ্চের তালিকায় আসা সিলেটের শিশু রাজন হত্যা মামলার ডেথ রেফারেন্স নিয়ে হাইকোর্টে করা আপিলের শুনানি শেষ পর্যায়ে রয়েছে। তবে রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তা অ্যাটর্নি জেনারেল আইনি বিষয়ে সর্বশেষ যুক্তি শুনানির পর রায়ের জন্য অপেক্ষমান রাখা হতে পারে।

এর পরপরই খুলনার শিশু রাকিব হত্যা মামলার ডেথ রেফারেন্স নিয়ে হাইকোর্টে করা আপিলের শুনানির জন্য প্রস্তুত রয়েছে। রাকিবের ডেথ রেফারেন্স ও আপিল আবেদন শুনানি শেষে অপর আলোচিত পুলিশ দম্পতি হত্যা মামলায় তাদের একমাত্র মেয়ে ঐশীর পক্ষে করা আপিল শুনানি শুরু হবে বলে জানা গেছে।

হাইকোর্ট বিভাগের সংশ্লিষ্ট সূত্রে এই তথ্য নিশ্চিত হওয়া গেছে। এদিকে সিলেটের শিশু রাজন ও খুলনার শিশু রাকিব হত্যা মামলার ডেথ রেফারেন্স নিয়ে করা আপিলের ওপর দেশি-বিদেশি আইন ও অপরাধের সামঞ্জস্য পর্যালোচনা করে বিচারিক কাজ চলছে বলে জানা গেছে।

সূত্রে জানা গেছে, সংশ্লিষ্ট বেঞ্চের বিচারপতিরা এবং রাষ্ট্র ও আসামি উভয়পক্ষের আইনজীবী দেশি-বিদেশি বিভন্ন তথ্য-উপাত্ত এবং মামলা-সংক্রান্ত রেফারেন্স, আইন ও বিধি পর্যালোচনা করে মামলায় শুনানি করছেন। শিশুদের হত্যা করার কারণ কী এবং পরিকল্পিত না-কি অনিচ্ছাকৃত হত্যার ঘটনা ঘটেছে তা বিচার শেষে বের হয়ে আসতে পারে।

অপরদিকে ব্লগার রাজিব হত্যার ডেথ রেফারেন্স ও আপিলের রায় খুব দ্রুত সময়ের মধ্যে দিনক্ষণ ঠিক করে ঘোষণা করা হতে পারে বলে জানা গেছে। জানা যায়, ব্লগার রাজিব হত্যার আপিলের রায় এ মাসেই ঘোষণা করা হতে পারে।

আদালতে সূত্রে জানা গেছে, রাজন-রাকিবের রায় ঘোষণার পরপরই পুলিশ কর্মকর্তা ও তার স্ত্রীকে হত্যার দায়ে একমাত্র মেয়ে ঐশীর আপিল শুনানি শুরু হবে খুব দ্রুত সময়ের মধ্যে। গত বছরের ৩১ অক্টোবর বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেন ও মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর হোসেনের বেঞ্চে কার্যতালিকায় ব্লগার রাজিব, শিশু রাজন, রাকিব ও ঐশীর মামলায় পর্যায়ক্রমে ৪, ৫, ৬ ও ৭ নম্বরে ছিল।

এ বিষয়ে আদালতের ডেপুর্টি অ্যাটর্নি জেনারেল জহিরুল হক জানান, মামলাগুলো অগ্রাধিকার ভিত্তিতে শুনানির জন্য কার্যতালিকায় ছিল। এখন ব্লগার রাজিবের মামলায় রায় ঘোষণার জন্য এবং রাজন এবং রাকিবের মামলায় ডেথ রেফারেন্স শুনানি শেষ করে রায়ের জন্য সিএভি রাখা হয়েছে। আশা করি, ফেব্রুয়ারি মাসের মধ্যেই রায় ঘোষণা করা হতে পারে। এ ছাড়া অপর সব ডেথ রেফারেন্স মামলাগুলো শুনানি পর্যায়ক্রমে শুরু হবে।

হাইকোর্ট সূত্রে জানা যায়, পুলিশ কর্মকর্তা মাহফুজুর রহমান ও তার স্ত্রী স্বপ্না রহমান, ব্লগার রাজিব হায়দার, সিলেটের শিশু শেখ সামিউল আলম রাজন এবং খুলনার শিশু রাকিব হাওলাদার হত্যা মামলার নিম্ন আদালতের বিচার শেষে নথি আসে হাইকোর্টে। যা ডেথ রেফারেন্স মামলা হিসেবে পরিচিত। এসব মামলার দণ্ডাদেশপ্রাপ্তদের পেপারবুক অগ্রাধিকার ভিত্তিতে প্রস্তুত করা হয়।

পুলিশ কর্মকর্তা ও তার স্ত্রী হত্যা মামলায় মেয়ে ঐশীর মৃত্যুদণ্ডাদেশ অনুমোদনবিষয়ক (ডেথ রেফারেন্স) ৭২০ পৃষ্ঠার, রাজন হত্যা মামলার পেপারবুকের মোট পৃষ্ঠা সংখ্যা ৭০৬ পৃষ্ঠার, রাকিবের ৪৩৫ পৃষ্ঠা এবং ব্লগার রাজিবের ৯২০ পৃষ্ঠার পেপারবুক ছিল।

২০১৫ সালের ১০ ও ১৯ নভেম্বর শিশু রাজন, শিশু রাকিব এবং পুলিশ কর্মকর্তা ও তার স্ত্রী হত্যা মামলায় আসামিদের মৃত্যুদণ্ডাদেশ অনুমোদন নথিপত্র হাইকোর্টে আসে। ২০১৬ সালের ১৭ জানুয়ারি ব্লগার রাজিব হত্যা মামলার বিচারিক আদালতের নথিপত্র হাইকোর্টে আসে। এরপর শুরু হয় মামলাগুলোর পেপারবুক তৈরির কাকজ। খুব সংক্ষিপ্ত সময়ে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে এসব মমালার পেপারবুক তৈরি করা হয়।

ব্লগার রাজিব হায়দার হত্যা মামলা
২০১৩ সালে ১৫ ফেব্রুয়ারি রাজধানীত নিজ বাসার সামনে খুন হন ব্লগার রাজিব হায়দার। পরের দিন তার বাবা হত্যা মামলা করেন। পরবর্তীতে রাজিব হত্যা মামলায় দুইজনের মৃত্যুদণ্ড এবং একজনের যাবজ্জীবন রায় দেন ঢাকার তিন নম্বর দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের বিচারক।

সিলেটের শিশু রাজন হত্যা মামলা
২০১৫ সালের ৮ জুলাই সিলেটের কুমারগাঁও এলাকায় চুরির ঘটনায় সামিউল আলম রাজনকে হত্যা হয়। বিচার-প্রক্রিয়া শেষে কামরুল ইসলামসহ চারজনের ফাঁসির আদেশ দেন সিলেট মহানগর দায়রা জজ আদালতের বিচারক। সিলেট শিশু বিচারিক আদালতের রায় হাইকোর্টে আসে ৭৬ পৃষ্ঠার। ওই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করেন আসামিরা।

খুলনার শিশু রাকিব হত্যা মামলা
২০১৫ সালের ৩ আগস্ট খুলনার টুটুপাড়া কবরখানা মোড়ের একটি ওয়ার্কশপে মোটরসাইকেলে হাওয়া দেয়ার কমপ্রেসার মেশিনের মাধ্যমে মলদ্বারে হাওয়া ঢুকিয়ে হত্যা করা হয় রাকিবকে। পরে খুলনার আদালত এ ঘটনায় দুজনকে মৃত্যুদণ্ডাদেশ দেন। রাকিব হত্যা মামলায় রায় মোট ৬৯ পৃষ্ঠা। এরপর আসামিরা ওই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করেছেন।

পুলিশ কর্মকর্তা ও তার স্ত্রী হত্যা মামলা
২০১৩ সালের ১৬ আগস্ট রাজধানীর চামেলীবাগে পুলিশ দম্পতি মাহফুজুর রহমান ও তার স্ত্রীর হত্যার ঘটনায় নিহতের ভাই এ ঘটনায় পল্টন থানায় হত্যা মামলা করেন। মামলায় বিচার শেষে ২০১৫ সালের ১৫ নভেম্বর ঐশী রহমানকে মৃত্যুদণ্ড ঘোষণা করে রায় দেন ঢাকার ৩ নম্বর দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের বিচারক সাঈদ আহমেদ। এ রায়ের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে আপিল দায়ের করেন ঐশী রহমানের আইনজীবী।

এফএইচ/বিএ/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।