‘বাচ্চাদের কাজ করা রাষ্ট্র ও সমাজের জন্য লজ্জাজনক’


প্রকাশিত: ০৭:১১ পিএম, ২৯ জানুয়ারি ২০১৭

হাইকোর্টে জামিন নিতে আসা হত্যা মামলায় ৮ এবং ৯ বছর বয়সী সন্দেহভাজন দুই আসামির বিষয়ে আদালত বলেছেন, এতটুকু বয়স, এদের কাজ করে খেতে হয়, কিন্তু আমাদের রাজনীতিবিদ ও সমাজপতিদের চোখ পড়ে না। রাষ্ট্রের তো দায়িত্ব ছিল এই শিশুদের শিক্ষার অধিকার নিশ্চিত করা। এত কম বয়সের বাচ্চারা কাজ করে এটা আমাদের রাষ্ট্র ও সমাজের জন্য লজ্জাজনক। আমাদের সমাজ এর কি জবাব দেবে? সরকার এত টাকা খরচ করে, এদিকে একটু গুরুত্ব দিলেই তো পারে।

রোববার আদালতের নির্দেশ অনুযায়ী ‘খুনি সন্দেহে’ গ্রেফতার রাজধানীর কামরাঙ্গীচরের ৮ বছরের শিশু জয় দাশ ও ৯ বছরের শিশু মো. ইউসুফকে আদালতে হাজির করা হয়। পরে শুনানিকালে এসব কথা বলেন আদালত।

আদালত আরও বলেন, যে বয়সে শিশুদের থাকার কথা স্কুলে সেই বয়সে তারা বন্দিশালায়। যখন তাদের থাকার কথা পড়ার টেবিলে তখন তারা কারাগারে। এটি যেন আমাদের দেশের রাজনীতিবীদ ও সমাজপতিদের অবহেলার প্রতিচ্ছবি।

আদালত দুই শিশুকে ডায়াসের কাছে ডেকে নেন। এ সময় শিশু দুটি বিচারপতির দিকে অগ্রসর হতে বেশ ভয় পাচ্ছিল। আদালত তাদেরকে অভয় দিয়ে বলেন, ভয়ের কিছু নাই। সামনে আসো। কি নাম তোমাদের?

আদালতের উত্তরে তারা নাম বললেও আদালতের পরিভাষা কি তা তাদের জানা নেই। লাল সাদা রঙ্গের টি-শার্ট পরিহিত শিশু দুটি তখনও আদালতের পরিবেশ দেখতে ছিল। ভয়ে ভয়ে দুই শিশু ডায়াসের সামনে এগিয়ে আসলে বিচারপতি কাজী রেজা-উল হক প্রশ্ন করেন তোমরা কি করো? উত্তরে শিশুদুটি বলে ‘আমরা গাড়িতে কাজ করি’। স্কুলে যাও না? ‌‘আমরা স্কুলে যাই না।’ এ সময় আদালত বলেন, ‘এতটুকু বয়স, ওদের তো এখন স্কুলে থাকার কথা। কিন্তু আজ এই শিশুদের কাজ করে খেতে হয়।’

আদালত বলেন, সরকার আইন করুক স্কুল টাইমে শিশুরা বাইরে ঘুরাফেরা করলে পুলিশ তাদের হেফাজতে নেবে। স্কুল টাইমে বাচ্চা শিশুদের ধরে নেয়ার পর তাদের অভিভাবককে শাস্তির মুখোমুখি হতে হবে। এছাড়া এই শিশুদেরকে যারা কাজে নেবে তাদেরও শাস্তির আওতায় আনতে হবে।

বিশ্বের অনেক উন্নত দেশে এই ধরণের আইন আছে বলেও উল্লেখ করেন আদালত। বিচারপতি কাজী রেজা-উল হক বলেন, ‘আজ বাসায় গিয়ে বাবাকে বলবে জজ সাহেব বলেছেন স্কুলে যেতে। বড় হয়ে তারপর কাজ করবে।’

এরপর আদালত এ দুই শিশুকে বিচার শেষ না হওয়া পর্যন্ত জামিন মঞ্জুর করেন। একইসঙ্গে আদালত এই দুই শিশুকে নিরাপত্তা দিতে পুলিশের লালবাগ জোনের ডিসি ও কামরাঙ্গীচর থানার ওসিকে নির্দেশ দেন। এছাড়া বয়স নির্ধারণ না করে দুই শিশুকে গ্রেফতার শিশু আইনের ৪৪ ধারা লঙ্ঘন বলে অভিমত ব্যক্ত করেন আদালত।

আদালতে দুই শিশুর উপস্থিতে তাদের পক্ষে শুনানি করেন ব্যারিস্টার আব্দুল হালিম। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল তাপস কুমার বিশ্বাস।

গত ২৪ নভেম্বর একটি জাতীয় দৈনিকে দলাশের পরিচয় মেলেনি, খুনি সন্দেহে ২ শিশু গ্রেফতার’ শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত প্রতিবেদন যুক্ত করে একটি রিট করা হয়। ওই পত্রিকার প্রতিবেদনে বলা হয়, প্রায় দুই মাস আগে পুলিশ অজ্ঞাত পরিচয় এক শিশুর অর্ধগলিত মরদেহ উদ্ধার করে। ১০ দিন পর শিশুটির পরিবার খুনের মামলা করে। খুনি সন্দেহে পুলিশ দুই শিশুকে গ্রেফতার করে।

পরে বিচারিক হাকিম স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি নিয়ে তাদের টঙ্গীর কিশোর উন্নয়ন কেন্দ্রে পাঠান। বিষয়টি নিয়ে রিট করলে আদালতে দুই শিশুকে হাজিরের নির্দেশ দেন।

এফএইচ/আরএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।