মূল্যবোধ শিক্ষা হয় পরিবারে, স্টার জলসা-জি বাংলা নিয়ে হাইকোর্ট

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০৯:৩৪ পিএম, ০৯ জানুয়ারি ২০১৭

বাংলাদেশে ভারতীয় তিন টিভি চ্যানেলের (স্টার জলসা, স্টার প্লাস ও জি বাংলা) সম্প্রচার বন্ধে জারি করা রুলের শুনানিতে হাইকোর্ট বলেছেন, পারিবারিক মূল্যবোধ শিক্ষা দেয়া হয় পরিবার থেকে, কারণ পারিবারিক সম্পর্ক এবং মূল্যবোধ পরিবারের একটি অংশ। আমরা চাইলেই দেশি-বিদেশি চ্যানেল থেকে অনেক কিছু শিক্ষাগ্রহণ করতে পারি। কিন্ত তা করা হয় না।

আদালতের একজন বিচারপতি বলেন, যখন স্টুডেন্ট ছিলাম তখন আমার বাবা সন্ধ্যা ৬টা থেকে ৮টা পর্যন্ত টিভি চ্যানেল বন্ধ রাখতেন। তিনি (বাবা) যখন টিভি দেখতেন তখন আমাদের (বাংলা ও ইংরেজি) খবর দেখার জন্য ডাকতেন। সিনেমা থেকেও শিক্ষাগ্রহণ করা যায়। সিনেমায় ফাইটিং, ক্লাইমেক্স থাকতে হবে। এগুলো থেকে যে যেভাবে শিক্ষা নেয়। তবে, টিভি দেখে শিক্ষাগ্রহণ করায় সামাজিক অবক্ষয় রোধের ব্যবস্থা থাকা দরকার।

সোমবার ছিল ভারতীয় এই তিন টিভি চ্যানেলে সম্প্রচার বন্ধে জারি করা রুলের ওপর শুনানির দ্বিতীয় দিন। আদালতে এদিন রিটের পক্ষে শুনানি করেন অ্যাডভোকেট একলাস উদ্দিন ভূইয়া ও সৈয়দা শাহিন আরা লাইলী। অপরদিকে রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন- অ্যাডভোকেট পূরভী রানী শরমা ও পূরবী শাহা।

বাংলাদেশে ভারতীয় তিন টিভি চ্যানেলের সম্প্রচার বন্ধে জারি করা রুলের ওপর নির্ধারিত দিন রোববার (৮ জানুয়ারি) শুনানি শুরু করার পর দ্বিতীয় দিন শুনানি করে পরবর্তী শুনানির জন্য মঙ্গলবার দিন ধার্য করেছেন হাইকোর্টের বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরী ও বিচারপতি জেবিএম হাসানের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ। শুনানিতে তারা এ তিন চ্যানেলে সম্প্রচারিত বিভিন্ন সিরিয়াল বাংলাদেশের সমাজ-সংস্কৃতির উপর আগ্রাসন বলে উল্লেখ করেন।

২০১৪ সালের জুলাই মাসে রোজার ঈদকে সামনে রেখে স্টার জলসার ‘বোঝেনা সে বোঝেনা’ সিরিয়ালের পাখি চরিত্রের নামে পোশাক কিনতে না পেরে বাংলাদেশে অনেকে আত্মহত্যা করে। এ নিয়ে পত্র-পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশিত হয়। এ বিষয়ে ওই বছরের আগস্ট মাসে হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় একটি রিট করেন আইনজীবী সৈয়দা শাহীন আরা লাইলী।

তখন বিচারপতি শেখ হাসান আরিফ ও বিচারপতি আবু তাহের মো. সাইফুর রহমানের অবকাশকালীন হাইকোর্ট বেঞ্চ আবেদনটি উত্থাপিত হয়নি মর্মে খারিজ করে দেন। এরপর আবার নতুন করে আবেদন করা হয়। সেই আবেদনের শুনানি নিয়ে ২০১৪ সালের ১৯ অক্টোবর হাইকোর্ট রুল জারি করেন। রুলে বাংলাদেশে ভারতীয় এই তিন টিভি চ্যানেলের সম্প্রচার বন্ধে কেন নির্দেশ দেয়া হবে না, তা জানতে চাওয়া হয়।

ওই সময় আইনজীবী একলাছ উদ্দিন ভূইয়া বলেছিলেন, বাংলাদেশের কোনো টিভি চ্যানেল ভারতে প্রচার হয় না। অথচ বাংলাদেশে ভারতীয় টিভি চ্যানেলের অবাধ সম্প্রচারের ফলে যুবসমাজ ধ্বংসের সম্মুখীন। সর্বশেষ তাদের একটি টিভি চ্যানেল স্টার জলসার ‘বোঝেনা সে বোঝেনা’ সিরিয়ালের পাখি চরিত্রের নামে পোশাক কিনতে না পেরে বাংলাদেশে অনেকে আত্মহত্যা করেছে।

তিনি আরও বলেন, একটি দৈনিকে এ নিয়ে ‘পাখি প্রেমে প্রাণ বিসর্জন’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদনও প্রকাশিত হয়েছে। ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, দেশের ঘরে-ঘরে বাড়ছে ভারতীয় ধারাবাহিক নাটকের জনপ্রিয়তা। এসব সিরিয়াল-প্রীতির কারণে দেশের টেলিভিশন চ্যানেলগুলো ক্রমেই দর্শক হারাচ্ছে, দেশ হারাচ্ছে নিজস্ব সংস্কৃতি। কিশোরী-তরুণীদের ফ্যাশনেও এর মারাত্মক নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। সর্বশেষ স্টার জলসার ‘বোঝেনা সে বোঝেনা’ সিরিয়ালের পাখির প্রেমে প্রাণ যায় এক যুবক ও শিশুর। এসব যুক্তিতে চ্যানেলগুলো বন্ধে আমরা হাইকোর্টে রিটটি দায়ের করি।

এফএইচ/বিএ

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।