পাবলিক পরীক্ষার মূল্যায়নে অভিজ্ঞ শিক্ষক কেন নয়: হাইকোর্ট
এসএসসি ও এইচএসসির (মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক) পরীক্ষার খাতা মূল্যায়নে যোগ্য ও অভিজ্ঞ শিক্ষক কেন নয় জানতে চেয়েছেন হাইকোর্ট।
একই সঙ্গে যোগ্য শিক্ষক দিয়ে এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষার খাতা দেখা এবং তার জন্য পর্যাপ্ত সময় কেন দেওয়া হবে না তাও জানতে চেয়ে রুল জারি করেছেন আদালত।
আগামী চার সপ্তাহের মধ্যে শিক্ষা সচিব, শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যানসহ সংশ্লিষ্টদের উক্ত রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে। রিটকারীর আইনজীবী মনজিল মোরসেদ জাগো নিউজকে এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
জনস্বার্থে করা এ রিট আবেদনের প্রাথমিক শুনানি শেষে হাইকোর্টের বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরী ও বিচারপতি জেবিএম হাসানের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ এই আদেশ দেন।
আদালতে আজ রিটের পক্ষে অ্যাডভোকেট মনজিল মোরসেদ নিজেই শুনানি করেন। অপরদিকে রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মোতাহার হোসেন সাজু।
পরে আইনজীবী মনজিল মোরসেদ বলেন, গত ২৩ ডিসেম্বর একটি জাতীয় দৈনিকে পাবলিক পরীক্ষায় খাতা দেখা ও ফলাফল ত্রুটিপূর্ণ হওয়ার সংবাদ প্রকাশিত হয়। ওই প্রতিবেদন সংযুক্ত করে গত ১ জানুয়ারি মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশের (এইচআরপিবির) পক্ষে অ্যাডভোকেট আসাদুজ্জামান সিদ্দিকী রিট দায়ের করেন।
‘পরীক্ষার খাতা দেখায় নৈরাজ্য’ শিরোনামে গত ২৩ ডিসেম্বর একটি জাতীয় দৈনিকে প্রকাশিত প্রতিবেদন সংযুক্ত করে রিট আবেদনে উল্লেখ করা হয়, পরীক্ষায় ফল প্রকাশের পর শত শত শিক্ষার্থী নম্বর বেশি পাচ্ছে। পরীক্ষার খাতা দেখার জন্য প্রয়োজনীয় সময় না দেয়ায় রেজাল্ট এরকম হচ্ছে।
ওই রিটের শুনানি নিয়ে আজ উচ্চ আদালত এই আদেশ দেন।
প্রসঙ্গত, এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষার ফল প্রকাশের পর প্রতিবছর তা পর্যালোচনার জন্য শিক্ষার্থীদের আবেদনের সংখ্যা বাড়ছে। ২০১৪ সালে ৮ সাধারণ বোর্ডসহ ১০ শিক্ষা বোর্ডে এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষার ফল পুনর্নিরীক্ষণের জন্য আবেদন করেছিলেন ৪৩ হাজার শিক্ষার্থী। গত বছর ওই সংখ্যা ছিল ১ লাখ ২৯ হাজার ৩০১ জন। এ বছর আবেদন করেছিলেন ১ লাখ ৭২ হাজার ৬৫৮ শিক্ষার্থী।
পুনর্নিরীক্ষার আবেদন বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ফল রদবদলের হারও বেড়েছে। ২০১৫ সালে এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় ১০ শিক্ষা বোর্ডে ফল পরিবর্তন হয়েছিল দুই হাজার ৯১ শিক্ষার্থীর। এর মধ্যে অকৃতকার্য থেকে কৃতকার্য হয়েছেন ৪০৪ জন, নতুন করে জিপিএ ৫ পেয়েছেন ৪৪১ জন। বাকিদের গ্রেড পরিবর্তন হয়েছে। এ বছর ১০ বোর্ডে ফল পরিবর্তন হয়েছে চার হাজার ১৫২ জনের। এর মধ্যে অকৃতকার্য থেকে কৃতকার্য হয়েছেন ১৮৫২ জন, নতুন করে জিপিএ ৫ পেয়েছে ৮১১ জন। বাকিদের গ্রেড পরিবর্তন হয়েছে।
শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা বলছেন, ভালো পরীক্ষা দেওয়া সত্ত্বেও পরীক্ষকদের অবহেলা ও অদক্ষতায় শিক্ষার্থীরা যথাযথ ফল পাচ্ছে না। অনাকাঙ্ক্ষিত ফল বিপর্যয়ের শিকার হয়ে অনেক শিক্ষার্থী মানসিকভাবে ভেঙে পড়ছে, এমনকি আত্মহত্যার ঘটনাও ঘটেছে।
কিন্তু যাদের কারণে এই বিপর্যয় সেই শিক্ষকদের বিরুদ্ধে তেমন কোনো ব্যবস্থাই নেওয়া হচ্ছে না। এতে অন্য পরীক্ষকরাও সতর্ক হচ্ছেন না। ফলে প্রতিবছর বাড়ছে ভুলের হার। সম্প্রতি আন্তঃশিক্ষা বোর্ডের তদন্তেও পরীক্ষকদের ভুলের বিষয়টি উঠে এসেছে।
আবার যেসব শিক্ষার্থী ফল পুনর্নিরীক্ষণের আবেদন করছেন তারাও শুভংকরের ফাঁকিতে পড়ছেন। শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা মনে করছেন ফল পুনর্নিরীক্ষণের অর্থ নতুন করে খাতা দেখা। কিন্তু বাস্তবে তা হয় না। মূলত উত্তরপত্রের নম্বর যোগ ও বৃত্ত ভরাট ঠিক আছে কি না, তা দেখেই পুনর্নিরীক্ষণ শেষ করা হয়। মূল খাতায় হাতই দেওয়া হয় না।
এফএইচ/এমএমজেড/এএইচ/এমএস