মুফতি হান্নানসহ ৩ জনের মৃত্যুদণ্ড বহাল


প্রকাশিত: ০৩:৩৩ এএম, ০৭ ডিসেম্বর ২০১৬

সাবেক ব্রিটিশ হাইকমিশনার আনোয়ার চৌধুরীর ওপর গ্রেনেড হামলার ঘটনায় নিম্ন (বিচারিক) আদালতে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত হরকাতুল জিহাদ (হুজি) নেতা মুফতি হান্নানসহ তিন আসামির মৃত্যুদণ্ডাদেশ বহাল রেখেছেন সুপ্রিমকোর্টের আপিল বিভাগ। মুফতি হান্নান ছাড়া মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত অপর দুই আসামি হলেন- শাহেদুল আলম ওরফে বিপুল ও দেলোয়ার হোসেন ওরফে রিপন।

বুধবার সকালে প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার নেতৃত্বে আপিল বিভাগের চার সদস্যের আপিল বেঞ্চ এই রায় ঘোষণা করেন। বেঞ্চের অপর সদস্যরা হলেন, বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন, বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী এবং বিচারপতি মির্জা হোসেইন হায়দার।

এই রায়ের ফলে এই তিন আসামির দণ্ড কার্যকরে আরো কোনো বাধা থাকল না। তবে আসামিরা চাইলে এক মাসের মধ্যে রিভিউ করতে পারবেন।

আসামি বিপুলের পক্ষে ছিলেন অ্যাডভোকেট মো. হেলাল উদ্দিন মোল্লা ও  রিপনের পক্ষে ছিলেন অ্যাডভোকেট মো. আলী এবং রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম ও অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল মুরাদ রেজা।  

রায় ঘোষণার পর অ্যাডভোকেট মো. আলী জাগো নিউজকে জানান, ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার মামলায় আজ মুফতি হান্নানের হাজিরার দিন ধার্য রয়েছে। তার সঙ্গে আদালতে আমার দেখা হবে। ওনার সঙ্গে কথা বলে রিভিউ করার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিব। আপিলের রায় প্রকাশ হওয়ার পর ত্রিশ দিনের মধ্যে আমরা রিভিউ আবেদন করতে পারি।

এই মামলার যাবজ্জীবন দণ্ডপ্রাপ্ত অপর দুই আসামি মহিবুল্লাহ ওরফে মফিজুর রহমান ওরফে মফিজ এবং মুফতি মঈন উদ্দিন ওরফে আবু জান্দালের আপিল না করায় তাদের দণ্ডও বহাল রয়েছে বলে জানিয়েছেন আইনজীবীরা।

এর আগে, গত ১১ ফেব্রুয়ারি জেল আপিল ও ডেথ রেফারেন্সের শুনানি শেষে মুফতি হান্নানসহ ৩ জনের ফাঁসি ও ২ জনের যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের রায় বহাল রাখেন হাইকোর্ট। বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি আমির হোসেনের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এ রায় ঘোষণা করেন।

পরে এই রায়ের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে মৃত্যুদণ্ড বহাল থাকা দুই আসামি হরকাতুল জিহাদের (হুজি) শীর্ষস্থানীয় নেতা মুফতি আবদুল হান্নান ও হুজির সিলেট অঞ্চলের সংগঠক শরীফ শাহেদুল আলম ওরফে বিপুল আপিল করেছিলেন।

উল্লেখ্য, সিলেটে হজরত শাহজালাল (রহ.)-এর মাজার প্রাঙ্গনে ২০০৪ সালের ২১ মে ব্রিটিশ হাইকমিশনার আনোয়ার চৌধুরীর  উপর গ্রেনেড হামলা করা হয়। ওই গ্রেনেড হামলায় ঘটনাস্থলেই পুলিশের এএসআই কামাল উদ্দিন নিহত হন। এছাড়া পুলিশ কনস্টেবল রুবেল আহমেদ ও হাবিল মিয়া নামের আরেক ব্যক্তি হাসপাতালে মারা যান। আনোয়ার চৌধুরী ও সিলেটের জেলা প্রশাসকসহ অন্তত ৪০ জন ওই ঘটনায় আহত হন।

ওই দিনই সিলেট কোতোয়ালি থানা পুলিশ অজ্ঞাত পরিচয় আসামিদের বিরুদ্ধে মামলা করে। মামলার তদন্ত শেষে ২০০৭ সালের ৭ জুন হরকাতুল জিহাদ নেতা মুফতি আবদুল হান্নান, তার ভাই মহিবুল্লাহ ওরফে মফিজুর রহমান ওরফে মফিজ ওরফে অভি, শরীফ শাহেদুল আলম ওরফে বিপুল ও দেলোয়ার ওরফে রিপনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেওয়া হয়।

সঠিক ঠিকানা না থাকায় মুফতি মঈন উদ্দিন ওরফে আবু জান্দাল ওরফে মাসুম বিল্লাহ ওরফে খাজার নাম প্রথমে বাদ দেওয়া হলেও পরে তাকে যুক্ত করে সম্পূরক অভিযোগপত্র দেয় পুলিশ। ওই বছরের নভেম্বরে অভিযোগ গঠন করা হয়।

৫৬ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ শেষে ২০০৮ সালের ২৩ ডিসেম্বর সিলেটের দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের বিচারক সামীম মো. আফজাল রায় ঘোষণা করেন। আসামিদের মধ্যে মুফতি হান্নান, বিপুল ও রিপনকে মৃত্যুদণ্ড এবং মহিবুল্লাহ ও আবু জান্দালকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয়া হয়।

ওই রায়ের বিরুদ্ধে আসামি পক্ষের আপিল ও ডেথ রেফারেন্সের (মুত্যুদণ্ড অনুমোদনের আবেদন) শুনানি শেষে চলতি বছর ১১ ফেব্রুয়ারি রায় দেন হাইকোর্টের বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি আমির হোসেনের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ আসামিদের আপিল খারিজ করেন। তাতে মুফতি হান্নানসহ তিন আসামির মৃত্যুদণ্ড এবং দুইজনের যাবজ্জীবন দণ্ড বহাল থাকে।

কারাগারে থাকা পাঁচ আসামির মধ্যে মুফতি হান্নান ও বিপুল হাইকোর্টের রায়ের প্রত্যায়িত অনুলিপি হাতে পাওয়ার পর গত ১৪ জুলাই আপিল আবেদন করেন।

এফএইচ/এআরএস/পিআর

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।