ভুল চিকিৎসা : বিএসএমএমইউ’র চিকিৎসক সুরভীকে লিগ্যাল নোটিশ


প্রকাশিত: ১২:০৫ পিএম, ০৫ অক্টোবর ২০১৬
ভুল চিকিৎসার শিকার আনোয়ারা বেগম

ভুল চিকিৎসায় অঙ্গহানির ঘটনায় ৮০ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ চেয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) সহযোগী অধ্যাপক ডা. পারভীন আক্তার শামসুন নাহার সুরভীকে লিগ্যাল নোটিশ পাঠিয়েছেন আনোয়ারা বেগম নামে এক নারী।

সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মোহাম্মদ নুরুল আমিন ওই নারীর পক্ষে রেজিস্ট্রিযোগে এই নোটিশ পাঠান। গত ২৮ সেপ্টেম্বর লিগ্যাল নোটিশ পাঠানোর বিষয়টি সাংবাদিকদের বুধবার বিকেলে নিশ্চিত করেন ওই আইনজীবী।

নোটিশে বলা হয়, টিউমার হওয়ার কথা বলে অপারেশন করতে গিয়ে আনোয়ারা বেগমের জরায়ু, পায়খানা এবং প্রস্রাবের নালি কেটে ফেলা হয়েছে। তিনি এখন প্লাস্টিকের প্যাকেটের মাধ্যমে নল দিয়ে পায়খানা প্রস্রাব করছেন। ভুল চিকিৎসার পর আনোয়ারা বেগমের যাবতীয় চিকিৎসা ব্যয় বহন করার কথা বললেও সুরভী কোনো চিকিৎসা খরচ দেননি। বরং তাকে বিভিন্ন জায়গায় চিকিৎসার জন্য নিয়ে গিয়ে তাকে হেনস্থা করা হয়েছে।

বাংলাদেশের বিভিন্ন হাসপাতালসহ ভারতে গিয়ে তার চিকিৎসা ব্যয় হয়েছে ৮০ লক্ষাধিক টাকা। সাত দিন সময় দিয়ে ওই ক্ষতিপূরণ চেয়ে লিগ্যাল নোটিশ পাঠানো হয়েছে। এর মধ্যে তিনি অভিযোগকারীর সঙ্গে সমঝোতায় না আসলে তার বিরুদ্ধে হাইকোর্টে রিট করা হবে বলে উল্লেখ করা হয়।

নোটিশে আরো বলা হয়, ২০১৩ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর আনোয়ারা বেগম অসুস্থ হয়ে সুরভীর কাছে গেলে তিনি তাৎক্ষণিক অপারেশনের কথা বলে মিরপুর আজমল হাসপাতালে ভর্তি করান। ওই দিনই তাকে অপারেশন থিয়েটারে নেয়া হয়। অপারেশন করার সময় তার জরায়ু, পায়খানা এবং প্রস্রাবের নালি কেটে ফেলা হয়। কেটে যাওয়ার পর আল হেলাল হসপিটালের চিকিৎসক দ্বীন মোহাম্মদকে ডেকে আনেন সুরভী। দ্বীন মোহাম্মদ রোগীকে দ্রুত বিএসএমএমইউতে ভর্তি করতে বলেন। বিএসএমএমইউর চিকিৎসক শাহাদাৎ হোসেনের অধীনে তাকে ভর্তি করা হয়।

চিকিৎসক শাহাদাৎ আনোয়ারা বেগমের সুস্থ হওয়া সম্ভব নয় বলে তাকে রিলিজ দেন। এরপর বিএসএমএমইউর চিকিৎসক আনোয়ার হোসেন ও  সাইফুল ইসলামের অধীনে পুনরায় ভর্তি করান। এ দুই চিকিৎসকও তাকে রিলিজ দিয়ে ধানমন্ডির পপুলার হাসপাতালে ডাক্তার এস এ খানের অধীনে ভর্তি করানো হয়।

ডা. এস এ খান রোগীর বড় ছেলেকে ডেকে বলেন, আনোয়ারা বেগমের কৃত্রিম অঙ্গ সংযোজন করা হলে তিনি সুস্থভাবে বেঁচে থাকতে পারেন। তখন সুরভী অঙ্গ সংযোজন করে তাকে রিলিজ দিতে বলেন। এরপর ওই হাসপাতালের চিকিৎসক জাহিদুল হকের অধীনে পুনরায় পপুলার হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। তবে তিনি পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে তার চিকিৎসা সম্ভব নয় বলে রিলিজ করে দেন।

ভুল চিকিৎসার মাধ্যমে অঙ্গহানি হওয়ায় সুরভীর বিরুদ্ধে আনোয়ারা বেগম ২০১৩ সালের ১৫ ডিসেম্বর মিরপুর মডেল থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেন। এরপর সুরভী গণ্যমান্য ব্যক্তিদের সামনে মৌখিকভাবে বলেন, আনোয়ারা বেগমের যাবতীয় চিকিৎসার দায়িত্ব আমি নিলাম। তিনি যতদিন জীবিত থাকবেন তার খাওয়া-দাওয়ার ব্যয়ও তিনি বহন করবেন। এসময় তিনি তাকে পাঁচ হাজার টাকাও দেন। কিন্তু এর কিছু দিন পরে সুরভীর চেম্বারে আনোয়ারা বেগমের সন্তানরা গেলে তিনি সন্ত্রাসী দিয়ে হেনস্তা করে বের করে দেন।

এরপর রোগীকে নিয়ে তার সন্তানরা ভারতের পুনে গ্যালাক্সি হাসপাতালে নিয়ে চিকিৎসা করিয়ে নিয়ে আসেন। এতে তাদের খরচ হয় ৮০ লাখ টাকা। তার প্রতি মাসে চিকিৎসা করাতে এক লাখ টাকা খরচ হয় বলে নোটিশে বলা হয়েছে।

এফএইচ/জেএইচ/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।