ডা. বুলবুল হত্যার তিন বছর: সাক্ষী না আসায় আটকা বিচার

২০২২ সালের ২৭ মার্চ রাজধানীর মিরপুরের কাজীপাড়ায় পাঁচ ছিনতাইকারীর ধারালো অস্ত্রের আঘাতে খুন হন দন্ত চিকিৎসক আহমেদ মাহী বুলবুল। তার হত্যাকাণ্ডের তিন বছর পূর্ণ হলেও বিচারকাজে এখনো আসেনি উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি। তবে এ মামলায় গ্রেফতার পাঁচ আসামি রায়হান ওরফে সোহেল ওরফে আপন, রাসেল হোসেন হাওলাদার, আরিয়ান খান হৃদয়, সোলায়মান ও রিপন কারাগারে আছেন।
মামলাটি বর্তমানে ঢাকার ১৩তম অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ কুদরত-এ-এলাহীর আদালতে বিচারাধীন। সংশ্লিষ্ট মামলার নথি সূত্রে জানা গেছে, ২০২৩ সালের ২৫ মে মামলাটির অভিযোগ গঠনের মাধ্যমে শুরু হয় আনুষ্ঠানিক বিচার। বিচারপ্রক্রিয়া অনুযায়ী এরপর থেকেই শুরু হয় সাক্ষ্যগ্রহণ।
অভিযোগ গঠনের একবছর ১০ মাস পার হয়ে গেলেও এখন পর্যন্ত সাক্ষ্যগ্রহণের তারিখ পড়েছে মাত্র ১০ বার। এ তারিখগুলোয় অভিযোগপত্রভুক্ত ২৩ জন সাক্ষীর মধ্যে সাক্ষ্য দিয়েছেন মাত্র পাঁচজন।
জানা গেছে, সাক্ষ্যগ্রহণের বেশিরভাগ ধার্য তারিখেই আদালতে কোনো সাক্ষী উপস্থিত হননি। সর্বশেষ গত ২৬ জানুয়ারি এ মামলার সাক্ষ্যগ্রহণের দিন ধার্য ছিল। তবে এদিন কোনো সাক্ষী আদালতে উপস্থিত হননি। ফলে পরবর্তী সাক্ষ্যগ্রহণের জন্য আগামী ১৬ এপ্রিল দিন ধার্য করেছেন বিচারক।
- আরও পড়ুন
- ঢাকায় ১৬ মাসে ২২৪ খুন, বেশি ওয়ারী-মিরপুরে
- চিকিৎসক বুলবুল হত্যা মামলায় আরেক আসামি গ্রেফতার
- বাড়ি থেকে সন্তানদের জন্য গরুর দুধ আর আনা হলো না ডা. বুলবুলের
আদালত সূত্রে জানা গেছে, সাক্ষীদের সমন দেওয়ার পরও তারা যথাযথ তারিখ আদালতে উপস্থিত হচ্ছেন না। ফলে দীর্ঘায়িত হচ্ছে বিচারপ্রক্রিয়া।
মামলার সূত্রে জানা যায়, নিহত ডা. বুলবুল একজন দন্ত চিকিৎসক ও প্রথম শ্রেণির ঠিকাদার ছিলেন। তিনি ঠিকাদারি কাজের জন্য নোয়াখালী যাওয়ার উদ্দেশ্যে ২০২২ সালের ২৭ মার্চ ভোর ৫টা ১৫ মিনিটের দিকে বাসা থেকে বের হন। রিকশা নিয়ে শেওড়াপাড়া বাসস্ট্যান্ড যাওয়ার পথে পশ্চিম কাজীপাড়ার নাভানা ফার্নিচার শোরুমের সামনে প্রধান সড়কের ওপর আসামি রিপন ও রাসেল রিকশাটির গতিরোধ করে তার কাছে যা যা আছে তা দিয়ে দিতে বলে চিকিৎসক বুলবুলকে। না দিলে সঙ্গে থাকা ছুরি দিয়ে আঘাত করার ভয় দেখা।
পরে বুলবুল মোবাইল ফোন দিতে না চাওয়ায় রিপন তার ঊরুতে আঘাত করে জখম করে মোবাইল ফোন নিয়ে পালিয়ে যায়। এসময় বুলবুল গুরুতর জখম অবস্থায় রাস্তায় পড়ে যান। ছিনতাইকারীরা চিকিৎসক বুলবুলের কাছ থেকে ছিনিয়ে নেওয়া মোবাইল ফোন ১৫০০ টাকায় বিক্রি করে। পরে তা পাঁচ ছিনতাইকারী ভাগ করে নেয়।
এ ঘটনায় রাজধানীর মিরপুর মডেল থানায় বাদী হয়ে নিহতের স্ত্রী শাম্মী আক্তার শান্তি অজ্ঞাতনামাদের বিরুদ্ধে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। তদন্ত শেষে ২০২২ সালের ২৪ সেপ্টেম্বর মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ও ডিবির মিরপুর জোনাল টিমের পরিদর্শক (নিরস্ত্র) মুহাম্মদ দেলোয়ার হোসেন আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন।
- আরও পড়ুন
- ডা. বুলবুল হত্যার ঘটনায় গ্রেফতার ৪
- ডা. বুলবুল হত্যা: আরও দুই ছিনতাইকারীর দায় স্বীকার
- ছিনতাইকারীদের মোবাইল দিতে না চাওয়ায় প্রাণ যায় ডা. বুলবুলের
অভিযোগপত্রে পাঁচজনকে আসামি করা হয়। তারা হলেন, পিরোজপুরের ভান্ডারিয়া উপজেলার নলকাঠি গ্রামের মৃত মোশারফ হোসেনের ছেলে মো. রায়হান ওরফে সোহেল আপন (২৭), ঝালকাঠি সদর উপজেলার কৃষ্ণকাঠি গ্রামের আনোয়ার হোসেন হাওলাদারের ছেলে রাসেল হোসেন হাওলাদার (২৫), বরিশাল শহরের চন্দ্রমোহন এলাকার মো. হেমায়েত রাঢ়ীর ছেলে হাফিজুর রহমান ওরফে আরিয়ান খান হৃদয় রাঢ়ী (২৫), ফরিদপুরের মধুখালী উপজেলার বড় গোপালদী গ্রামের মৃত বাবুর ছেলে সোলায়মান মীর (২৩) ও খুলনার সোনাডাঙ্গা থানার জোড়াগেট এলাকার মো. আলমের ছেলে মো. রিপন (৩০)। তারা প্রত্যেকেই এখন কারাগারে আটক আছেন।
স্বামী হত্যার বিচার চেয়ে স্ত্রী ও মামলার বাদী শাম্মি আক্তার শান্তি বলেন, স্বামী খুনের পর আমার ও আমার বাচ্চার জীবনটাই শেষ হয়ে গেলো। আমি সকল আসামির সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড চাই।
এদিকে বাদীপক্ষের আইনজীবী আবুল কালাম আজাদ বলেন, গ্রেফতার আসামিদের মধ্যে কয়েকজন আদালত হত্যার দায় স্বীকার করে জবানবন্দি দিয়েছেন। যারা দায় স্বীকার করে জবানবন্দি দিয়েছেন, তারা তো জেনে-বুঝেই করেছেন। কাজেই আমরা তাদের মৃত্যুদণ্ড প্রত্যাশা করছি।
সাক্ষ্যগ্রহণে ধীরগতির বিষয়ে তিনি বলেন, মামলার বাদীর সাক্ষ্যগ্রহণ করতে আমাদের কয়েকবার তারিখ পেছানো লেগেছে। কেননা, বাদী থাকেন রংপুরে, আবার একটা চাকরিও করেন তিনি। ফলে বাদীর সাক্ষ্যগ্রহণেও কালক্ষেপণ হয়েছে।
এদিকে এ মামলায় আসামিপক্ষের আইনজীবী নূর মোহাম্মদ পবিত্র ওমরা পালনে দেশের বাইরে থাকায় তার মন্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।
এমআইএন/বিএ/এএসএম