তরুণদের স্বপ্নের ফেরিওয়ালা এম. সাফাক হোসেন

জাগো নিউজ ডেস্ক
জাগো নিউজ ডেস্ক জাগো নিউজ ডেস্ক
প্রকাশিত: ০৫:০৭ পিএম, ০৯ জানুয়ারি ২০২৫

সীমান্ত হাসান

যে কোনো সাফল্য বা অর্জনের মূলেই থাকে আকাঙ্ক্ষা বা স্বপ্ন। এটিই মানুষকে দিয়ে পরিশ্রম করায়, অসম্ভবকে সম্ভব করার চেষ্টা করতে উৎসাহ দেয়। যার মাঝে স্বপ্ন নেই; তার মাঝে আশা বা উৎসাহ নেই। সামনে এগিয়ে যাওয়ার অনুপ্রেরণা, ব্যর্থতা থেকে ঘুরে দাঁড়ানোর সাহস, ছোট অবস্থায় থেকেও জীবনে বড় অর্জন করার সংকল্প সবকিছুরই উৎস এটি। তেমনই একজন স্বপ্ন দেখানোর ফেরিওয়ালা এম. সাফাক হোসেন। পেশায় একজন কমিউনিকেশন স্পেশালিস্ট ও ট্রেইনার। তিনি সিএসডি একাডেমির ফাউন্ডার ও চিফ ট্রেইনার এবং এইচ অ্যান্ড এইচ ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা ও সভাপতি। সাফাক হোসেন অ্যাডভাইজর হিসেবে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সম্পৃক্ত এবং বিভিন্ন ইউনিভার্সিটিতে পার্টটাইম লেকচার দেন। তরুণদের স্বপ্ন দেখাতে পছন্দ করেন, ক্যারিয়ার গাইডেন্স অ্যাডভোকেসি ও সমাজসেবায় নিজেকে জড়িয়ে রেখেছেন বিভিন্ন ভাবে।

ছোটবেলায় তিনিও বহুমুখী স্বপ্ন দেখতেন। তবে স্থির তেমন কিছু ছিলো না। ছোটবেলা থেকেই নতুনত্ব নিয়ে কৌতূহল অনেক বেশি ছিল। যেমন- বিজ্ঞান, প্রযুক্তি, আবিষ্কার, সৃষ্টি জগৎ, রহস্য নিয়ে। সেসব স্বপ্ন থেকেই তিনি প্রতিষ্ঠা করেছেন কমিউনিকেশন অ্যান্ড স্কিলস ডেভেলপমেন্ট একাডেমি (সিএসডি একাডেমি)।

তরুণদের স্বপ্নের ফেরিওয়ালা এম. সাফাক হোসেন

সিএসডি সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘এ একাডেমিকে প্রথম পরিকল্পনা করি কমিউনিকেশন স্কিলসটা নিয়ে কাজ করার জন্য। একাডেমি করার মূল লক্ষ্যই হচ্ছে ইন্ডিভিজুয়াল কমিউনিকেশন স্কিল ডেভেলপমেন্ট করা, বিভিন্ন কর্মশালার মাধ্যমে নিজের দুর্বলতা খুঁজে বের করে তা মেরামত করে দক্ষতা বাড়ানের কৌশল, ক্যারিয়ার ডেভেলপমেন্ট করতে গাইডেন্স দেওয়া, উদ্যোক্তা হওয়ার পরামর্শ, দুস্থ বা পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর মধ্য থেকে প্রতিভাবানদের কর্মসংস্থানের ওপর দক্ষ হওয়ার সুযোগ করে দেওয়া। অদূর ভবিষৎ চিন্তা করে আমরা গ্লোবাল কানেক্টিভিটি বা ভার্চুয়াল রিয়ালিটির মাধ্যমে বিশ্বমানের বা জয়েন্ট ভেঞ্চারে প্রশিক্ষণ পরিকল্পনা করছি, যাতে প্রতিভাবানদের গ্লোবালি এক্সপোজ করার সুযোগ গড়ে উঠে।’

তিনি করোনাকালে প্রতিষ্ঠা করেন এইচ অ্যান্ড এইচ ফাউন্ডেশন। প্রথমে কার্যক্রম শুরু হয় করোনা মহামারির সময়ে মেডিকেল ফ্রন্টলাইনে সাপোর্ট দিয়ে। যেমন- অক্সিজেন সাপোর্ট, সাপ্লাই রিফিল, সোশ্যাল মিডিয়া প্লাটফর্মের মাধ্যমে রেজিস্টার্ড চিকিৎসক দিয়ে প্রেসক্রিপশন প্রদান, টেলি-ডাক্তার প্রতিস্থাপন, অনলাইনের মাধ্যমে সচেতনতামূলক টিপস, হাইজিন, হ্যান্ডওয়াশ, ফুড সেফটি ইত্যাদি। তাছাড়া দুস্থ, দিনমজুরদের পরিবারের জন্য খাদ্যসামগ্রী ব্যবস্থা করেছেন।

এইচ অ্যান্ড এইচ ফাউন্ডেশন সম্পর্কে সাফাক হোসেন বলেন, ‘ফাউন্ডেশন রেজিস্ট্রেশনের পরবর্তী কার্যক্রমগুলো আরও সমৃদ্ধ হয়েছে। এখানে সমাজে পিছিয়ে পড়া কিছু শিশুকে মাধ্যমিক শিক্ষা পর্যন্ত সাহায্য করে আসছি। সামাজিক সচেতনতামূলক ক্যাম্পেইন, পার্সোনাল স্কিল ডেভেলপমেন্ট প্রশিক্ষণ, বিশুদ্ধ পানির ব্যবস্থা করা, স্বাবলম্বী করে গড়ে তোলা ইত্যাদি কার্যক্রম অব্যাহত আছে।’

তার স্বপ্ন বাস্তবায়নের কথা ছড়িয়ে দিতে, তরুণ প্রজন্মকে উৎসাহ দিতে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও সেমিনারে শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে বক্তব্য রাখেন। সম্প্রতি একটি কনফারেন্সে বক্তব্য রেখেছেন, সেখানে অংশ নিয়েছিলেন প্রায় ৬০০ শিক্ষার্থী ও বিভিন্ন পেশাজীবী। তার উদ্যোগে যানজট নিরসন ও বন্যাদুর্গত এলাকায় ত্রাণ, শিশুখাদ্য ও মেডিক্যালসামগ্রী বিতরণ কার্যক্রমে ভূমিকার জন্য ‘দেশসেবা লিডারশিপ অ্যাওয়ার্ড’ পেয়েছেন ১৪টি জনসেবামূলক প্রতিষ্ঠান এবং ৫৪ জন স্বেচ্ছাসেবী শিক্ষার্থী। এ সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘আমরা সব সময় তরুণ সমাজের সমস্যার কথা ও আর্তনাদ ওপর মহলে পৌঁছানের জন্য কিছু বছর ধরেই চেষ্টা করে আসছি। এখন পরিধি বাড়ানের চেষ্টার সূচনা ছিল এই দেশসেবা লিডারশিপ অ্যাওয়ার্ড। আমাদের মূল লক্ষ্য হচ্ছে, যারা স্বেচ্ছাসেবামূলক কার্যক্রম করতে চান; তাদের একটি প্লাটফর্মের মাধ্যমে সংযুক্ত করা।’

তরুণদের স্বপ্নের ফেরিওয়ালা এম. সাফাক হোসেন

গত বছরের আগস্টে রাজনৈতিক ও দেশের পরিস্থিতি পরিবর্তনের পর দেশ ছিল অভিভাবকশূন্য। সেই ক্রান্তিকালে দেশকে ধরেছিল তরুণ সমাজ, শিক্ষার্থী ও জনগণ। তরুণ সমাজ এলাকায় নিরাপত্তার জন্য সারারাত জেগে থেকে পাহারা দিয়েছে। রাস্তার নিরাপত্তার জন্য বিনা শ্রমে ট্রাফিক ম্যানেজমেন্ট দায়িত্ব নিয়েছে। আবার হলো বন্যা পরিস্থিতির অবনতি। এতে স্বেচ্ছাসেবী হিসেবে তরুণ সমাজ এগিয়ে এসেছে, ত্রাণের ব্যবস্থা থেকে দুয়ার পর্যন্ত পৌঁছে দিয়েছে। এতে অনেক স্বেচ্ছাসেবক সংগঠন কাজ করেছে। এ বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আমাদের চিন্তায় এলো, আমরা এসব তরুণকে পুরস্কৃত করার উদ্যোগ নিই। আমরা সংগঠন বাছাই করি। তাদের কার্যক্রম ও ওপেন নোমিনেশন ঘোষণা দিয়ে। শ্রেষ্ঠ কাজগুলো বাছাই করে পুরস্কৃত করা হয়। ট্রাফিক ম্যানেজমেন্টে যারা স্বেচ্ছায় কাজ করতে চেয়েছিলেন; আমাদের এইচ অ্যান্ড এইচ ফাউন্ডেশনে ক্যাম্পেইনে রিক্রুট করে একটি প্রশিক্ষণ দিয়েছিলাম। তারা নিজ এলাকায় টিম, বন্ধু-বান্ধব নিয়ে ১০-১২ দিন দায়িত্ব পালন করেছিলেন। তাদের কার্যক্রমকে সম্মানিত করার উদ্দেশ্য ছিল দেশসেবা লিডারশিপ অ্যাওয়ার্ড।’

এম. সাফাক হোসেন পড়াশোনা করেছেন মিডিয়া কমিউনিকেশন ও আন্তর্জাতিক সম্পর্ক নিয়ে। এছাড়া মাইক্রো ফিন্যান্সের ওপর ডাবল মেজর মাস্টার্স করেছেন। অনারারি পিএইচডি-ডক্টরেট পেয়েছেন আন্তর্জাতিক সম্পর্ক ও কূটনীতি বিষয়ের ওপর। মেধাবী এ স্বপ্নবাজ মানুষটি কর্মদক্ষতা দিয়ে নিজেকে কোথায় দেখতে চান? এ প্রশ্ন রাখতেই হেসে বললেন, ‘আমি নিজেকে দেখতে চাই একজন দায়িত্ববান ব্যক্তি হিসেবে। যেখানে নিজের উন্নয়নের সাথে সাথে একটু কর্মদক্ষতা বৃদ্ধির জন্য প্লাটফর্ম দাঁড় করতে পারি। যেখানে মেধাবীদের মেধা বিকাশের সুযোগ হয়। হতে চাই একজন দায়িত্ববান মানুষ। যাতে আগামী প্রজন্মকে গ্রুমিং করে পরিপূর্ণভাবে শিক্ষা দিতে পারি।’ তার এ স্বপ্ন পূরণ হোক। তার সফলতা ছুঁয়ে যাক নতুন প্রজন্মকে।

এসইউ/জিকেএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।