যে কৌশলে উত্তীর্ণ হতে পারেন পুলিশের নিয়োগ পরীক্ষায়

মো. ইসরাফিল হোসাইন
মো. ইসরাফিল হোসাইন মো. ইসরাফিল হোসাইন , সহ সম্পাদক
প্রকাশিত: ০৬:০০ পিএম, ১৩ অক্টোবর ২০২৪
যে কৌশলে উত্তীর্ণ হতে পারেন পুলিশের নিয়োগ পরীক্ষায়। ফাইল ছবি

ট্রেইনি রিক্রুট কনস্টেবল (টিআরসি) পদে ৪ হাজার ২০০ কনস্টেবল নিয়োগ দিতে যাচ্ছে বাংলাদেশ পুলিশ। পুলিশ কনস্টেবল পদে নিয়োগ পেতে শারীরিক যোগ্যতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই পরীক্ষার প্রতিটি ধাপ আপনাকে যোগ্য প্রার্থী হিসেবে প্রমাণ করার সুযোগ দেবে। তবে একটি ইভেন্টে ব্যর্থ হলেই আপনি নির্বাচিত হওয়ার সুযোগ হারাবেন। শারীরিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণরাই কেবল লিখিত পরীক্ষার জন্য যোগ্য হিসেবে বিবেচিত হবেন। প্রতিযোগিতাপূর্ণ এ পরীক্ষায় পাস করতে হলে প্রয়োজন নিয়মিত অধ্যবসায়।

পুলিশ কনস্টেবল হওয়ার স্বপ্ন যদি আপনার থাকে, তবে শারীরিক পরীক্ষার জন্য আপনাকে আগে থেকেই প্রস্তুতি নিতে হবে। প্রতিটি ইভেন্টে নিজের সেরা পারফরম্যান্স দেওয়ার জন্য প্রয়োজন কৌশলগত অনুশীলন, শৃঙ্খলা এবং মানসিক দৃঢ়তা। আপনার স্বপ্ন পূরণের পথে শারীরিক সক্ষমতার পাশাপাশি মানসিকভাবে শক্তিশালী থাকাটাও জরুরি। প্রতিটি মুহূর্তে নিজের ওপর বিশ্বাস রাখতে হবে।

বাংলাদেশ পুলিশের আটি রেঞ্জের ৬৪টি জেলায় নির্ধারিত স্থানে এ পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। সাধারণত কয়েকটি ধাপে এ পরীক্ষা হয়। তার মধ্যে থাকছে শারীরিক পরীক্ষা, লিখিত পরীক্ষা ও মৌখিক পরীক্ষা। চলুন জেনে নেওয়া যাক কীভাবে প্রতিটি ইভেন্টের জন্য নিজেকে প্রস্তুত করবেন এবং সফলতা অর্জন করবেন।

শারীরিক পরীক্ষা: শারীরিক পরীক্ষার জন্য নির্ধারিত তারিখ, সময় ও স্থানে দৌড়, রোপিং ও জাম্পিং ইত্যাদি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে হবে। এ পরীক্ষাটাও আবার কয়েকদিনে দিতে হবে।

প্রথম দিন: শারীরিক মাপ ও কাগজপত্র যাচাই

শুরুর দিনই আপনার উচ্চতা, ওজন এবং বুকের মাপ নেওয়া হবে। এর পাশাপাশি কাগজপত্র যাচাই প্রক্রিয়া সম্পন্ন হবে। আপনার শারীরিক ফিটনেস যদি এই পরীক্ষার মাপকাঠির সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ না হয়, তবে আপনি পরবর্তী রাউন্ডে যেতে পারবেন না।

দ্বিতীয় দিন: শারীরিক সক্ষমতার পরীক্ষা

প্রথম রাউন্ড: দৌড় (২০০ মিটার)

ছেলেদের জন্য ২৮ সেকেন্ডে ২০০ মিটার এবং মেয়েদের জন্য ৩৪ সেকেন্ডে ২০০ মিটার দৌড়। এই দৌড়ের জন্য শরীরের চর্চা ও গতির সঠিক ভারসাম্য প্রয়োজন। নিয়মিত দৌড়ের অনুশীলন এবং শ্বাসপ্রশ্বাসের নিয়ন্ত্রণ আপনাকে সেরা সময়ের মধ্যে দৌড় শেষ করতে সাহায্য করবে।

দ্বিতীয় রাউন্ড: পুশ আপ

ছেলেদের ৩৫ সেকেন্ডে ১৫টি পুশ আপ এবং মেয়েদের ৩০ সেকেন্ডে ১০টি পুশ আপ করতে হবে। এই ইভেন্টে আপনার কাঁধ ও বাহুর শক্তি পরীক্ষিত হবে। প্রতিদিন পুশ আপ করার অনুশীলন করে প্রয়োজনীয় গতি এবং ধৈর্য ধরে রাখুন।

তৃতীয় রাউন্ড: লং জাম্প

ছেলেদের জন্য কমপক্ষে ১০ ফিট এবং মেয়েদের জন্য কমপক্ষে ৬ ফিট। এই ইভেন্টে আপনার শরীরের নিম্নাংশের শক্তি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। নিয়মিত স্কোয়াট এবং জাম্প অনুশীলন করে এই ইভেন্টে সফল হওয়ার সুযোগ তৈরি করুন।

চতুর্থ রাউন্ড: হাই জাম্প

ছেলেদের জন্য ৩ দশমিক ৫ ফিট উচ্চতা এবং মেয়েদের জন্য ২ দশমিক ৫ ফিট উচ্চতা। উচ্চতার এই চ্যালেঞ্জ অতিক্রম করতে পায়ের গতি ও স্থিতিস্থাপকতা বাড়ানো জরুরি। প্রতিদিন একটু একটু করে উচ্চতা বাড়ানোর চেষ্টার মাধ্যমে নিজেকে প্রস্তুত করতে শিখুন।

তৃতীয় দিন: সহনশীলতা ও শারীরিক শক্তির চূড়ান্ত পরীক্ষা

পঞ্চম রাউন্ড: দীর্ঘ দৌড়

ছেলেদের জন্য ১৬০০ মিটার দৌড় ৬ মিনিট ৩০ সেকেন্ডে এবং মেয়েদের জন্য ১০০০ মিটার ৬ মিনিট ৩০ সেকেন্ডে।

এই দীর্ঘ দূরত্বের দৌড়ে আপনাকে শারীরিক এবং মানসিকভাবে প্রস্তুত থাকার প্রমাণ দিতে হবে। নিয়মিত দৌড় অনুশীলন এবং স্ট্যামিনা বাড়ানোই এই পরীক্ষায় সফল হওয়ার উপায়।

ষষ্ঠ রাউন্ড: টায়ার ড্র্যাগিং

ছেলেদের জন্য ১৫০ পাউন্ড টায়ার ৩০ ফিট দূরত্ব টানা এবং মেয়েদের জন্য ১১০ পাউন্ড টায়ার ২০ ফিট দূরত্ব টানা। এই পরীক্ষায় আপনার শক্তি ও ধৈর্যের সংমিশ্রণ হবে সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। পেশির গঠনের জন্য নিয়মিত ভারোত্তোলন অনুশীলন করুন।

সপ্তম রাউন্ড: রোপ ক্লাইম্বিং

ছেলেদের জন্য কমপক্ষে ১২ ফিট এবং মেয়েদের জন্য ৮ ফিট। রোপ ক্লাইম্বিংয়ের জন্য শরীরের উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন শক্তি ও নিয়ন্ত্রণ প্রয়োজন। প্রতিদিন নিয়ম করে এই অনুশীলন করলে পরীক্ষার দিন সহজেই এই উচ্চতা অতিক্রম করতে পারবেন।

যে যে কাগজপত্র সঙ্গে নিতে হবে পুলিশ কনস্টেবল নিয়োগের প্রথম দিন-

> অনলাইন থেকে অ্যাডমিটকার্ড ২ কপি
> এসএসসি অথবা সমমান পরীক্ষার মূল সনদপত্র
> সর্বশেষ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে প্রশংসাপত্র
> নিজ এনআইডি কার্ড। তবে যাদের এনআইডি নেই তারা জন্মনিবন্ধন কার্ড নেবেন।
> মা অথবা বাবার এনআইডি কার্ড
> ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান কতৃক নাগরিকত্ব সনদপত্র (চেয়ারম্যান সার্টিফিকেট)
> স্কুলের প্রধান শিক্ষক থেকে চারিত্রিক সনদপত্র
> বাবা অথবা মা এবং ইউনিয়ন চেয়ারম্যান স্বাক্ষরিত অবিবাহিত সনদপত্র
> বাবা অথবা মায়ের স্বাক্ষরিত অভিভাবকের সম্মতিপত্র
> আপনার কোটা থাকলে কোটার সনদপত্র এবং সব অরিজিনাল কাগজপত্র
> সরকারি গেজেটেড কর্মকর্তা কতৃক সত্যায়িত পাসপোর্ট সাইজের ৩ কপি ছবি

লক্ষ্য রাখুন: এখানে যেসব কাগজপত্রের কথা বলা হয়েছে, সব কাগজপত্রের অরিজিনাল কপি মাঠে নিয়ে যাবেন। এবং সব কাগজপত্রের মূলকপি এবং ফটোকপি করে সরকারি গেজেটেড কর্মকর্তা কর্তৃক সত্যায়িত করে নেবেন। কারণ প্রথম দিন বাছাই পর্বে যদি আপনি উত্তীর্ণ হন, তখন আপনার সব কাগজপত্র পরীক্ষা বোর্ড নিয়ে নেবেন। আপনি যদি চূড়ান্তভাবে পাস করেন, তখন এই কাগজপত্রগুলোর সত্যায়িত ফটোকপি লাগবে।

লিখিত পরীক্ষা: শারীরিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার পর এক ঘণ্টা ৩০ মিনিটের ৪০ নম্বরের লিখিত পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে হবে (ন্যূনতম ৪৫% মার্কপ্রাপ্তদের উত্তীর্ণ বলে গণ্য করা হবে)।

লিখিত পরীক্ষার প্রস্তুতি: লিখিত পরীক্ষার জন্য বীজগণিত, পার্টিগণিত, বাংলা থেকে ইংরেজিতে অনুবাদ, ইংরেজি থেকে বাংলায় অনুবাদ, বাংলা গ্রামার, বাংলা রচনা, মুক্তিযুদ্ধ, বাংলাদেশ ও সাম্প্রতিক বিষয়ের ওপর গুরুত্ব দিন। বিশেষ করে ইংরেজি ও গণিতের ওপর জোর দিন।

মনস্তাত্ত্বিক ও মৌখিক পরীক্ষা: লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার পর ২০ নম্বরের মনস্তাত্ত্বিক ও মৌখিক পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে হবে।

মনস্তাত্ত্বিক ও মৌখিক পরীক্ষার প্রস্তুতি: মৌখিক পরীক্ষার ক্ষেত্রে সাধারণ জ্ঞানের ওপর গুরুত্ব দিন। সাধারণ জ্ঞানের জন্য বাজার থেকে ভালো মানের যে কোনো সাধারণ জ্ঞানের বই সংগ্রহ করুন ও পড়তে শুরু করুন। নিজ জেলা ও বিভাগ সম্পর্কে ধারণা রাখুন। পাশাপাশি চোখ রাখুন সমসাময়িক বিষয়াবলির ওপর। মৌখিক পরীক্ষা দিতে পরিচ্ছন্ন ও পরিপাটি পোশাকে আসুন।

লিখিত, মনস্তাত্ত্বিক ও মৌখিক পরীক্ষায় প্রাপ্ত নম্বরের ভিত্তিতে মেধাক্রম অনুযায়ী প্রাথমিকভাবে নির্বাচিত করা হবে। আপনার একটি সুন্দর ভবিষ্যৎ গড়তে একটু অধ্যবসায় তো করতেই হবে। তাই আসন্ন পরীক্ষার আগে আজ থেকে শুরু করুন আপনার একাগ্রচিত্তে পড়াশোনা। মাত্র কয়েকটা দিন নিয়মিত পড়াশোনা করলে অবশ্যই সুফল পাওয়া সম্ভব।

এমআইএইচ

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।