বিসিএসের পুরো জার্নিটা উপভোগ করছি: ইমাম হোসেন জ্যোতি

আনিসুল ইসলাম নাঈম
আনিসুল ইসলাম নাঈম আনিসুল ইসলাম নাঈম , ফিচার লেখক
প্রকাশিত: ০২:১৮ পিএম, ২৬ এপ্রিল ২০২৪

মো. ইমাম হোসেন জ্যোতি ৪৩তম বিসিএসে কৃষি ক্যাডারে সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েছেন। তিনি খুলনা জেলার ফুলতলা উপজেলার সন্তান। শৈশব থেকেই ছিলেন চঞ্চল প্রকৃতির। স্কুলজীবনে বন্ধু-বান্ধব নিয়ে খেলাধুলাসহ যাবতীয় কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করতেন। তবে পড়াশোনাও চালিয়েছেন সমানতালে। তিন ভাই-বোনের মধ্যে জ্যোতি সবার বড়। তিনি আব্দুল লতিফ মেমোরিয়াল মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে বিজ্ঞান বিভাগে এসএসসিতে জিপিএ-৫ পান। ফুলতলা মোজাম মহলদার কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করেন। এরপর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কৃষি বিভাগে সিজিপিএ ৩.৫৫ পেয়ে স্নাতক পাস করেন।

সম্প্রতি জাগো নিউজের সঙ্গে তিনি ৪৩তম বিসিএস জয়, ক্যারিয়ার পরামর্শ ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে কথা বলেছেন। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন আনিসুল ইসলাম নাঈম—

জাগো নিউজ: ৪৩তম বিসিএসে কৃষি ক্যাডার পেয়েছেন, আপনার অনুভূতি কেমন?
মো. ইমাম হোসেন জ্যোতি: আমি সবকিছুর দ্রুত ফলাফল চাই এবং আমার এক্সেপটেশন অনেক বেশি। ভাইভা দেওয়ার পর ওভারঅল কেমন এক্সাম দিলাম, মার্কস রেঞ্জ কেমন, কী ক্যাডার পাওয়া উচিত—এগুলো না ভেবে দোয়া করতাম যেন ক্যাডার লিস্টে আমার নাম থাকে। আল্লাহর কাছে শুকরিয়া যে ক্যাডার লিস্টে আমার রোল নম্বর আছে। এই দীর্ঘ জার্নিতে ক্যাডার হতে পরিশ্রম এবং ভাগ্য; দুটোরই প্রয়োজন ছিল। কৃষি সাবজেক্টিভ পরীক্ষা সর্বোচ্চ ভালো দিয়ে কৃষি ক্যাডার পেয়েছি—এটা ভাবতেও দারুণ। যারা আমার শুভাকাঙ্ক্ষী ছিলেন, তাদের দীর্ঘসময় পরে সুসংবাদ দেওয়ার অনুভূতি অবর্ণনীয়! উৎকণ্ঠা নিয়ে রেজাল্টের অপেক্ষা থেকে রেজাল্ট শীটে নিজ রোল দেখা পর্যন্ত সময়টার চিন্তা করতেও ভালো লাগে। সবমিলিয়ে এখনো পুরো জার্নিটা উপভোগ করছি।

জাগো নিউজ: বিসিএসের স্বপ্ন দেখেছেন কখন থেকে?
মো. ইমাম হোসেন জ্যোতি: আমি সব সময় অলরাউন্ডার থাকতে পছন্দ করি। মানে সব কিছুতেই এক্সপার্ট থাকব এমন একটা স্পৃহা কাজ করে। ক্লাসমেটদের বিসিএস ক্রেজ দেখে ইচ্ছা না জাগলেও মনে হতো যে পড়া উচিত। সম্ভবত থার্ড ইয়ারে ৩৬তম বিসিএস ক্যাডারদের সংবর্ধনায় গিয়ে খুব বেশি প্রভাবিত হই। শেষবর্ষের প্রথমদিকে আমার খুবই কাছের বন্ধুর বিসিএস প্রিপারেশন নেওয়া দেখে এবং তার সাথে ক্যারিয়ার সংক্রান্ত আলোচনা করে মনে হলো বিসিএসের মাধ্যমে আমার সামর্থ কাজে লাগাতে পারব। তাই বিসিএস নাকি বাইরের দেশে স্কলারশিপ নিয়ে রিসার্চ—এই দুইয়ের মাঝে দ্বিধা-দ্বন্দ্বে ভুগতে থাকলেও দুটো ক্যারিয়ারের প্রিপারেশন সমানতালে নেওয়া শুরু করি। আর সেভাবেই শুরু হয় অগোছালো তবে ইনফরমেটিভ পড়াশোনা।

জাগো নিউজ: বিসিএস যাত্রার গল্প শুনতে চাই, প্রস্তুতি নিয়েছেন কীভাবে?
মো. ইমাম হোসেন জ্যোতি: বিসিএসের এই দীর্ঘযাত্রায় প্রতিটা মুহূর্ত অনিশ্চিত। আমি যখন পড়া শুরু করি; তখন অনেকটা দেরি হয়ে যায় ৪১তম বিসিএসে অংশগ্রহণে সন্তোষজনক প্রস্তুতির জন্য। প্রথম থেকেই বিসিএস প্রস্তুতির জন্য সহায়ক হিসেবে ছিল ফেসবুকের বিভিন্ন গ্রুপে পোস্ট করা। পাশাপাশি পূর্বের ক্যাডারপ্রাপ্ত অগ্রজদের দিকনির্দেশনা। যেহেতু আমি কোচিং করিনি, তাই আমার বন্ধুই ছিল মূলত আমার মেন্টর। প্রয়োজনীয় পরামর্শ, বই, নোট, রুটিন সবকিছুই তার থেকে সহায়তা নিতাম। স্নাতকের শেষ ছয়মাস ক্যাম্পাস লাইফে ডেইলি এক ঘণ্টা গ্রুপ স্টাডি, রুমে রুটিন করে অল্প করে পড়ালেখা শুরু করি। কঠিন বিষয়গুলো গুগল, ইউটিউব ব্যবহার করে নিজে নিজে সমাধান করতাম। পড়াশোনা ভিত্তিক যে কোনো সমস্যা সমাধানে আমার প্রায়োরিটি ছিল ফেসবুকের বিভিন্ন বিসিএস ভিত্তিক গ্রুপ, পেজ, অগ্রজদের পোস্টগুলো ফলো করা। বিসিএস সম্পর্কিত প্রয়োজনীয় পোস্ট, পিডিএফ সেভ করে রাখা একটা অভ্যাসে পরিণত হয়েছিল। অনলাইনে পত্রিকা পড়া, ইউটিউবে সংবাদ দেখা, গুগলে তথ্য খোঁজা সবকিছুই ছিল বিসিএস প্রস্তুতিকে কেন্দ্র করে। তবে মূল প্রস্তুতি শুরু হয় করোনাকালে। তখন শুধু প্রিলিভিত্তিক পড়াশোনা করেছি প্রচুর। যার ফলাফল ছিল বিভিন্ন চাকরির পরীক্ষায় প্রিলি উত্তীর্ণ হওয়া। এরপর ৪১তম লিখিত পরীক্ষার প্রস্তুতি নেওয়া শুরু করি। তবে সেটা সময় স্বল্পতার জন্য একটু কঠিনই ছিল। তাই ৪৩তম বিসিএস লিখিত পরীক্ষার জন্য দৈনিক গড়ে ১৪ ঘণ্টা পড়াশোনা করতে হয়েছে। ৪৩তম ভাইভার আগে গড়ে দৈনিক ৪-৫ ঘণ্টা পড়াশোনা করেছি। এই সময়গুলোতে আমার কাজ ছিল পড়া, নামাজ এবং ঘুমানো। তবে অবসরে অন্যান্য শখের কাজগুলো করতাম একঘেয়েমি দূর করতে।

জাগো নিউজ: আড়াল থেকে কেউ অনুপ্রেরণা জুগিয়েছেন?
মো. ইমাম হোসেন জ্যোতি: হ্যাঁ। আমার সবথেকে বড় অনুপ্রেরণা ছিল ‘আইডেনটিটি’ এবং ‘ইগো’ শব্দ দুটো! এ দুটো শব্দের পারফেক্ট ব্যবহার করার জন্য হলেও আমাকে বিসিএসে সফল হতে হবে। এমন একটা প্রেরণা নিজেই তৈরি করেছিলাম। যে কারও সফলতা দেখলে আমার কখনোই হিংসা হতো না। বরং মনে হতো আমিও তার মতো চেষ্টা করে সফল হতে পারি। ব্যক্তি হিসেবে শুভাকাঙ্ক্ষীরা অনুপ্রেরণা জুগিয়েছেন সাহস দিয়ে এবং মানসিক ভাবেও। এ ক্ষেত্রে আমার বন্ধুর কথা না বললেই নয়। সে আড়ালেই থাকুক। আল্লাহর কাছে শুকরিয়া এবং শুধু এতটুকু স্বীকার করি, সব সময় আমার এই সাফল্যের পেছনে তার অবদান আমার পরিশ্রমের চাইতেও বেশি।

জাগো নিউজ: নতুনরা বিসিএসের জন্য কীভাবে প্রস্তুতি নেবেন?
মো. ইমাম হোসেন জ্যোতি: বিসিএস পরিশ্রম, ধৈর্য, ভাগ্য, আর্থিক অবস্থাসহ সবকিছুর একটা প্যাকেজ। সবাই কী কী বই পড়া লাগবে, কীভাবে টপিক পড়তে হবে; এগুলো নিয়ে আলোচনা করেন। এ ক্ষেত্রে আমি খুবই সহজে বলি যে প্রশ্ন অ্যানালাইসিস করুন, দুর্বলতা কাটান এবং বইয়ের প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত রুটিন করে পড়ুন। পাশাপাশি মডেল টেস্ট দিন। কিন্তু পড়া শুরুর আগে প্রয়োজন পড়ার পরিবেশ ঠিক রাখা। এটা নিয়ে আলোচনা কম হয়। তাই নতুনদের জন্য আমার প্রথম পরামর্শ—আগে নিজের সক্ষমতা যাচাই করে তারপর প্রস্তুতি শুরু করা। কোন সাবজেক্টে দুর্বল, কোনটা স্ট্রং জোন, কোন বিষয়টা পড়তে ভালো বা খারাপ লাগে—এ অ্যানালাইসিসটা আগে করে নেওয়া উচিত। শর্টকাট বা ক্রাশ কোর্সের লোভে না পড়ে প্রথম থেকেই পূর্ণপ্রস্তুতি নেওয়া ভালো। বিসিএস মূলত বাংলাদেশের সব রকম চাকরি প্রস্তুতির রুট। তাই ডিটেইলস পড়া কাজে লাগিয়ে দ্রুত চাকরি পাওয়া সম্ভব।

দ্বিতীয় পরামর্শ, সময় বিবেচনা করে শুধু বিসিএসে লেগে না থেকে সুইটেবল জবগুলোতে পরীক্ষা দেওয়া। বেকার থাকার চাইতে অন্তত জবে থাকলে হতাশা কম লাগবে। কারণ বিসিএসের রিটেন ফলাফল প্রকাশে এত বেশি সময় মানসিকতার ওপর নেতিবাচক প্রভাব রাখে। তৃতীয় পরামর্শ, বই বা কোচিং যেটাই হোক না কেন প্রস্তুতির ধারাবাহিকতা রাখা। অর্থাৎ কোচিং করলে পুরো সময় কোচিং ফলো করা। বাসায় পড়লে বইয়ের পুরোটা গুছিয়ে পড়তে থাকা। চতুর্থ পরামর্শ, প্রস্তুতিকালীন সময় নষ্ট করে এমন সঙ্গ ও নেতিবাচক ধারণা রাখে এমন আত্মীয়, বন্ধু-বান্ধব থেকে দূরে থাকা। পঞ্চম পরামর্শ, মানসিক চাপ এড়ানো। অর্থাৎ পড়ার ফাঁকে নিজের ভালো লাগার কাজ করা, কাছের মানুষদের সাথে কথা বলা, পরামর্শ নেওয়া; এগুলো চাকরিপ্রার্থীর স্ট্রেস কমিয়ে দেবে। শেষ পরামর্শ হচ্ছে, এই বেকার সময়টায় নম্র আচরণ করা। কেউ কটু কথা বলবে, সম্ভাবনাকে নষ্ট করার চেষ্টা করবে, প্রশংসার নামে অপদস্ত করবে। তাই চুপচাপ থেকে নিজেকে শান্ত রাখা উচিত।

জাগো নিউজ: আপনার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কী?
মো. ইমাম হোসেন জ্যোতি: আমার বর্তমান ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা হচ্ছে—একটি সফল অর্গানিক অ্যাগ্রো ফার্ম করা। এ ছাড়া কৃষি ক্যাডারের দায়িত্বগুলো স্টাডি করছি। যেমন- বর্তমান সরকারের কৃষি বিষয়ক ভিশন, মিশন, উন্নত দেশের কৃষি সার্ভিস নিয়ে পড়াশোনা করছি; যেন কর্মক্ষেত্রে সর্বোচ্চ দিতে পারি। কৃষি প্রধান এই দেশের সম্ভাবনা অনেক। এই সম্ভাবনা উন্মোচনে আমার দায়িত্বে যেন কমতি না থাকে—সেটাই নিশ্চিত করবো।

এসইউ/জিকেএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।