বিসিএস জয়

প্রতিটি বিষয়ে ভালোভাবে প্রস্তুতি নিতে হবে: আশেক আহমেদ

আনিসুল ইসলাম নাঈম
আনিসুল ইসলাম নাঈম আনিসুল ইসলাম নাঈম , ফিচার লেখক
প্রকাশিত: ০৩:৪৮ পিএম, ১৭ মার্চ ২০২৪

আশেক আহমেদ ৪৩তম বিসিএসে কর ক্যাডারে সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েছেন। তিনি লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার ঘনেশ্যামপুর গ্রামের সন্তান। তার বাড়ির পাশেই ছিল স্কুল। সেই সুবাদে ছেলেবেলার বেশিরভাগ সময়ই কেটেছে স্কুলের আঙিনায়। স্কুলে নিয়মিত বিভিন্ন সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতা ও খেলাধুলায় অংশগ্রহণ করতেন। তিনি সোমপাড়া উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি এবং ঢাকা সিটি কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করেন। এরপর নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইনফরমেশন অ্যান্ড কমিউনিকেশন ইঞ্জিনিয়ারিং (আইসিই) বিভাগ থেকে স্নাতক সম্পন্ন করেন।

সম্প্রতি জাগো নিউজের সঙ্গে তিনি ৪৩তম বিসিএস জয়, ক্যারিয়ার পরামর্শ ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে কথা বলেছেন। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন আনিসুল ইসলাম নাঈম—

জাগো নিউজ: ৪৩তম বিসিএসে কর ক্যাডার পেয়েছেন, অনুভূতি কেমন?
আশেক আহমেদ: বাবার স্বপ্ন আর মায়ের দোয়া, আমার বিসিএসের পথচলাকে অনেকখানি সহজ করেছে। কখনোই মনে হয়নি যে ক্যাডার হতে পারবো না। তবে এই পথচলায় ব্যর্থতাও সঙ্গী হয়েছিল। মা প্রতিদিন তাহাজ্জুদের নামাজে আমার জন্য দোয়া করতেন। ব্যক্তিগত জীবনে আমার কথা ও কাজে সততা ছিল। তাই মা খুব করে চাইতেন আমি যেন বিসিএস ক্যাডার হই। আমি ৪৩তম বিসিএস পরীক্ষায় ট্যাক্স ক্যাডারে সুপারিশপ্রাপ্ত হই। মহান আল্লাহর কাছে কৃতজ্ঞ, দেশের সেবা করার এই সুবর্ণ সুযোগ পাওয়ার জন্য।

জাগো নিউজ: বিসিএসের স্বপ্ন দেখেছিলেন কখন থেকে?
আশেক আহমেদ: স্কুলজীবন থেকেই স্বপ্ন ছিল বিসিএস ক্যাডার হওয়ার। স্কুলের বার্ষিক ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতায় প্রশাসনের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তাদের কাছ থেকে পুরস্কার গ্রহণের সুযোগ হয়েছিল। তখন থেকেই স্বপ্ন দেখতাম একদিন আমিও এভাবে পুরস্কার দেবো। আমার স্কুলের নাম সোমপাড়া উচ্চ বিদ্যালয়। বাবা মরহুম মো. নাদরেজ্জামান (বিএসসি) দীর্ঘকাল এই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ছিলেন। ছোটবেলা থেকেই স্যারদের কথা বাবার মুখে শুনতাম। সেই থেকে বিসিএস ক্যাডার হওয়ার স্বপ্ন মনের কোণে ছিল।

জাগো নিউজ: বিসিএস যাত্রার গল্প শুনতে চাই, প্রস্তুতি কীভাবে নিয়েছেন?
আশেক আহমেদ: স্নাতক শেষ করার পরেই মূলত বিসিএস প্রস্তুতি শুরু করেছিলাম। কোভিডের সময়টাতে বিসিএসের পড়াশোনা শুরু করি। পড়া মুখস্থ না করে চেষ্টা করতাম প্রতিটা ঘটনার ব্যাকগ্রাউন্ড জেনে নিতে। বিশেষ করে, বাংলাদেশ ও আন্তর্জাতিক বিষয়াবলির ক্ষেত্রে। যার ফলে প্রিলি ও রিটেনের প্রস্তুতিতে তেমন একটা বেগ পেতে হয়নি। এ ছাড়া ভালো লাগা থেকেই আমি প্রচুর টক শো, ডকুমেন্টারি দেখতাম। দেশীয় ও আন্তর্জাতিক ব্যক্তিত্বদের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অনুসরণ করতাম। তাদের উদ্ধৃতি লিখিত পরীক্ষার খাতায় লেখার চেষ্টা করতাম। আন্তর্জাতিক ঘটনা প্রবাহ, খবরের কাগজ মনোযোগ দিয়ে পড়তাম। যা আমার প্রিলি ও লিখিত পরীক্ষায় ভালো করতে সহায়তা করেছে।

আরও পড়ুন

জাগো নিউজ: আড়াল থেকে কেউ অনুপ্রেরণা জুগিয়েছেন?
আশেক আহমেদ: পারিবারিক ভাবেই আমাদের পরিবারে সবাই শিক্ষাকে গুরুত্ব দিয়ে থাকেন। আমার বাবা প্রধান শিক্ষক ছিলেন এবং মা ছিলেন আমাদের বাসার শিক্ষক। বাবার শাসন ও মায়ের দোয়ায় আমরা পাঁচ ভাই প্রতিষ্ঠিত হয়েছি। বড় ভাই আইসিটি মন্ত্রণালয়ের অ্যাসিস্ট্যান্ট প্রোগ্রামার, মেজো ভাই ব্যবসায়ী, সেজো ভাই চার্টার্ড অ্যাকাউন্টেন্ট এবং ছোট ভাই ফার্মাসিতে অধ্যয়নরত। বাবার আদর্শ, সততা, দেশ ও মানুষের প্রতি ভালোবাসাই আমার অনুপ্রেরণার মূল উৎস।

জাগো নিউজ: নতুনরা বিসিএসের জন্য কীভাবে প্রস্তুতি নেবেন?
আশেক আহমেদ: নতুনদের প্রথমেই বলবো, পড়াশোনাকে উপভোগ করতে হবে। আপনি যখন কোনো কিছু জানার আগ্রহ নিয়ে পড়বেন, সেটি আপনার মনে থাকবে। যেমন সংবিধান যখন পড়বেন; তখন নাগরিক হিসেবে আপনার দায়িত্ব ও কর্তব্য জানবেন। আপনার অধিকারগুলো জানবেন, সরকারের কার্যাবলি, রাষ্ট্রের মূলনীতি সম্পর্কে জানতে পারবেন। এসব বিষয় যখন আগ্রহ নিয়ে পড়বেন, মনে রাখা সহজ হবে, পরীক্ষায়ও লিখতে পারবেন। বিসিএসের বিগত বছরের প্রশ্ন বিশ্লেষণ আপনার প্রস্তুতিকে কার্যকর হতে সাহায্য করবে। কোন টপিককে গুরুত্ব দেবেন, আর কোন টপিক বাদ দেবেন। তা বুঝতে পারবেন বিগত বছরের প্রশ্ন বিশ্লেষণের মাধ্যমে। বাংলা ও ইংরেজি সাহিত্যের ক্ষেত্রে প্রতিটি অপশন ভালো করে পড়া উচিত। কারণ এটি গুরুত্বপূর্ণ সাহিত্যকর্ম বলেই অপশন হিসেবে দেওয়া হয়েছে।

এ ছাড়া পিএসসির নন-ক্যাডার পরীক্ষা, ব্যাংক ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের চাকরির পরীক্ষা এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্ন অনুশীলন করলে আপনার কনফিডেন্স বাড়বে। এমনকি প্রিলিতে সরাসরি কমনও পেতে পারেন।
প্রতিটি বিষয়ে ৩-৪টা বই না পড়ে ২-১টা বই ২-৩ বার ভালো করে পড়লে পড়াগুলো মনে রাখতে সহজ হবে। প্রতিটি বিষয়ে ভালোভাবে প্রস্তুতি নিতে চেষ্টা করবেন। কোনো একটি বিষয় বা টপিক সম্পূর্ণ বাদ না দিয়ে যতখানি সম্ভব পড়ে নেওয়া উচিত। অনেক সময় সঠিক উওর না জেনেও সঠিক উত্তর খুঁজে নেওয়া যায়, বিশেষ করে প্রিলিতে। আপনি যদি ২-১টা অপশন বাদ দিতে পারেন তাহলে সঠিক উত্তর খুঁজে নেওয়া সহজ হয়। আমি ৪টা প্রিলি পরীক্ষায় পাস করি এবং প্রতিবারই পরীক্ষায় এই স্ট্রাটেজি অনুসরণ করি। যারা এখন অনার্স ১ম, ২য় ও ৩য় বর্ষে অধ্যয়নরত। তারা এখনই বিসিএসের বই না কিনে উপন্যাস, কবিতা, গল্প, প্রবন্ধ, ইতিহাস, রাজনীতি সম্পর্কিত বইগুলো পড়তে পারেন। এসব বই আপনার শব্দভান্ডারকে সমৃদ্ধ করবে এবং চিন্তা-ভাবনাকে যুক্তিযুক্ত করবে। এ ছাড়া অষ্টম, নবম-দশম শ্রেণির গণিত, ইংরেজি ও বাংলাদেশ বিষয়াবলি বই পড়তে পারেন কিংবা কাউকে পড়াতে পারেন।

জাগো নিউজ: আপনার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কী?
আশেক আহমেদ: সততা ও দক্ষতার সঙ্গে দেশ ও মানুষের সেবা করাই আমার লক্ষ্য। ২০৪১ সালে স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে নিজেকে একজন দক্ষ কারিগর হিসেবে গড়ে তুলতে চাই। সেই সাহস ও যোগ্যতা অর্জনে সবার কাছে দোয়া প্রত্যাশী।

এসইউ/জিকেএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।