সংবাদপত্রের ফিচার পাতায় যেভাবে লিখবেন

জাগো নিউজ ডেস্ক
জাগো নিউজ ডেস্ক জাগো নিউজ ডেস্ক
প্রকাশিত: ০৩:১৬ পিএম, ১৩ মার্চ ২০২৪

মুহাম্মদ শফিকুর রহমান

বাংলাদেশে এখন সংবাদপত্রের সংখ্যা বেশি। ঢাকা থেকেই অনেকগুলো সংবাদপত্র প্রকাশিত হয়। সংবাদপত্রগুলোর ফিচার পাতায় দারুণ বৈচিত্র্য এসেছে। অধিকাংশ সংবাদপত্রে প্রায় সাতদিনই কোনো না কোনো বিষয়ে ফিচার পাতা রয়েছে। সংবাদপত্র অনুযায়ী কিছুটা ভিন্নতাও আছে। কেউ অর্ধেক পাতা, কেউবা পুরো পাতা করেন। অনলাইনে ফিচার বিভাগ আছে। এই ফিচার পাতা বা বিভাগগুলোতে নতুনদের লেখার সুযোগ আছে। কখনো কখনো হাতখরচের টাকাও আয় করা যায়।

লেখালেখিতে হাতপাকানো, অবসর সময় আনন্দে কাটানোর জন্য ফিচার পাতায় লেখা একটি ভালো উপায়। এবার আসা যাক, আপনি কী লিখবেন, কীভাবে লিখবেন? যে বিভাগ, পাতা বা ক্রোড়পত্রে আপনি লিখতে চান; সেটি ভালো করে পড়তে হবে। তারা কী ধরনের লেখা, কত শব্দের লেখা ছাপেন—এসব বুঝতে হবে। প্রয়োজনে ওই বিভাগ বা ক্রোড়পত্রের বিগত দুই বছরের সবগুলো সংখ্যা পড়তে পারেন। ই-পেপারে এটি একদম ফ্রি পড়া সম্ভব।

পাতার চরিত্র না বুঝে লিখতে যাওয়া ঠিক হবে না। তাই লেখার জন্য সমসাময়িক কিংবা এমন বিষয় খুঁজে বের করুন, যার প্রতি মানুষের তীব্র আকর্ষণ আছে। বিষয়টি চমকপ্রদ হলে লেখা অগোছালো হলেও বিভাগীয় সম্পাদক কিংবা ফিচার সম্পাদক তা ঠিকঠাক করে নেন। আবার এমন বিষয়, যার প্রতি মানুষের আকর্ষণ তীব্র। কিন্তু সবাই ওই বিষয়ে লিখে ফেলেছেন। তাহলে ওই বিষয়ে স্টাডি করে এমন কিছু তথ্য খুঁজে বের করুন। যা এখনো কেউ লিখতে পারেননি।

ফিচার কোন বিষয়ের ওপর লিখবেন, সেটি সঠিকভাবে নির্ধারণ করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ভুলে ভরা বা আকর্ষণ নেই—এমন বিষয়ে বারবার লেখা পাঠালে বিভাগীয় সম্পাদকের কাছে গ্রহণযোগ্যতা হারাবেন। আপনার লেখা পেলেও তিনি তা কম গুরুত্ব দিয়ে দেখতে পারেন।

ফিচার হার্ড নিউজ নয়। ফিচার হচ্ছে গল্প। পার্থক্য হলো গল্পে কল্পনা থাকে। কিন্তু ফিচারে সব সত্য লিখতে হয়। পাঠক পড়া শুরু করে শেষ না করে উঠতে পারবেন না। পাঠককে ধরে রাখার ব্যাপারটা থাকা চাই। তাই ফিচারের শব্দ, গাঁথুনি, ধারাবাহিকতা, আবেগ—এসব ঠিকঠাক থাকতে হয়। হৃদয় ছুঁয়ে যাওয়ার মতো কিছু থাকলে খুব ভালো। ফিচার লিখতে গিয়ে ৩ পৃষ্ঠার রচনা লিখবেন না যেন।

আরও পড়ুন

গবেষণায় দেখা গেছে, ছোট ফিচার মানুষ বেশি পড়ে। প্যারা প্যারা করে লেখা ফিচার পাঠককে বেশি আকর্ষণ করে। পড়তে সুবিধা হয়। যে বিষয়েই লিখুন না কেন। সে বিষয়ে পড়াশোনা করা ভালো। তবে আবার কোনো ওয়েবসাইট থেকে এনে হবহু বসিয়ে দিবেন না। এই প্রবণতা অনেক নতুনদের মধ্যে দেখা যায়। যে ক্রোড়পত্রে লিখবেন বলে মনস্থির করেছেন। অন্য সংবাদপত্রে ওই বিষয়ে যে ক্রোড়পত্র ছাপা হয়, সেগুলো পড়বেন।

লেখা ৬০০ থেকে সর্বোচ্চ ৮০০ শব্দের মধ্যে রেখে তার মধ্যেই অল্প অল্প করে সব বিষয় থাকতে হবে। বড় লেখা অনেক সময় গতি হারিয়ে ফেলে। তথ্যে ভুল হতে পারে। আবার সাংঘর্ষিক ব্যাপার চলে আসাটা অসম্ভব কিছু নয়। এই যেমন, আপনি লিখলেন তার কোনো বড় ভাই নেই। আবার লেখার এক জায়গায় গিয়ে লিখলেন, তিনি তার বড় ভাইয়ের কাছে কাজ শিখেছেন।

যে বিষয়ে নিজে পরিষ্কার নন, তথ্যের সত্যতা সম্পর্কে সন্দিহান—তা কখনোই লিখবেন না। আপনি নিজে না বুঝলে পাঠক কীভাবে বুঝবে? প্রয়োজনে একেবারে মূল জায়গায় গিয়ে তথ্য সংগ্রহ করুন। উদাহরণ দিয়েই বলছি, ধরুন কেউ বললেন, বাংলাদেশে এই কাজ তিনি প্রথম করেছেন। প্রশ্ন হলো, এই প্রথম করার প্রমাণ কী? তিনি প্রথম দাবি করলেই আপনি প্রথম লিখতে পারেন না।

এ বিষয়ে ব্যাপক অনুসন্ধান করতে হবে। সরকারি বা বেসরকারি সংস্থায় ওই বিষয়ে কোনো তথ্য আছে কি না—সেটি খুঁজে বের করতে হবে। যদি দেখেন এসব কিছুই নেই। সঠিক তথ্য খুঁজে পাচ্ছেন না। তখন তার দাবিটি উল্লেখ করতে পারেন। দেশে এ বিষয়ে যারা সবচেয়ে বেশি সাফল্য অর্জন করেছেন। তাদের মধ্যে তিনি অন্যতম—এভাবেও লেখা যায়। কিন্তু আপনি নিশ্চিত না হয়ে নিজের বরাতে এটি লিখতে পারেন না।

লেখা শেষ। বারবার পড়ুন। কাটছাট করুন। ছোট বাক্য, সহজ শব্দে লেখার চেষ্টা করুন। জটিল শব্দ পরিহার করুন। পাঠক অভিধান নিয়ে আপনার ফিচার পড়তে বসবেন না।

লেখক: সিনিয়র ফিচার লেখক এবং অ্যাসিস্ট্যান্ট ম্যানেজার, সেলস অপারেশনস, ফেয়ার ডিস্ট্রিবিউশন লিমিটেড, ঢাকা।

এসইউ/জিকেএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।