বিসিএসে সেরা মেধাবীরা আপনার প্রতিদ্বন্দ্বী: আব্দুস সামাদ

আনিসুল ইসলাম নাঈম
আনিসুল ইসলাম নাঈম আনিসুল ইসলাম নাঈম , ফিচার লেখক
প্রকাশিত: ০৫:৪৯ পিএম, ১৭ জানুয়ারি ২০২৪

আব্দুস সামাদ আহমেদ ৪৩তম বিসিএসে কর ক্যাডারে সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েছেন। তার জন্ম ও বেড়ে ওঠা চাঁদপুর সদর উপজেলার বালিয়া ইউনিয়নে। সামাদ নিম্নবিত্ত পরিবারের সন্তান। একসময় বাবা ফার্মেসিতে ওষুধ বিক্রি করে সংসার চালাতেন। তখন অনেকটা সংগ্রাম করেই দিনযাপন করতে হতো। তবে পড়াশোনা থেকে ছিটকে পড়েননি। তিনি ২০১০ সালে বালিয়া আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয় থেকে জিপিএ-৪.৯৬ পেয়ে এসএসসি এবং ২০১২ সালে ফরক্কাবাদ ডিগ্রি কলেজ থেকে জিপিএ-৪.৯০ পেয়ে এইচএসসি পাস করেন। এরপর চাঁদপুর সরকারি কলেজের গণিত বিভাগ থেকে প্রথম শ্রেণিতে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পাস করেন।

সম্প্রতি জাগো নিউজের সঙ্গে তিনি ৪৩তম বিসিএস জয়, ক্যারিয়ার পরামর্শ ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে কথা বলেছেন। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন আনিসুল ইসলাম নাঈম—

জাগো নিউজ: ৪৩তম বিসিএসে ট্যাক্স ক্যাডার পেয়েছেন, অনুভূতি কেমন?
আব্দুস সামাদ আহমেদ: ফলাফল প্রকাশের সময় আমি বাইরে ছিলাম। অফিস থেকে সহকর্মীরা ফোন দিয়ে বলেন, ‘রেজাল্ট দিয়েছে। আপনার রেজিস্ট্রেশন নাম্বার বলেন।’ আমি দ্রুত অফিসে এসে রেজিস্ট্রেশন মিলিয়ে দেখি আমার রেজিস্ট্রেশনে রেজাল্ট আসেনি। পরে ভালো করে সব অ্যাডমিট চেক করে দেখি, আমি তাদের ৪১তম বিসিএসের রেজিস্ট্রেশন নাম্বার বলেছিলাম। এরপর ৪৩তমের রেজিস্ট্রেশন মিলিয়ে কর ক্যাডারের তালিকায় নিজের রোল দেখে খুবই এক্সাইটেড ছিলাম! এত এত চাকরিপ্রার্থীর মধ্যে পিএসসির চূড়ান্ত ফলাফল তালিকায় নিজের রোল খুঁজে পাওয়ার অনুভূতি ভাষায় প্রকাশ করার মতো নয়, এটি শুধুই অনুভব্য। রেজাল্টের খবর প্রথমে আমার পরিবারে জানাই। তারপর ব্যাংকের ব্রাঞ্চ ম্যানেজারকে জানাই।

আরও পড়ুন: আরও বিসিএস দেওয়ার সুযোগ আছে: চিশতিয়া পারভীন 

জাগো নিউজ: বিসিএসের স্বপ্ন দেখেছিলেন কখন থেকে?
আব্দুস সামাদ আহমেদ: আশেপাশের অনেকেই বিসিএস পরীক্ষা দিতেন। তাই তখন থেকেই অনার্স পাসের পর বিসিএস দেওয়ার একটা চিন্তা ছিল। কিন্তু বিসিএসের স্বপ্ন দেখা বা আমিও ক্যাডার হতে পারবো বা আমাকে বিসিএস ক্যাডার হতে হবে; এই বিশ্বাসটা করা শুরু করি মূলত কোভিডের সময় থেকে। সেই থেকে নিরন্তর ছুটে চলা।

জাগো নিউজ: বিসিএস যাত্রার গল্প শুনতে চাই, প্রস্তুতি কীভাবে নিয়েছেন?
আব্দুস সামাদ আহমেদ: আমার বিসিএসের যাত্রাটা অন্য সবার মতো পরিকল্পিত ছিল না। কোভিডের সময়টাতে কাজ, টিউশন সব হারিয়ে মোটামুটি বেকার হয়ে গেছিলাম। জীবনের কঠিনতম পরিস্থিতির মুখোমুখি হই সে সময়। তখনই সিদ্ধান্ত নিই, জীবন চালনার জন্য সাসটেইনেবল কিছু করতে হবে। সে ভাবনা থেকে হুট করেই সিদ্ধান্ত নিই বিসিএস দেবো। সেজন্য ৪১তম বিসিএসের পূর্বে আমি ২০২১ সালের জানুয়ারিতে ঢাকা চলে যাই এবং বিসিএসের প্রস্তুতি নিতে শুরু করি। মূলত ২১ সালটাই আমার ক্যারিয়ারের টার্নিং পয়েন্ট। প্রস্তুতির শুরু থেকে ম্যাথ ভালো পারতাম, তাই জার্নিটা সহজ হয়ে গেলো। বিসিএস প্রস্তুতিতে আমি প্রথম যে কাজটি করি তা হলো, ফোন থেকে ফেসবুক ও ইউটিউব দুটি আনস্টল করে দেই। একান্ত বোরিং লাগলে গুগল ক্রোমে ফেসবুকে ঢু মারতাম। আর পড়াশোনার ক্ষেত্রে আমার স্ট্র্যাটেজি ছিল অনেকটা ‘হিট অ্যান্ড রান স্ট্র্যাটেজি’। মানে যখন সময় পাই; তখনই পড়তে হবে। কোনো সময় নষ্ট করা যাবে না। রাতের সময় কোলাহল মুক্ত ছিল। তাই বেশিরভাগ সময় রাতেই পড়তাম। এ কৌশলেই পড়াশোনা করে ৪১তম প্রিলি মোটামুটি ভালো নাম্বার পেয়ে টিকে যাই। তারপর ভালো করে চেষ্টা করি রিটেনের জন্য। এর মধ্যেই রিটেন দিলাম আবার ৪৩তম এবং ৪৪তমও দিলাম। ৪১তমে শিক্ষা ক্যাডার পেলাম। সবশেষে ৪৩তম বিসিএসেও কর ক্যাডারে সুপারিশপ্রাপ্ত হলাম।

জাগো নিউজ: আড়াল থেকে কেউ অনুপ্রেরণা জুগিয়েছেন?
আব্দুস সামাদ আহমেদ: আড়াল থেকে সেই অর্থে অনুপ্রেরণা জোগানোর প্রয়োজন পড়েনি। কারণ কোভিড পরিস্থিতিই বুঝতে সাহায্য করেছে, আমাকে কী করতে হবে। তবে আমার পরিবার, দুই কাজিন শাহীন ও আদনান ভাই, বন্ধু আশরাফুল—এরা আমাকে সব সময় উৎসাহ দিয়েছে।

আরও পড়ুন: বিসিএসে লেগে থাকলে সফলতা আসবেই: বিপ্লব কুমার নন্দী 

জাগো নিউজ: নতুনরা বিসিএসের জন্য কীভাবে প্রস্তুতি নেবেন?
আব্দুস সামাদ আহমেদ: সাফল্যের মূলমন্ত্র হলো ‘লেগে থাকা’। যে লেগে থাকবে সে-ই সাফল্য পাবে। এই কম্পিটিশনটা একেবারে উন্মুক্ত একটা কম্পিটিশন, দেশের সেরা সেরা মেধাবী আপনার প্রতিদ্বন্দ্বী। আপনি যখন দশ কদম আগাচ্ছেন, আপনার প্রতিযোগিতারাও কিন্তু এগোচ্ছে। আপনি যখন বিরাম দেবেন; তখন প্রতিযোগিরা কিন্তু থেমে নেই। তাই ধারাবাহিকতা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আবার নতুনদের বেশিরভাগেরই একটি কমন প্রশ্ন থাকে, কী পড়বো? তাদের বলবো, শুরুতেই তাদের উচিত নিজের স্ট্রং জোন এবং উইক জোন চিহ্নিত করে উইক জোনে বেশি সময় দেওয়া। সম্ভব হলে প্রিলির সঙ্গে সঙ্গে পরিকল্পিত ভাবে রিটেনটাও এগিয়ে রাখা। আর ম্যাথ অবশ্যই শর্টকাট ভাবে না শেখা।

জাগো নিউজ: আপনার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কী?
আব্দুস সামাদ আহমেদ: আমার ৪৪তম বিসিএস এখনো বাকি আছে। তাই এটি ভালো করে শেষ করার ইচ্ছা আছে। এছাড়া ৪৩তম বিসিএসে নিয়োগ পাওয়ার পূর্বে আমার বর্তমান কর্মস্থল, জনতা ব্যাংকেই থেকে যাওয়ার প্ল্যান আছে। পাশাপাশি একজন সহকারী কর কমিশনার হিসেবে নিয়োগ পেলে দেশ ও জাতির সেবক হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠা করতে চাই।

এসইউ/জিকেএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।