বিসিএস জয়

বই-খাতার সামনে নিজেকে আটকে রেখেছি: গোলাম কিবরিয়া

তাসনিম আহমেদ তানিম
তাসনিম আহমেদ তানিম তাসনিম আহমেদ তানিম , শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় (শেকৃবি) প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০১:০৭ পিএম, ০২ জানুয়ারি ২০২৪

৪৩তম বিসিএসে বিভিন্ন ক্যাডারে সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েছেন ২ হাজার ১৬৩ জন। এতে প্রশাসন ক্যাডার পেয়েছেন শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শেকৃবি) ৭২তম ব্যাচের শিক্ষার্থী গোলাম কিবরিয়া নাঈম। তিনি বিসিএস যাত্রার গল্প শুনিয়েছেন জাগো নিউজকে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের জাগো নিউজের প্রতিনিধি তাসনিম আহমেদ তানিম—

জাগো নিউজ: আপনার শৈশব ও পড়াশোনার গল্প দিয়ে শুরু করতে চাই—
গোলাম কিবরিয়া নাঈম: ময়মনসিংহ জেলার ভালুকা থানার বগাজান গ্রামে আমার জন্ম। আমার বড় দুই ভাই ছিলেন আমার চেয়ে তিন এবং ছয় বছরের বড়। এক টেবিলেই সবাই পড়াশোনা করতাম। ছোট থেকেই শাসন-অনুপ্রেরণা সব কিছুই পেয়েছি ওই এক টেবিলেই। আমি প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পড়াশোনা করেছি ভালুকাতেই। ছোটবেলা থেকেই শিক্ষকদের আদর আর ভালোবাসা পেয়েছি। পঞ্চম শ্রেণিতে ট্যালেন্টপুলে ও এসএসসিতে গোল্ডেন এ প্লাস পাই। আর্থিক কষ্ট থাকলেও উচ্চমাধ্যমিকে বাবা ঢাকায় পড়াশোনা করিয়েছেন। নটর ডেম কলেজে ভর্তি পরীক্ষা দিয়ে চান্স পেয়ে যাই। কলেজেও ভালো রেজাল্টের পর রাজধানীর শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হই। সেখানেও স্নাতক চতুর্থ বর্ষে কৃতিত্বের জন্য ডীন’স অ্যাওয়ার্ড পাই। মাস্টার্সও করেছি সেখান থেকেই।

জাগো নিউজ: পড়াশোনায় কোনো প্রতিবন্ধকতা ছিল কি?
গোলাম কিবরিয়া নাঈম: আমার বাবা একজন কাঠ ব্যবসায়ী। আর্থিক টানাপোড়েন ছিল সংসারে। কিন্তু স্বপ্ন দেখার ও দেখানোর অদ্ভুত ক্ষমতা ছিল বাবার। তিনি আমাদের পড়ালেখার জন্য তার সব স্বাদ-আহ্লাদ উৎসর্গ করেছিলেন। তিন ভাই আর ছোট বোনকে পড়াশোনা করাতে বেশ ঋণের মধ্যে পড়েন। সময়ে সময়ে চাচা এবং মামারাও আমাদের সহায়তা করতেন। ঋণের ব্যাপারগুলো আমরা পরে এসে জানতে পারি। জানতে পারার পর থেকে আমাদের মধ্যে একটাই স্বপ্ন ছিল যে, বাবাকে ঋণমুক্ত করে স্বস্তি দিতে হবে। বড় ভাই মাস্টার্স শেষ করে চাকরির জন্য কালক্ষেপণ না করে বাবার ব্যবসার হাল ধরেন। সফলতা আসে মেজ ভাইয়ের হাত ধরে। মেজ ভাই মৎস্য ক্যাডারে সুপারিশপ্রাপ্ত হন। আর আমারও স্বপ্ন হয়ে ওঠে বিসিএস। আল্লাহ আমাকেও পরিশ্রমের প্রতিদান দিয়েছেন। আমি বিশ্বাস করতাম, ভালো কিছু করবো। অতীত অভিজ্ঞতা থেকে আত্মবিশ্বাস তৈরি হয়েছিল। আমার জন্য কখনো মা-বাবাকে হতাশ হতে হয়নি।

আরও পড়ুন: বিসিএসে শিক্ষক হওয়ার স্বপ্নপূরণ ঔষ্ণিকের 

জাগো নিউজ: বিসিএস যাত্রার গল্প শুনতে চাই—
গোলাম কিবরিয়া নাঈম: বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির পর থেকেই বড় ভাইদের মধ্যে যারা ক্যাডার হতেন; তাদের হলের প্রত্যেক রুমে মিষ্টি খাওয়াতে দেখতাম। এছাড়া রুমমেট বড় ভাইসহ প্রতি বছর অনেক বড় ভাইকে ক্যাডার হতে দেখে এবং মেজ ভাইয়ের ক্যাডার হওয়া দেখে আমার মধ্যেও আত্মবিশ্বাস তৈরি হয়। আগেই ৪১তম বিসিএসের কৃষি ক্যাডার চলে আসায় ৪৩তম বিসিএসে উত্তেজনার পারদটা তেমন ছিল না। রেজাল্টের দিন পরিবারসহ পার্কে ঘুরতে গিয়েছিলাম। বিকেলে যখন রেজাল্ট হয়; তখনও পরিবার নিয়ে পার্কে দোলনায় দোল খাই। বেমালুম ভুলেই গিয়েছিলাম আজ ফলাফল দেবে। বন্ধুর ফোনে জানতে পারি রেজাল্ট হয়েছে। রেজাল্ট দেখে ঘাসের মধ্যেই বসে পড়ি। চোখকে বিশ্বাস করতে পারছিলাম না। আমার প্রথম পছন্দই ছিল প্রশাসন। এরপর ট্যাক্স, কাস্টমস, অডিট, কৃষি এভাবে দিয়েছিলাম।

জাগো নিউজ: বিসিএসের জন্য কীভাবে প্রস্তুতি নিয়েছেন?
গোলাম কিবরিয়া নাঈম: লিখিত, প্রিলি বা মৌখিক—তিনটিকেই কঠিন মনে হয়েছে। তবে ভাইভাকেই সবচেয়ে ভয় পেতাম। কেননা সব জায়গাতেই ভেবে ভেবে উত্তর দেওয়ার সুযোগ থাকে। তবে ভাইভায় স্বতঃস্ফূর্ত উত্তর দিতে হয়। প্রস্তুতির কথা বলতে গেলে বলবো, আমি কোনো কোচিং করিনি। বড় ভাইয়েরা কোন কোন বই পড়ে ক্যাডার হয়েছেন, সেটা জানা ছিল। সেগুলোই পড়েছি। প্রশ্ন ব্যাংকগুলো সলভ করতাম। যেটা মডেল টেস্ট পরীক্ষা দেওয়ার মতোই কাজ করতো। পরীক্ষার আগে দুই-তিন মাস খাওয়া-ঘুম-জরুরি কাজ ছাড়া পুরো সময় পড়েছি।

জাগো নিউজ: নতুনরা বিসিএসের প্রস্তুতি কীভাবে শুরু করবেন?
গোলাম কিবরিয়া নাঈম: নতুনদের জন্য বলবো, আপনারা যে কোনো সিরিজের বই পড়তে পারবেন। তবে একই বই বারবার পড়ে আত্মস্থ করার চেষ্টা করবেন। সব প্রশ্ন কমন আসে না। তবে কমন প্রশ্ন ভুল করা যাবে না কোনো অবস্থাতেই। তাই বারবার পড়ার কোনো বিকল্প নেই। পড়তে পড়তেই জানা হয়ে যাবে, কোন তথ্যগুলো মুখস্থ থাকা আবশ্যক। বিশেষ করে প্রশ্ন ব্যাংক সলভ করে অভিজ্ঞতাটা অর্জন করে নিতে হবে।

আরও পড়ুন: বিসিএস হচ্ছে ধৈর্য আর পরিশ্রমের ফল: রুবেল তালুকদার 

জাগো নিউজ: অনেকেই বলেন, শেকৃবিতে একাডেমিক পড়াশোনার চাপ বেশি। তাই এখানে ক্যাডার সংখ্যা তুলনামূলক কম—এ বিষয়ে আপনার মতামত কী?
গোলাম কিবরিয়া নাঈম: আমি অনার্স শেষ করেই মূল পড়াশোনা শুরু করেছিলাম। অনার্সে থাকতে কিছু বিষয় এগিয়ে রাখলে অনার্সের পর বাকিটা পড়েও ক্যাডার হওয়া সম্ভব। তাছাড়া শত একাডেমিক চাপের মধ্যেও আমাদের ঘোরাঘুরি, খেলাধুলা, আড্ডা—এগুলো কিন্তু থেমে নেই। তাই আমি মনে করি, এগুলো থেকেও কিছু সময় বাঁচিয়ে চাকরির জন্য পড়া যায়।

জাগো নিউজ: আপনার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কী?
গোলাম কিবরিয়া নাঈম: সততা ও নিষ্ঠার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করে দেশ গড়ার কাজে নিজের একটা স্বতন্ত্র ছাপ রেখে যাওয়া। যার কারণে একদিন আমার সন্তানরাও গর্ব করতে পারবে।

এসইউ/জিকেএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।