পরিবারের সমর্থন পেলে প্রতিবন্ধকতা দূর করা যায়
ডা. হোসনে আরা স্বপ্না স্ত্রীরোগ বা প্রসূতি বিশেষজ্ঞ। তিনি ৩৪তম বিসিএসে স্বাস্থ্য ক্যাডারে উত্তীর্ণ হন। মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জের আদমপুর ইউনিয়নের কান্দিগাঁও গ্রামের মণিপুরি পরিবারে তার জন্ম। বাবা অবসরপ্রাপ্ত সেনাসদস্য মো. হাতেম আলী, মা আনোয়ারা বেগম। তিনি ঢাকার তেজগাঁও মহিলা কলেজ থেকে এইচএসসি ও বগুড়া মেডিকেল কলেজ থেকে এমবিবিএস সম্পন্ন করেন। চাকরিজীবন শুরু করেন বড়লেখা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ‘মেডিকেল অফিসার’ হিসেবে। পরে এফসিপিএস (গাইনি অ্যান্ড অবস) ডিগ্রি অর্জন করে ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট মৌলভীবাজার জেলা হাসপাতালে কর্মরত আছেন।
সম্প্রতি তিনি জাগো নিউজের সঙ্গে বিসিএস জয়, ক্যারিয়ার পরামর্শ ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে কথা বলেছেন। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন রফিকুল ইসলাম জসিম—
জাগো নিউজ: আপনার শৈশব ও কৈশোর সম্পর্কে জানতে চাই—
ডা. হোসনে আরা স্বপ্না: শৈশব-কৈশোর কেটেছে জন্মস্থান কান্দিগাঁও গ্রামে। যদিও ছোটবেলায় অল্প সময় বাবার চাকরি সুবাদে ঢাকায় কেটেছে। ছোটবেলা থেকেই বেশ চঞ্চলা ও দুরন্ত প্রকৃতির ছিলাম। দুই-চারটি মেয়ের মতো শৈশব-কৈশোরের দুরন্তপনায় হেসে-খেলে আনন্দের সঙ্গে কেটেছে। স্কুলে যাওয়া বন্ধুদের সঙ্গে বিকেলে খেলা। সন্ধ্যা হলেই পড়তে বসে যাওয়া। রাতের বেলা টিভি দেখা—এভাবেই কেটে যেত। দিনগুলো সব সময় একটা নিয়মমাফিক রুটিন মেনে চলতাম। তবে প্রতি শুক্রবার ছিল সব নিয়মের বাইরে। আসলে শৈশব-কৈশোরের স্মৃতিগুলো সব সময় আনন্দের ছিল।
জাগো নিউজ: আপনার জীবনে সাফল্যের নেপথ্য—
ডা. হোসনে আরা স্বপ্না: ছোটবেলা থেকেই মা-বাবা স্বপ্ন দেখাতেন চিকিৎসক হওয়ার জন্য। জীবনের সাফল্যের মূল নেপথ্যে আমার বাবা-মা। তাদের অপরিসীম ত্যাগ, অক্লান্ত পরিশ্রম এবং অনেক অনেক দোয়ার কারণে আজ আমি এ পর্যন্ত আসতে পেরেছি। এছাড়া স্কুল, কলেজ এবং মেডিকেলের সম্মানিত শিক্ষকদের অনুপ্রেরণা ছিল।
আরও পড়ুন: হতাশ হয়েছি বহুবার কিন্তু হাল ছাড়িনি: আনিসুর রহমান
জাগো নিউজ: নারী চিকিৎসক হিসেবে কর্মক্ষেত্রে কোনো প্রতিবন্ধকতা আছে?
ডা. হোসনে আরা স্বপ্না: নারী হয়ে শুধু যে ডাক্তারি পেশার ক্ষেত্রেই প্রতিবন্ধকতা আছে, তা নয়। অন্য সব পেশার ক্ষেত্রেও আছে। তবে দেশের পরিপ্রেক্ষিতে বলতে গেলে কিছু না কিছু প্রতিবন্ধকতা তো আছে। তবে পারিবারিক সমর্থন ও সহযোগিতা পেলে অনেক প্রতিবন্ধকতাই অতিক্রম করা যায়।
জাগো নিউজ: গাইনোকোলজি বিভাগকে কেন বেছে নিয়েছেন?
ডা. হোসেনে আরা স্বপ্না: চিকিৎসায় অনেক অপশন থাকা সত্ত্বেও গাইনি বা গাইনোকোলজিতে আসার মধ্যে অন্যতম একটি কারণ হচ্ছে—এ সেক্টরে আত্মতৃপ্তি অনেক। যদিও অনেক শারীরিক ও মানসিক চাপের মধ্য দিয়ে ঝুঁকি নিয়েই কাজ করতে হয়। যখন একজন মার কোলে একজন সুস্থ বাচ্চাকে তুলে দেবেন এই মুহূর্তে ওই মায়ের মুখের হাসির চেয়ে মূল্যবান আর কিছু নেই।
জাগো নিউজ: সাম্প্রতিক ডেঙ্গুতে গর্ভবতী মায়েদের ঝুঁকি রয়েছে কি না? থাকলে আপনার পরামর্শ—
ডা. হোসনে আরা স্বপ্না: গর্ভবতী মায়ের শরীরে নানাবিধ পরিবর্তন হয়ে থাকে এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও কমে যায়। ওই অবস্থায় ডেঙ্গু মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ। গর্ভাবস্থায় ডেঙ্গু হলে গর্ভপাত, রক্তক্ষরণ, সময়ের আগে ডেলিভারির ব্যথা, বাচ্চার শ্বাসকষ্ট, কম ওজনের বাচ্চা হওয়া, পেটে বাচ্চা মারা যাওয়া, ডেলিভারি পরবর্তী অতিরিক্ত রক্তক্ষরণসহ অনেক সমস্যা হতে পারে। তাই ডেঙ্গু জ্বরের লক্ষণ দেখা দিলে যেমন- জ্বর, হাত-পায়ের অস্থিসন্ধিতে ব্যথা হলে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়া উচিত। গর্ভাবস্থায় ডেঙ্গু হলে অবশ্যই হাসপাতাল ভর্তি থেকেই চিকিৎসা নিতে হবে। জ্বরের চারদিনের মধ্যে হলে এনএসএজি টেস্ট করে দেখা যেতে পারে। স্বাভাবিক খাবারের পাশাপাশি পর্যাপ্ত পরিমাণে তরল খাবার খেতে হবে। বিশ্রামে থাকতে হবে। জ্বরের জন্য ব্যথানাশক প্যারাসিটামল খাওয়া যেতে পারে। অন্য ব্যথানাশক কোনোভাবেই সেবন করা যাবে না। সুস্থ না হওয়া পর্যন্ত একজন মেডিসিন বিশেষজ্ঞের তত্ত্বাবধানে থাকতে হবে। ডেঙ্গু প্রতিরোধে আশপাশ পরিষ্কার রাখতে হবে। পানি যাতে জমে না থাকে, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।
আরও পড়ুন: মানুষের কটু কথা অনেক কষ্ট দিয়েছে: মামুন
জাগো নিউজ: নারীদের প্রসব পরবর্তী বিষণ্ণতা কীভাবে দূর করা যায়?
ডা. হোসনে আরা স্বপ্না: প্রায় ১৫-২০% নারীর ক্ষেত্রে প্রসব পরবর্তী চার মাস সময়ের মধ্যে প্রসব পরবর্তী মানসিক জটিলতা দেখা দিতে পারে। কম বয়সী মা, জটিল প্রসব, বাচ্চার শারীরিক অসুস্থতা, সিজারিয়ান ডেলিভারি অথবা যাদের আগে থেকেই ব্যক্তিগত অথবা পারিবারিক মানসিক অসুস্থতার ইতিহাস থাকে; তাদের এ সমস্যাগুলো হওয়ার ঝুঁকি বেশি থাকে। তবে ভয়ের কারণ নেই। এ সমস্যার ক্ষেত্রে প্রথম চিকিৎসাই হচ্ছে রোগীকে মানসিকভাবে সমর্থন দেওয়া এবং আশ্বস্ত করা। সে ক্ষেত্রে প্রথম এগিয়ে আসতে হবে রোগীর পরিবারকেই। তবে কিছু কিছু ক্ষেত্রে হাসপাতালে ভর্তি থেকে চিকিৎসা নিতে হতে পারে। অ্যান্টি সাইকোটিকেটিক ড্রাগ এবং সাইক্রিয়াটিকা কনসার্টেশন প্রয়োজন হতে পারে।
জাগো নিউজ: যারা মেডিকেল শিক্ষায় আসতে চান, তাদের জন্য আপনার পরামর্শ—
ডা. হোসনে আরা স্বপ্না: আগামী দিনে যারা মেডিকেল শিক্ষায় আসতে চান, তাদের জন্য পরামর্শ হলো—আপনাদের লক্ষ্যে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ থাকতে হবে। এ শিক্ষাক্ষেত্রে টিকে থাকতে হলে অনেক ধৈর্য ও পরিশ্রম করার মানসিকতা থাকতে হবে। সাহস হারালে চলবে না। তাহলেই সাফল্য আসবে।
জাগো নিউজ: আপনার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা সম্পর্কে জানতে চাই—
ডা. হোসনে আরা স্বপ্না: ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা বলতে, আসলে সব কিছু আল্লাহর হাতে। তবে যেহেতু আমি চিকিৎসা পেশায় জড়িত, তাই চিকিৎসা পেশায় আরও উন্নত পদ্ধতিগুলোর সঙ্গে পরিচিত হয়ে নিজের জ্ঞানের পরিধিকে বাড়াতে চাই। সেই জ্ঞান ও দক্ষতা প্রয়োগ করে দেশ ও জাতির সেবায় ভালো চিকিৎসক হিসেবে নিজেকে একজন মানবিক মানুষ রূপে গড়ে তুলতে চাই।
এসইউ/জিকেএস