ই-কমার্সে এসক্রো সিস্টেম আসলে কী?

সাইদুর রহমান
সাইদুর রহমান সাইদুর রহমান , ই-কমার্স ব্যক্তিত্ব
প্রকাশিত: ০১:৩৩ পিএম, ৩১ মে ২০২৩

‘এসক্রো’ শব্দটির সঙ্গে কিছুদিন আগেও আমরা পরিচিত ছিলাম না। ই-কমার্স খাতে কিছু অনিয়মের বিভিন্ন সমাধান খুঁজতে গিয়ে শব্দটি আমরা জানতে পারি। ২০১৮ সালে সরকারের ডিজিটাল কমার্স পলিসিতে ই-কমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ই-ক্যাব) থেকে এসক্রো প্রতিষ্ঠার প্রস্তাবটি যুক্ত করা হয়। কারণ ই-কমার্স খাতের শুরুতে কিছু সমস্যা হয়েছিল। যেমন কিছু লজিস্টিক প্রতিষ্ঠান ক্যাশ অন ডেলিভারি টাকা পরিশোধের ক্ষেত্রে অনিয়মের আশ্রয় নিয়েছিল। এটি ২০১৫-১৬ এমনকি ২০১৭ সালেও ব্যাপক হারে হয়েছিল। ই-কমার্সে তখন কিছু প্রতারণার ঘটনা মিডিয়ায় এসেছে, যেমন- আইফোনের বদলে পাথর ডেলিভারি দেওয়া ইত্যাদি। ফলে তখন যারা নীতি নির্ধারণী বিষয়ের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন; তারা এরকম একটি সিস্টেমের প্রস্তাব করেছেন। এটি বাস্তবায়নের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল বাংলাদেশ ব্যাংককে। কিন্তু বড় ধরনের সমস্যা না হওয়ায় বিষয়টি সবার অগোচরে থেকে যায়।

২০২০ ও ২০২১ সালে নানাবিধ অনিয়মের কারণে আবারো এসক্রো প্রসঙ্গ উঠে আসে। কিন্তু আজ অবধি (এ লেখা পর্যন্ত) এসক্রো সেবা বাস্তবায়ন হয়নি। যদিও বিগত ২০২০ সালে এ সংক্রান্ত একটি কমিটি গঠন করে বাংলাদেশ ব্যাংক। তবে বিগত ২০২১ সালের ৩০ জুন বাংলাদেশ ব্যাংক পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের জন্য পেমেন্ট গেটওয়েকে ম্যানুয়্যালি টাকা আটকে রাখার জন্য কতিপয় প্রতিষ্ঠানের জন্য নির্দেশনা দিলে এটি আলোচনার শীর্ষে চলে আসে। ফলে অনেকের ধারণা যে, এসক্রো বাস্তবায়ন হয়েছে।

প্রথমত, যদি এসক্রো চালু হতো তাহলে এ সংক্রান্ত সার্কুলার হতো এবং একটি পোর্টাল বা প্লাটফর্ম তৈরি হতো। এ সংক্রান্ত লোগো ও সিম্বল অবমুক্ত হতো। ভার্চুয়াল হলেও সেটা সবাই দেখতে পেত। যেমনটা ডিবিআইডির ক্ষেত্রে হয়েছে।

দ্বিতীয়ত, সব প্রতিষ্ঠানের টাকা এই প্রক্রিয়ায় ছাড় হতো কিংবা আটকে থাকত। ক্রেতারা পণ্য না পেলে ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানের প্রতিটি লেনদেন ক্রেতার সম্মতি প্রদানের পর ছাড় পেত।

আরও পড়ুন: আগ্রহের বিষয় নিয়েই আগাতে হবে: সুশান্ত পাল

এই ম্যানুয়্যাল এসক্রোর মাধ্যমে শুধু অভিযুক্ত ৩৩ প্রতিষ্ঠানের মধ্য থেকে ৭-৮টি প্রতিষ্ঠান যারা অতিরিক্ত মূল্য গ্রহণ করেছে এবং দীর্ঘসময় পরও ক্রেতার পণ্য বা টাকা ফেরত দেয়নি, তাদের শুধু সে অর্থ আটকে রেখেছে যেই অর্থ পেমেন্ট গেটওয়ের কাছে ছিল। কারণ ই-কমার্স লেনদেনের সময় অনলাইনে পেমেন্ট করলে টাকা প্রথমে গেটওয়েতে জমা হয়। বাংলাদেশ ব্যাংক এই মর্মে নির্দেশনা দেয় যে, এই অর্থ ক্রেতাকে ফোন করে তার সন্তুষ্টির বিষয়ে নিশ্চিত হয়ে তারপর যেন ছাড় করা হয়। বলাবাহুল্য এটা কোনো এসক্রো সেবার ক্ষেত্রে চর্চা করা হয় না। বলা যেতে পারে এটা একটা ইমার্জেন্সি সল্যুশন। কিন্তু পেমেন্ট জার্নির ক্ষেত্রে বিষয়টা একই রকম বিধায়, অনেকে এই প্রক্রিয়াকে এসক্রো বলেছেন।

এসক্রো কেমন?
এসক্রো কখনো একটি আইনি ব্যবস্থা- বিশেষ করে যখন সরকারিভাবে বা কেন্দ্রীয় ব্যাংক এটি নিয়ন্ত্রণ করে, তখন সেখানে একটি নির্দিষ্ট শর্ত পূরণ না হওয়া পর্যন্ত ক্রেতার অর্থ বিক্রেতাকে না দিয়ে একটি তৃতীয় পক্ষ বা গেটওয়ে সাময়িকভাবে (নির্দিষ্ট সময়ের জন্য) অর্থ বা সম্পত্তি ধরে রাখে।

অন্য অর্থে এসক্রো হলো, একটি আর্থিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা যাতে উভয় পক্ষ বিশেষ করে ক্রেতার আর্থিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হয়। যেহেতু ক্রেতা আগে মূল্য পরিশোধ করেন, তাই তার ঝুঁকি বেশি থাকে। অন্যদিকে বিক্রেতার ঝুঁকি কমায় এসক্রো পদ্ধতি। এক্ষেত্রে পদ্ধতি আইনি বা সরকারি প্রক্রিয়ায় না-ও হতে পারে। যেমন একজন ক্রেতা যখন দারাজে বা অ্যামাজনে পণ্য ক্রয়ের অর্ডার দিয়ে মূল্য পরিশোধ করে, তখন দারাজ বা অ্যামাজন ক্রেতার সন্তুষ্টি বিধান পর্যন্ত পণ্যমূল্য বিক্রেতাকে পরিশোধ করে না। এটাও এক ধরনের এসক্রো।

আরও পড়ুন: রাফসান সাবাবের ‘হোয়াট এ শো’

এসক্রো হিসেব একটি তৃতীয় পক্ষের নিয়ন্ত্রণে থাকে। এটাকে আমরা থার্ড এজেন্ট বলতে পারি। বহির্বিশ্বে এসক্রোতে শুধু লেনদেন হয়, তা নয়। সাময়িক স্থিতিও রাখতে দেখা যায়। যদিও এটার আরেকটি ফরম্যাট আছে, যাকে বলা হয় ই-ওয়ালেট। আধুনিক ব্যবস্থায় টাকা, সিকিউরিটিজ, তহবিল এবং অন্য সম্পদ সবই এসক্রোতে রাখা যেতে পারে। বিশ্বব্যাপী যেসব ক্ষেত্রে এসক্রো ব্যবহার করা হয়, সেগুলো শেয়ার সিকিউরিটিজ, রিয়েল এস্টেট এবং অনলাইন কেনাকাটা। বিশেষ করে উচ্চমূল্য সেবার জন্য এসক্রো একটি নিরাপত্তার নিশ্চয়তা দেয়।

এসক্রো কীভাবে কাজ করে?
উদাহরণ স্বরূপ, একটি বাড়ি কেনার প্রক্রিয়াজুড়ে ক্রেতা এবং বিক্রেতা উভয়কে রক্ষা করতে রিয়েল এস্টেট লেনদেনে যখন এসক্রো ব্যবহৃত হয়; তখন টাকা পুরো পরিশোধ হয়ে ক্রেতাকে সম্পত্তি বুঝিয়ে দেওয়ার আগে অর্থ তৃতীয় পক্ষের দায়িত্বে থাকে। সম্পত্তি বন্ধকের মেয়াদকালে, একটি এসক্রো অ্যাকাউন্ট ট্যাক্স এবং বাড়ির মালিকের বিমার জন্য তহবিল সংরক্ষণ করে তার নিরাপত্তা বিধান করে।

অনলাইন ব্যবসার ক্ষেত্রে ক্রেতা যখন পণ্যের অর্ডার দিয়ে অনলাইনে মূল্য পরিশোধ করে; তখন সেটা বিক্রেতার কাছে না গিয়ে ব্যাংক বা গেটওয়ের দায়িত্বে জমা থাকে। সেজন্য যে শর্ত বা বিধি থাকে তা অনুসরণ করে পরে এর প্রকৃত দাবিদারকে অর্থ শোধ করা হয়। যেমন- পণ্য যদি ডেলিভারি হয়ে যায় এবং ক্রেতা সন্তুষ্ট থাকে তাহলে অর্থ বিক্রেতার কাছে চলে যাবে। আবার ক্রেতা যদি পণ্য না পায় বা সন্তুষ্ট না হয় বা পণ্য ফেরত দেয়, সেক্ষেত্রে অর্থ ক্রেতাকে ফেরত দেওয়া হয়। আর যদি উভয় পক্ষ দাবি করে তাহলে এসক্রো কর্তৃপক্ষ একটি সমঝোতার মাধ্যমে এর সমাধান করে থাকে। পুরো প্রক্রিয়াটি ডিজিটালি তথা অনলাইনে সম্পন্ন হয়। খুব কম ক্ষেত্রে তাদের একে অপরের মুখোমুখী হতে হয়।

আরও পড়ুন: জেপি বিল্ড বাংলাদেশে ভালো অবস্থান তৈরি করবে

সহজ কথায় এসক্রো হলো, একটি আর্থিক প্রক্রিয়া যখন দুটি পক্ষ একটি লেনদেনে অংশ নেয় এবং যখন তাদের বাধ্যবাধকতা পূরণের বিষয়ে অনিশ্চয়তা থাকে। এসক্রো ব্যবহার করে তারা সেটি নিশ্চিত করে। আশা করি এ বিষয়ে যাদের জানার ঘাটতি ও বিভ্রান্তি ছিল তা দূর হবে।

এসইউ/এএসএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।