‘হারমিজন’ পায়ে রিফাতুল হকের এগিয়ে চলার গল্প

বেনজির আবরার
বেনজির আবরার বেনজির আবরার , ফিচার লেখক
প্রকাশিত: ০২:৪৮ পিএম, ২০ এপ্রিল ২০২৩

ফুটওয়্যার ব্র্যান্ড হারমিজন দীর্ঘ ৪ বছর ধরে সফলতার সঙ্গে গ্রাহকদের কাছে আরামদায়ক এবং ফ্যাশনেবল ফুটওয়্যার পৌঁছে দিচ্ছে। হারমিজনের সফলতার পেছনে যে মানুষটির অবদান সবচেয়ে বেশি তিনি এর প্রতিষ্ঠাতা এবং প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা রিফাতুল হক। রিফাত দেশের মানুষের চাহিদা মেটাতে একটি অত্যাধুনিক ব্র্যান্ড তৈরি করতে চেয়েছিলেন। সেই স্বপ্ন বাস্তবে রূপ দিতেই দেশে ফিরে আসেন। ২০১৯ সালে তার সহ-প্রতিষ্ঠাতা নাজমুল হাসানের সঙ্গে মিলে প্রতিষ্ঠা করেন হারমিজন। রিফাত একাধারে প্রকৌশল এবং ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগ থেকে ডিগ্রি অর্জন করেন। প্রথমে তিনি হংকং বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তড়িৎ ও বৈদ্যুতিক প্রকৌশল বিষয়ের ওপর ডিগ্রি সম্পন্ন করেন। পরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসায় প্রশাসন ইনস্টিটিউট থেকে ব্যবসায় প্রশাসনে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন।

সম্প্রতি তার কর্মজীবন ও সফলতা নিয়ে কথা বলেছেন জাগো নিউজের সঙ্গে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন বেনজির আবরার—

জাগো নিউজ: আপনার প্রতিষ্ঠান কী নিয়ে কাজ করছে?
রিফাতুল হক: হস্তশিল্প ভিত্তিক ফ্যাশনেবল ফুটওয়্যার ব্র্যান্ড হারমিজন। এর অত্যাধুনিক ডিজাইন এবং আরামের নিশ্চয়তার মাধ্যমে বাংলাদেশের বাজারে রাখছে নিজেদের পদচিহ্ন। সাশ্রয়ী মূল্যে এবং আরামদায়কতা হারমিজনকে জায়গা করে দেয় গ্রাহকদের মনে। প্রতিটি পণ্য তৈরি হয় স্থানীয় হস্তশিল্প কারিগর দ্বারা। পণ্যের গুণমানের ক্ষেত্রে এক চুলও ছাড় দিতে নারাজ তারা। হারমিজনে পাওয়া যায় হাল ফ্যাশনের হিল, জুত্তি, কোলাপুরি, গ্রীষ্মকালীন ফ্ল্যাটস, স্লাইডস এবং জমকালো পাম্প জুতো।

রাজধানীর গুলশান, ধানমন্ডি এবং মিরপুরে আছে আউটলেট। সম্প্রতি দেশের বিভিন্ন স্থানে আরও ২৮টি আউটলেট স্থাপন করতে অংশীদারত্ব করেছে রিটেইল শপ ‘স্বপ্ন’র সঙ্গে। সোশ্যাল মিডিয়ার জগতেও হারমিজন বেশ জনপ্রিয়। ফেসবুক এবং ইনস্টাগ্রামে আছে ৮ লাখেরও বেশি ফলোয়ার। আমরা দেশের ভেতরে এবং বাইরে পণ্য হোম ডেলিভারি দিয়ে থাকি। হারমিজন সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয়তা পেয়েছে শিক্ষার্থী এবং চাকরিজীবী নারীদের মধ্যে। আরামদায়ক, সাশ্রয়ী এবং জমকালো ডিজাইন একে করে তুলেছে নারীদের প্রথম পছন্দ। দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে বিশ্বস্ত গ্রাহকের সংখ্যা।

jagonews24

আরও পড়ুন: মণিপুরি নারীর সফল উদ্যোক্তা হয়ে ওঠার গল্প 

জাগো নিউজ: আপনাদের বিশেষ কোনো সেবা আছে?
রিফাতুল হক: হারমিজন প্রাধান্য দেয় পণ্যের গুণমান, স্থায়িত্বের ওপর এবং নিশ্চিত করে এর আরামদায়ক এবং ফ্যাশনেবল ফুটওয়্যার। ফোকাস থাকে হস্তশিল্পের পণ্য এবং স্থানীয় কারিগরদের ওপর। যা এনে দিয়েছে তুমুল জনপ্রিয়তা। বাংলাদেশের ফুটওয়্যার ইন্ডাস্ট্রিতে শক্ত স্থান অর্জন করতে সাহায্য করেছে।

আমাদের লক্ষ্য হলো দেশের স্থানীয় কারিগরদের সহযোগিতায় এমন একটি ব্র্যান্ড তৈরি করা, যা প্রজন্ম থেকে প্রজন্ম ধরে চলে আসা ঐতিহ্যবাহী হস্তশিল্পকে সংরক্ষণ করবে। একে পৌঁছে দেবে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কাছে। প্রতিষ্ঠানটি কারিগরদের ন্যায্য মজুরি, নিরাপদ কাজের পরিবেশ প্রদানে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। যাতে এই নৈপুণ্যের অনুশীলন চালিয়ে যেতে পারে। পাশাপাশি নিজের পরিবারকেও আর্থিকভাবে সহযোগিতা করতে পারে। এর মাধ্যমে শুধু কারিগরদের উপকার হবে না বরং সমগ্র সম্পদায়ের ওপর ইতিবাচক প্রভাব পড়বে। দেশের অর্থনীতির চাকা গতিশীল থাকবে।

এ ব্র্যান্ডের পরিবেশ-বান্ধব পদ্ধতি একে করে তুলেছে অনন্য। হারমিজন টেকসই উপকরণ ব্যবহার করতে এবং পরিবেশের ওপর নেতিবাচক প্রভাব কমাতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। আমরা নিশ্চিত করি, প্রতিটি পণ্য যেন তৈরি হয় পরিবেশ-বান্ধব উপাদান দিয়ে। টেকসই উন্নয়নের প্রতি যথেষ্ট নজর রাখাই প্রমাণ করে উন্নত বিশ্ব তৈরিতে হারমিজন কতটা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।

জাগো নিউজ: আপনার ক্যারিয়ারের টার্নিং পয়েন্ট কোনটি?
রিফাতুল হক: আমাদের এই হস্তশিল্প নির্ভর ফুটওয়্যার ব্র্যান্ডটি এর টার্নিং পয়েন্ট ছিল। যখন আমরা এমন এক ধরনের ফুটওয়্যার তৈরি করতে পেরেছিলাম। যা একাধারে আরামদায়ক, দেখতে অনন্য এবং অসাধারণ স্থায়িত্বের মিশ্রণ। আমাদের টিম সব সময় উন্নতমানের ফুটওয়্যার তৈরিতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। যা শুধু দেখতে জমকালো হবে না বরং ব্যবহারযোগ্য এবং স্থায়ী হবে। যতক্ষণ পর্যন্ত আমরা জুতাগুলোকে অত্যাধুনিক উপাদান এবং ডিজাইনের মাধ্যমে আরামদায়ক, স্থায়ী এবং ফ্যাশনেবল নিশ্চিত করতে না পারছি; আমরা নিজেদের লক্ষ্য অর্জনে সক্ষম বলে মনে করি না।

আরও পড়ুন: ইয়াসমিন মেহেরের স্বপ্ন ‘আলবাট্রস বিডি’ 

আমাদের অতি আরামদায়ক জুতাগুলোর মাধ্যমে আমরা এমন বিস্তৃত গ্রাহকদের কাছে পৌঁছে যেতে সক্ষম হয়েছি, যারা কি না জাঁকজমকপূর্ণ এবং আরামদায়ক জুতা খুঁজছিলেন। আমরা আমাদের ব্র্যান্ডের পণ্যে এমন কিছু ডিজাইন অন্তর্ভুক্ত করেছি, যা আমাদের ফুটওয়্যারের বাজারে অনন্য করে তোলে। তাছাড়া আমাদের ব্যতিক্রমী স্থায়িত্বের প্রতি প্রতিশ্রুতিই প্রমাণ করে যে, আমাদের গ্রাহকেরা আমাদের জুতার ওপর দীর্ঘ বছর ধরে নিশ্চিন্তে ভরসা করতে পারেন।

মোট কথা, পণ্যের আরামদায়কতা, স্থায়িত্ব এবং ফ্যাশনেবল ডিজাইন আমাদের ব্র্যান্ডের জন্য টার্নিং পয়েন্ট। এটি আমাদের প্রতিযোগীদের থেকে নিজেদের আলাদা করতে এবং একটি সত্যিকারের ব্যতিক্রমী ফুটওয়্যার ব্র্যান্ড তৈরি করতে সহযোগিতা করেছে। যা একজন গ্রাহকের সব ধরনের চাহিদা মেটাতে সাহায্য করে।

জাগো নিউজ: আপনাদের অর্জনগুলো সম্পর্কে যদি বলতেন—
রিফাতুল হক: ডিজাইনার ফুটওয়্যার ব্র্যান্ড হিসেবে হারমিজন গত চার বছরে উল্লেখযোগ্য সাফল্য অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে। আমাদের অগণিত সফলতার মধ্যে সবচেয়ে বড় সফলতা হলো বর্তমানে আমরা ১০ লাখেরও বেশি অনন্য গ্রাহককে সেবা দিয়ে যাচ্ছি। মাইলফলকটি আমরা অর্জন করতে পেরেছি পণ্যের অন্যান্য বৈশিষ্ট্য এবং আমাদের গ্রাহকদের সন্তুষ্ট করার মাধ্যমে। যারা তাদের ফুটওয়্যারের প্রয়োজনে আমাদের ভরসা করেন।

আমাদের ক্রমশ বৃদ্ধি পাওয়া গ্রাহক সংখ্যার পাশাপাশি আমরা ঢাকার ভেতরে যথাক্রমে মিরপুর, ধানমন্ডি এবং গুলশানে নিজেদের আউটলেট খোলার মাধ্যমে উপস্থিতি প্রসারিত করতে সক্ষম হয়েছি। করোনা মহামারির কারণে তৈরি হওয়া বাধা এবং চ্যালেঞ্জগুলোকে অতিক্রম করে ফুটওয়্যারের বাজারে একটি নির্ভরশীল ব্র্যান্ড হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে সক্ষম হয়েছি। এছাড়া আমাদের সব সোশ্যাল মিডিয়ায় থাকা বৃহৎ আকারের ফলোয়ার বেজ নিয়েও বেশ গর্ববোধ করি। উন্নতমানের, জমকালো এবং আরামদায়ক ফুটওয়্যার তৈরির প্রতি প্রতিশ্রুতি আমাদের এনে দিয়েছে বৃহৎ একটি গ্রাহক বেজ। যারা প্রতিনিয়ত প্রশংসা করছেন আমাদের ব্র্যান্ডের।

jagonews24

আরও পড়ুন: মারিয়ার মাসে আয় ৩০ হাজার টাকা 

বলা যায়, হারমিজনের এসব সফলতা হলো আমাদের টিমের কঠোর পরিশ্রম এবং আত্মোৎসর্গের ফলাফল। আমরা গ্রাহকদের কাছে ব্যতিক্রমী পণ্য পৌঁছে দিতে অঙ্গীকারবদ্ধ। ভবিষ্যতে আমাদের ব্র্যান্ডের জন্য আরও বেশি বৈচিত্র্য আনার জন্য পরিকল্পনাবদ্ধ।

জাগো নিউজ: তরুণ উদ্যোক্তাদের জন্য আপনার পরামর্শ কী?
রিফাতুল হক: আমার একনিষ্ঠ বিশ্বাস, উৎসর্গ এবং শৃঙ্খলা যে কোনো ক্ষেত্রেই সফলতার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ গুণাবলি। ব্যবসার জগতে এর প্রয়োজন আরও বেশি। একটা সফল ব্যবসা গড়ে তোলার জন্য প্রচুর পরিশ্রম, ফোকাস এবং অধ্যবসায় প্রয়োজন। শুধু উৎসর্গ এবং শৃঙ্খলার সংমিশ্রণ তরুণ উদ্যোক্তাদের কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে নিয়ে যেতে পারে।

ব্যবসায়ে প্রবেশকারী তরুণদের জন্য আমার পরামর্শ হলো, নিজের মধ্যে উৎসর্গ এবং শৃঙ্খলা গড়ে তোলা। পাশাপাশি নিজেকে খোলা মনের অধিকারী করতে হবে। নমনীয় এবং শেখার মানসিকতা থাকতে হবে। এই গুণের সঙ্গে প্রয়োজন সঠিক সময় এবং ভাগ্য। যার মাধ্যমে নিজের উদ্যোগকে সফলতার চূড়ায় নিয়ে যাওয়া সম্ভব হবে। পৃথিবীতে ইতিবাচক প্রভাব ফেলতে সক্ষম হবে।

এসইউ/জিকেএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।