পুলিশ সদস্য হওয়ার স্বপ্ন দেখেছিলেন সাইফুল

মো. ইসরাফিল হোসাইন
মো. ইসরাফিল হোসাইন মো. ইসরাফিল হোসাইন , সহ সম্পাদক
প্রকাশিত: ০১:১৫ পিএম, ০৬ জানুয়ারি ২০২৩

এক বছরের মৌলিক প্রশিক্ষণ শেষে ২০২১ সালের ১৪ জুন শিক্ষানবিশ সাব ইন্সপেক্টর (এসআই) হিসেবে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশে (ডিএমপি) যোগদান করেন মো. সাইফুল ইসলাম। তার জন্ম ও শৈশব কেটেছে শরীয়তপুরের ভেদরগঞ্জ উপজেলার সিংগাচুড়া গ্রামে। বাবা মো. জাহাঙ্গীর হোসেন ও মা সালমা বেগমের পাঁচ সন্তানের মধ্যে তিনি দ্বিতীয়। ২০০৯ সালে আজিজুর রহমান উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পাস করেন। ২০১১ সালে ঢাকার দনিয়া বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের মানবিক বিভাগ থেকে এইচএসসি পাস করেন। এরপর জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগ থেকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন।

বর্তমানে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) লালবাগ বিভাগের কামরাঙ্গীরচর থানায় কর্মরত। সম্প্রতি তার পুলিশের এসআই পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়া, ভবিষ্যৎ স্বপ্ন ও সফলতার গল্প শুনিয়েছেন জাগো নিউজকে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন মো. ইসরাফিল হোসাইন—

জাগো নিউজ: আপনার শৈশব ও পড়াশোনা সম্পর্কে জানতে চাই—
মো. সাইফুল ইসলাম: আমার জন্ম ও শৈশব কেটেছে গ্রামের সুজলা-সুফলা, শস্য-শ্যামলা পল্লি-প্রকৃতির মাঝে। জীবনের অনেকটা পথ অতিবাহিত হয়েছে কিন্তু আমার শৈশবের দিনগুলো স্মৃতিপটে এখনো অক্ষয় রয়েছে। স্নিগ্ধ পল্লি-প্রকৃতি ছিল আমার অন্তরঙ্গ বন্ধু। শৈশবের সারাদিন কাটত ছোটাছুটি, খেলাধুলা আর পড়াশোনার মধ্যে। ব্যবসায়িক কারণে বাবা ব্যস্ত থাকায় মায়ের স্নেহ, আদর-ভালোবাসা ও শাসনের তুলনা ছিল অনেক বেশি। ফলে আমার ইচ্ছেটা প্রাধান্য পেত সর্বক্ষেত্রে।

jagonews24

এভাবে কিছু বুঝতে না বুঝতেই আমার গ্রামের হাইস্কুলে এসএসসি পরীক্ষা চলে এলো। ২০০৯ সালে এসএসসি পাস করে চলে এলাম ঢাকায়। একাদশ শ্রেণিতে ভর্তি হলাম দনিয়া বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের মানবিক বিভাগে। ২০১১ সালে কলেজের গণ্ডি পেরিয়ে তীব্র প্রতিযোগিতার ভর্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে ভর্তি হলাম জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগে। এখান থেকেই স্নাতক ও স্নাতকোত্তর (প্রথম শ্রেণি) ডিগ্রি অর্জন করি।

জাগো নিউজ: পুলিশ সদস্য হওয়ার স্বপ্ন দেখেছিলেন কখন থেকে?
মো. সাইফুল ইসলাম: পুলিশ সদস্য হওয়ার স্বপ্ন দেখেছিলাম সেই ছোটবেলা থেকে। বিভিন্ন কারণে আমাদের গ্রামে পুলিশ আসতো। পুলিশের উপস্থিতি টের পেলেই গ্রামের মানুষ এদিক-সেদিক ছোটাছুটি করত। ওই সময় পুলিশের পোশাক পরার খুব ইচ্ছে জেগেছিল। আর ওখান থেকেই আসলে পুলিশ সদস্য হওয়ার স্বপ্ন শুরু হয়।

জাগো নিউজ: এসআই হিসেবে যাত্রার গল্প শুনতে চাই, প্রস্তুতি কীভাবে নিয়েছেন?
মো. সাইফুল ইসলাম: এক বছরের মৌলিক প্রশিক্ষণ শেষ করে ২০২১ সালের ১৪ জুন শিক্ষানবিশ সাব-ইন্সপেক্টর হিসেবে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশে (ডিএমপি) যোগদান করি। পরে ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) কোর্ট দিয়ে আমার এসআই হিসেবে যাত্রা শুরু হয়। আসলে এসআই হওয়ার জন্য আমার তেমন প্রস্তুতি নিতে হয়নি। কারণ আমাদের সময়ে এসআইয়ের লিখিত সিলেবাসের অধিকাংশ পড়াই বিসিএস প্রস্তুতি নেওয়ার মাধ্যমে সম্পন্ন হয়েছে। শুধু পাটিগণিত অংশটুকু আলাদাভাবে প্রস্তুতি নিতে হয়েছে।

জাগো নিউজ: আড়াল থেকে কেউ অনুপ্রেরণা জুগিয়েছেন?
মো. সাইফুল ইসলাম: আড়াল থেকে পিতা-মাতাই মূলত অনুপ্রেরণা জুগিয়েছেন। এ ছাড়াও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও ফেসবুকের মাধ্যমে আমাদের সিনিয়র ভাই-আপুদের মোটিভেশনাল কথাবার্তা আমাকে পুলিশ অফিসার হওয়ার ক্ষেত্রে অনেকাংশেই অনুপ্রেরণা জুগিয়েছে।

জাগো নিউজ: এসআই হতে চাইলে কীভাবে প্রস্তুতি নিতে হয়?
মো. সাইফুল ইসলাম: দেশ ও জনগণের সেবার মহান ব্রত নিয়ে বাংলাদেশ পুলিশ বাহিনীর যাত্রা শুরু। বাংলাদেশ পুলিশই একমাত্র প্রতিষ্ঠান যেখানে তৃণমূল পর্যায় থেকে শুরু করে সবাইকে সেবাদানের সুযোগ আছে। দেশ ও জনগণের সেবায় বাংলাদেশ পুলিশের রয়েছে ঈর্ষান্বিত সফলতা। আছে মুক্তিযুদ্ধে প্রথম সশস্ত্র প্রতিরোধের গৌরব। তাই বাংলাদেশ পুলিশ গাইছে সাহসীদের গান। যারা সাহসী ও মানবিক বলে বলীয়ান, যারা দেশের সেবায় অকুতোভয়, যারা নিজেকে বিলিয়ে দিতে প্রস্তুত বাংলাদেশ পুলিশ আছে তাদের অপেক্ষায়।

জাগো নিউজ: পেশা হিসেবে সুযোগ-সুবিধা কেমন?
মো. সাইফুল ইসলাম: পেশা হিসেবে পুলিশে বিভিন্ন পর্যায়ে সুযোগ-সুবিধা আছে। শুধুমাত্র সাব-ইন্সপেক্টরের (এসআই) ক্ষেত্রে প্রশিক্ষণকালীন বিনা মূল্যে পোশাক সামগ্রীসহ থাকা, খাওয়া ও চিকিৎসার সুবিধা দেওয়া হয়ে থাকে। সাত হাজার টাকা হারে প্রশিক্ষণ ভাতা দেওয়া হয়। সফলভাবে প্রশিক্ষণ শেষে নিয়োগপ্রাপ্তদের জাতীয় বেতন স্কেল ২০১৫ অনুযায়ী ১০ম গ্রেডভুক্ত ১৬ হাজার টাকা বেসিক থেকে ৩৮ হাজার ছয়শ ৪০ টাকা পর্যন্ত বেতন দেওয়া হয়ে থাকে। সঙ্গে অন্যান্য সুবিধাও রয়েছে। বাংলাদেশ পুলিশে এসআই হিসেবে যোগদানের পর প্রচলিত নিয়ম অনুযায়ী উচ্চতর পদে পদোন্নতির ব্যবস্থা রয়েছে।

এ পেশায় আছে স্বচ্ছলতা ও সামাজিক নিরাপত্তার হাতছানি। পরিবারের সর্বোচ্চ চারজন সদস্যের জন্য রেশন সুবিধা। রেশনের আওতায় থাকছে (চাল, ডাল, তেল, আটা, চিনি)। নিজ ও পরিবারের সদস্যদের জন্য রয়েছে বিনা মূল্যে চিকিৎসাব্যবস্থা, যা পুলিশ নিয়ন্ত্রিত হাসপাতালের মাধ্যমে দেওয়া হয়ে থাকে। বাংলাদেশ পুলিশে যোগদানের পর রয়েছে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে অংশগ্রহণের সুবর্ণ সুযোগ ও আর্থিকভাবে লাভবানের সুবিধা।

এ ছাড়া আর্থিকভাবে লাভবান হওয়ার জন্য পুলিশ সদস্যদের জন্য রয়েছে প্রোভিডেন্ট ফান্ড সুবিধা। প্রোভিডেন্ট ফান্ডে জমা হওয়া টাকা অবসরকালীন এনে দেবে সচ্ছল জীবন ব্যবস্থা। পুলিশ সদস্যদের কাজের জন্য রয়েছে ঝুঁকিভাতা ও সরকারি ব্যারাকে থাকার সুব্যবস্থা। পুলিশ সদস্যের সন্তানদের পড়াশোনার জন্য রয়েছে শিক্ষাভাতার ব্যবস্থাও।

মূলধারার পুলিশিংয়ের পাশাপাশি পুলিশে বিভিন্ন বিশেষায়িত ইউনিট রয়েছে, যেখানে আপনি কাজ করতে পারবেন। যেমন: ডিটেকটিভ ব্রাঞ্চ, স্পেশাল ব্রাঞ্চ, সিআইডি, পুলিশের বিশেষায়িত কমান্ডো ইউনিট সোয়াট, কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিট ইত্যাদি।

jagonews24

বাংলাদেশ পুলিশে যোগদানের পর আপনার পারিবারিক নিরাপত্তা বৃদ্ধিসহ আত্মীয়-স্বজনদের মধ্যে অন্যরকম আত্মবিশ্বাস গড়ে উঠবে। চাকরির পাশাপাশি বিভিন্ন সময়ে বিদেশে প্রশিক্ষণের সুবিধাও পাওয়া যায়। বাংলাদেশ পুলিশে যোগদানের পর চাকরির পাশাপাশি পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়ারও সুব্যবস্থা রয়েছে। বাংলাদেশ পুলিশ পরিচালিত কমিউনিটি ব্যাংক বাংলাদেশ থেকে লোনের সুবিধাও ভোগ করতে পারবেন। অন্যান্য সরকারি চাকরির মতো চাকরি শেষে পাওয়া যাবে অবসরকালীন পেনশন সুবিধা। সবচেয়ে বড় সুবিধা যেটি পাওয়া যায়, সেটি হলো সাধারণ মানুষের সেবা করার সুযোগ।

জাগো নিউজ: পুলিশ হিসেবে আপনার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কী?
মো. সাইফুল ইসলাম: পুলিশ হিসেবে আমার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা স্বভাবতই আমার উপর অর্পিত পেশাগত দায়িত্ব মানবিক হৃদয় দিয়ে পালন করে দেশ ও জাতির কল্যাণে নিজেকে সমর্পণ করা।

এমআইএইচ/এসইউ/জিকেএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।