শত বাধা পেরিয়ে সফল উদ্যোক্তা শাখাওয়াত
মো. শাখাওয়াত হোসেন শত বাধা পেরিয়ে উদ্যোক্তা জীবনের পথ সুগম করেছেন নিজের মতো। তার গড়ে তোলা সুপরিচিত মালেদা গ্রুপের অধীনে কর্মসংস্থান হয়েছে অসংখ্য মানুষের। প্রতিষ্ঠানটির উদ্যোক্তা ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা তিনি। জাগো নিউজকে বলেছেন তার স্বপ্নের কথা। বিস্তারিত জানাচ্ছেন বেনজির আবরার—
উদ্যোক্তা জীবনের শুরুর গল্পটা জানালেন তিনি এভাবে, ‘সুবিশাল স্বপ্ন আর বিপুল আত্মবিশ্বাস নিয়ে আমার পথচলা শুরু। প্রাণচাঞ্চল্য আর প্রতিযোগিতায় ভরা এই ঢাকা শহরে উদ্যোক্তা হিসেবে আমার পথচলার শুরুটা একদমই সহজ ছিল না। তখন ২০১৮ সাল, পদে পদে মুখোমুখি হতে হয়েছে বাধার। নিতে হয়েছে ঝুঁকি, গ্রহণ করতে হয়েছে চ্যালেঞ্জ। কিন্তু আমি পিছু হটিনি, হতাশায় মুখ কালো করে বসে থাকিনি।’
শাখাওয়াত বলেন, ‘প্রতিটি সকাল শুরু করেছি নতুন স্বপ্ন এবং আত্মবিশ্বাস নিয়ে। রক্ত এবং ঘামে তৈরি করেছি সম্ভাবনা, অর্জন করেছি টিকে থাকার শক্তি। আমার বিশাল স্বপ্নের বাস্তবায়িত ছোট্ট একটি অংশ মালেদা গ্রুপ। কী করবো না করবো যখন ভাবছিলাম; তখন প্রিন্টিং প্যাকেজিংয়ের কাজ ভালো লাগা শুরু। করোনার মধ্যেই দেশের সবচেয়ে বড় বড় প্রতিষ্ঠানে টানা কাজ করে গেছি আমরা। মূলত তখনই নাম ছড়িয়েছে খুব।’
বর্তমান কী অবস্থা? কেমন চলছে? বলতেই তিনি বলেন, ‘আমার দিন-রাতের ব্যস্ততা এখন গ্রুপটিকে ঘিরে। কর্মযজ্ঞ বাড়ছে, বিস্তৃত হচ্ছে পরিধি। মালেদা গ্রুপের অধীনে চলছে চারটি কোম্পানির কার্যক্রম। মালেদা ফ্যাশন মূলত একটি বায়িং হাউজ। এখানে ফ্যাশন রিলেটেড কাজগুলো করা হয়। ডমেস্টিক কর্পোরেট ব্র্যান্ড প্রমোশনাল গার্মেন্টস হোক বা ইন্টারন্যাশনাল ইনকোয়ারি বেজড গার্মেন্টস। বায়ারের চাহিদামতো আমরা তৈরি করে দিই গার্মেন্টসপণ্য। নিট ওভেন ও সোয়েটারের টি-শার্ট, পোলো-শার্ট, ফর্মাল ও কেজুয়াল শার্ট, টাউজার ও প্যান্টসহ আরও পোশাক আছে। নান্দনিক ডিজাইন এবং উন্নত বুনন এ কোম্পানির সর্বোচ্চ প্রায়োরিটি।’
দ্বিতীয় কোম্পানি সম্পর্কে শাখাওয়াত বলেন, ‘এটি মূলত প্রমোশনাল প্রোডাক্ট অ্যান্ড সাপ্লাই বিজনেস। কোম্পানি কিংবা ইন্ডাস্ট্রির একটি বিজনেস রান করতে গেলে কাঁচামাল থেকে শুরু করে ব্র্যান্ড প্রমোশন পর্যন্ত যা লাগে, সব আমরা সরবরাহ করে থাকি। এরমধ্যে রয়েছে প্রোডাক সোর্সিং, প্রোডাক্ট প্যাকেজিং, গিফট আইটেম, অফিস স্টেশনারি ইত্যাদি।’
তৃতীয় প্রতিষ্ঠান এক্সিকিউটিভ বিজনেস অ্যান্ড কমার্স লিমিটেড সম্পর্কে এ উদ্যোক্তা বলেন, ‘সততা এবং বিশ্বস্ততার সঙ্গে এক্সপোর্ট-ইম্পোর্ট জাতীয় সেবাদান কোম্পানি এটি। যে কোনো দেশ থেকে যে কোনো পণ্য আমরা যেমন ইম্পোর্ট করে থাকি; তেমনি দেশ থেকেও বিভিন্ন দেশে এক্সপোর্ট করে থাকি।’
শাখাওয়াত হোসেন আরও বলেন, ‘আমাদের ৪র্থ প্রতিষ্ঠান হচ্ছে ‘নেস্টইন’। এটি ইন্টেরিয়র ডিজাইন সল্যুশন কোম্পানি। বায়ারের চাহিদামতো আমরা ইন্টেরিয়র সল্যুশন দিয়ে থাকি। মানুষের ঘর, অফিস, প্রতিষ্ঠান নান্দনিক ডিজাইনে চিত্তাকর্ষক ও সহজ করে তোলাই আমাদের লক্ষ্য।’
এ ছাড়াও আছে মালেদা গ্রুপের ফুড কোম্পানি ‘সাকি ফুড’। কোম্পানিটি মাত্র পথচলা শুরু করেছে। অনলাইনভিত্তিক পথচলা শুরু করেছে আরমাস। এটি প্রিমিয়াম ক্লাস বায়ারদের রুচিসম্মত দেশি গার্মেন্ট্স রিটেইল ফ্যাশন হাউজ। আসবে মালেদা মার্ট; এটি একটি রিটেইল সুপার শপ। আসবে মিনিকো; এটি ইলেকট্রনিক্স পণ্য এসেম্বলিং ও রিটেইল প্রতিষ্ঠান। এগুলো পরিকল্পনাধীন। ধীরে ধীরে মালেদা গ্রুপের সেবা ও পণ্য অর্জন করছে স্বদেশি শীর্ষস্থানীয় এবং বিদেশি কোম্পানির আস্থা।
সেবামূলক কাজের সঙ্গেও জড়িত শাখাওয়াত। তিনি বলেন, ‘বিজনেসের পাশাপাশি আমাদের সব সময়ই চিন্তা থাকে জনসেবার। জনস্বার্থে মালেদা গ্রুপ সব সময়ই তৎপর থাকে ভালো ও কল্যাণময় কিছু করার। বিশেষ করে স্বাস্থ্য সচেতনামূলক কার্যক্রমে নিয়মিত ডোনেট করে আসছে। যেমন-সাইক্লিং ক্লাব, ম্যারাথন ও হাফ ম্যারাথন ক্লাব ইত্যাদি।’
পরিশ্রমী এ উদ্যোক্তা আরও বলেন, ‘দীর্ঘ করোনায় মুখ থুবড়ে পড়েছে অনেক প্রতিষ্ঠান। কিন্তু দুঃসহ এ সময়ে লড়াই করে টিকে ছিল অনেকেই। তাদের মধ্যে মালেদা গ্রুপ অন্যতম। টিকে থাকার স্বীকৃতি হিসেবে ‘রাইজিং ইয়ুথ অ্যাওয়ার্ড’ পেয়েছি। বাংলাদেশের শিক্ষামন্ত্রী ড. দীপু মনির হাত থেকে এ অ্যাওয়ার্ড গ্রহণ করে আত্মবিশ্বাস বেড়েছে। বেড়েছে যে কোনো পরিস্থিতিতে টিকে থাকার সাহস।’
পাঠকদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘আমি বিশালতা চাই না, চাই কালের সাক্ষী হতে। শুধু টিকে থাকা নয়, আমি টিকে আছি আমার স্বপ্ন নিয়ে, এ জানানটুকুও আমি দিতে চাই। মা-বাবার দোয়া, স্বপ্ন, সাহস আর আত্মবিশ্বাস—আমার পথচলায় সবচেয়ে মূল্যবান পাথেয়। আমি বেঁচে থাকতে চাই আমার কাজে, আমার সৃষ্টিতে।’
এসইউ/এএসএম