সংবাদ সম্পর্কে বাস্তব ধারণা থাকা জরুরি : শামসুদ্দীন হায়দার ডালিম


প্রকাশিত: ০৫:৫৮ এএম, ১০ জানুয়ারি ২০১৬

শামসুদ্দীন হায়দার ডালিম। দেশের শীর্ষস্থানীয় টেলিভিশন চ্যানেলগুলোতে বিভিন্ন দায়িত্ব পালন করেছেন। তবে সব শ্রেণি-পেশার মানুষের কাছে তিনি বেশি পরিচিত একজন জনপ্রিয় সংবাদ উপস্থাপক হিসেবে। তারকা এ সংবাদ উপস্থাপকের পেশাগত পরিচয়ের বাইরেও বহু পরিচয়  রয়েছে। শামসুদ্দিন হায়দার ডালিম বেসরকারি টেলিভিশন একুশে টেলিভিশনে সংবাদ পাঠক হিসেবে ব্যাপক জনপ্রিয়তা পান। একুশে বন্ধ হওয়ার পর তিনি যোগ দেন এনটিভিতে। এরপর বাংলাভিশনে। সর্বশেষ ছিলেন মাছরাঙ্গা টেলিভিশনে। এখানে শুরু থেকেই চিফ অব নিউজ প্রোডাকশন অ্যান্ড ট্রেনিংয়ের দায়িত্ব পালন করেন।

Shamsuddin-haider-dalim

টেলিভিশন মিডিয়ায় শামসুদ্দিন হায়দার ডালিমের কাজ শুরু কিশোর বয়সে ১৯৮০ সালে ‘ছোট্ট খবর’ অনুষ্ঠানে খবর পাঠের মধ্য দিয়ে। পরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগে পড়াশোনা শেষে ১৯৯৬ সালে রিপোর্টার হিসেবে যোগ দেন সংবাদ সরবরাহকারী সংস্থা অ্যাসোসিয়েটেড প্রেসের টেলিভিশন নেটওয়ার্ক, এপিটিএন’র বাংলাদেশ প্রতিনিধি হিসেবে। ১৯৯৯ সালে বাংলাদেশের প্রথম টেরিস্টেরিয়াল চ্যানেল একুশে টিভি চালু হলে নিউজের নির্বাহী প্রযোজক হিসেবে কাজ শুরু করেন।

বর্তমানে যুক্ত আছেন দেশের শীর্ষস্থানীয় ব্যবসা প্রতিষ্ঠান সামিট গ্রুপের হেড অব পাবলিক রিলেশন্স ও কমিউনিকেশন্স ম্যানেজার হিসেবে। গণমাধ্যমে ক্যারিয়ার নিয়ে তাঁর ব্যক্তিগত ভাবনা এবং পেশা হিসেবে সংবাদ উপস্থাপনা বিষয়ে জাগো জবসের সঙ্গে কথা বলেছেন গুণী এ সংবাদ উপস্থাপক। সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন গোলাম রাব্বী।

Shamsuddin-haider-dalim

জাগো জবস : শুরুতেই আপনার পড়াশোনা সম্পর্কে জানতে চাই-
শামসুদ্দীন হায়দার ডালিম : মির্জাপুর ক্যাডেট কলেজ থেকে পড়ালেখা শেষ করলাম। এরপর ভিন্ন কিছু করার পরিকল্পনার অংশ হিসেবেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সাংবাদিকতা বিভাগের সঙ্গে আমার পথচলা। যদিও আগের ইচ্ছা এবং স্বপ্ন ছিল ডাক্তার হবো। কিন্তু মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষার সময় অসুস্থ হয়ে যাওয়ায় পরীক্ষাই দিতে পারলাম না। তখন ঠিক করি যে, এমন কোনো বিষয়ে পড়ব- যেখানে ভিন্ন একটা টেস্ট আছে, অ্যাডভেঞ্চার আছে, কাজ করার সুযোগ আছে এবং স্বাধীনতা আছে। এককথায় যেটা আমার সহপাঠীদের মধ্যে নরমাললি পড়বে না, সে বিষয়েই আমি পড়বো ঠিক করলাম। এরপর ভাবতে ভাবতে মনে হল সাংবাদিকতা বিষয়টিই হতে পারে আমার জন্য উপযুক্ত।

জাগো জবস :  সংবাদে কাজ শুরু করায় কোন বিষয়টি আপনাকে উদ্বুদ্ধ করেছে?
শামসুদ্দীন হায়দার ডালিম : সত্যি কথা বলতে কি, আমি সবসময় অন্যরকম এক প্রাকৃতিক পরিবেশে বড় হয়েছি। এরপর মির্জাপুর ক্যাডেটে থাকাকালে যেহেতু লিডারশিপের ব্যাপারটি আমার মধ্যে ছিল, হাউজ ক্যাপ্টেন ছিলাম, তখন লেখাপড়ার বাইরেও নানা ধরনের সাংস্কৃতিক, সামাজিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করতাম। শিক্ষকরাও উৎসাহিত করতেন। সাংবাদিকতায় পড়ার সময় কবিতা পড়তাম এবং বিশেষকরে নাট্যচক্র থিয়েটার আমার ক্যারিয়ারে অনেক বড় অবদান রেখেছে।

Shamsuddin-haider-dalim
 
জাগো জবস : আপনি কি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়া অবস্থাতেই গণমাধ্যমে কাজ শুরু করেছিলেন?
শামসুদ্দীন হায়দার ডালিম : আমি ৯০ এর উত্তাল আন্দোলনের সময় ক্যাম্পাসে পা রাখি। এরশাদ বিরোধী আন্দোলনে তখন দেশের আর্থ-সামাজিক ও রাজনৈতিক পরিস্থিতি একটা উলট-পালটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছিলো। খেয়াল করলাম, আমার অনেক বন্ধুরাই বিভিন্ন অফিসে পার্ট টাইম চাকরি কিংবা লেখালেখি শুরু করে দিয়েছে। তবে আমি যুক্ত হলাম থিয়েটারে। নাট্যচক্র নামের একটি সংগঠনে যোগ দিলাম। মূলত গণমাধ্যমে কাজ বা আজকের সংবাদ উপস্থাপক বা প্রফেশনাল খ্যাতির অনেকটাই আজ আমার এই থিয়েটারে কাজের ফসল। তখন টেলিভিশনের জন্য কিছু ডকুমেন্টরিতে নিজেকে যুক্ত করি।

জাগো জবস : সাংবাদিকতায় যুক্ত হলেন কীভাবে?
শামসুদ্দীন হায়দার ডালিম : যেমন সবাই দেশীয় চ্যানেলে কাজ করার পর কাজ শুরু করে আন্তর্জাতিক মিডিয়ায়। কিন্তু আমার ক্ষেত্রে ঘটনাটা উল্টো। মাস্টার্সে পড়া অবস্থাতেই কাজ করার সুযোগ পাই আন্তর্জাতিক সংবাদ সংস্থায়। সে সময় যার নাম ছিলো এপিটিভিতে। যেটা বর্তমান এপিটিএন নামে বিশ্বব্যাপী নির্ভরযোগ্য সংবাদমাধ্যম। সে হিসেবে আমার সংবাদ ক্যারিয়ার কিন্তু টেলিভিশন দিয়ে। তখন সংবাদকর্মী হিসেবে বাংলাদেশের নানা ইস্যুতে রিপোর্ট তৈরি ও ফুটেজ পাঠাতাম। তাইতো একুশে টিভি চালুর সময় সবাই আনকোড়া হিসেবে যোগ দিলেও আমি অভিজ্ঞ ছিলাম।

জাগো জবস : দেশীয় টেলিভিশনে আপনার পথচলার বর্ণনা যদি দিতেন-
শামসুদ্দীন হায়দার ডালিম : আগেই বলেছি, টেলিভিশনে আমার যাত্রা লন্ডনের এপি টেলিভিশনে কাজ করার মধ্য দিয়ে। আর তখনই আমার সৌভাগ্য হয় খ্যাতিমান ফটোগ্রাফার, শিক্ষাবিদ ও গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব এবং অভিজ্ঞ মিশুক মুনির স্যারের সঙ্গে কাজ করার। তিনিই আমাকে একুশে টিভিতে কাজ করার আগ্রহ দেখান। যদিও আমি ইন্টারন্যাশনাল একটি টিভি মাধ্যম ছেড়ে দেশীয়, তাও আবার প্রথম বেসরকারি টিভি, কেমন না কেমন হয়, এমন শঙ্কা থেকে যোগদান করতে চাইছিলাম না। পরে অবশ্য সব হিসেব-নিকেশ বাদ দিয়ে একুশে টেলিভিশনের প্রযোজনা বিভাগের দ্বায়িত্ব পাই। সে হিসেবে দেশের প্রথম সংবাদ প্রযোজক কিন্তু আমিই।

haider-dalim

জাগো জবস : সংবাদ উপস্থাপনায় আসার গল্পটা শুনতে চাই-
শামসুদ্দীন হায়দার ডালিম : অনেকটা কাকতালীয়ভাবেই আমার সংবাদ উপস্থাপনায় আসা। তখন আমি একুশে টেলিভিশনে। একদিন সংবাদ সম্প্রচারের কিছুক্ষণ আগে এক উপস্থাপক জানান, তিনি আসতে পারবেন না। একুশে টিভির বার্তা বিভাগের প্রধান সাইমন ড্রিংকে এ খবর জানালে তিনি এক প্রকার জোর করেই আমাকে সংবাদ উপস্থাপন করতে বাধ্য করেন। এরপর অনেকেই তাকে ফোন করেন, এরমধ্যে হানিফ সংকেত তাকে ফোন করে বললে তিনি সামনের দিনগুলোতে প্রযোজনার পাশাপাশি আমাকে সংবাদ উপস্থাপনার দায়িত্ব দেন।

জাগো জবস : আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে রিপোর্টিং, দেশীয় টিভিতে প্রযোজক ও সংবাদ উপস্থাপক; কোন কাজটাকে বেশি উপভোগ করেন?
শামসুদ্দীন হায়দার ডালিম : যেহেতু আমি সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষার্থী আবার একইসঙ্গে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে আমার শুরুটাই রিপোর্টিং দিয়ে। তাই আমি রিপোর্টিংটা যেমন ইনজয় করি, ঠিক তেমনি সংবাদ প্রযোজক কাজটাও ভালো লাগতো। আবার অন্যদিকে যেহেতু আমি আগে থেকে জানি কীভাবে ক্যামেরা ব্যবহার করতে হবে, কীভাবে মাইক্রোফোন ব্যবহার করতে হবে আর নিউজরুম তো আমার চেনা বহু আগে থেকেই। যার কারণে আমি পাঠকদের কীভাবে বুঝিয়ে বলতে হয় সেটা ভালো পারার কারণে সাধারণ মানুষ আমাকে সংবাদ পাঠক হিসেবে আলাদা পরিচিতি দেয়। আমি অবশ্যই সেটাও উপভোগ করি। এত ঝুঁকি, না আছে চাকরির নিশ্চয়তা, আর না আছে জানের- তবুও মন টানে।

জাগো জবস : বর্তমান ও ভবিষ্যৎ প্রেজেন্টারদের নিয়ে আপনার ভাবনা?
শামসুদ্দীন হায়দার ডালিম : আগেই বলে নেই, এখন অনেক চ্যানেল, বহু সংবাদ উপস্থাপক; যার মধ্যে অনেকে খুবই ভালো করছেন। তারপরও আমরা কেন যেন মনের খোরাকটা বেশিরভাগের থেকেই পাচ্ছি না। তাই এখন যারা সংবাদ উপস্থাপনায় আসছেন তাদের শুধু লিখিত সংবাদ পাঠ করলেই চলবে না; সংবাদ সম্পর্কে বাস্তব ধারণা থাকাটা অত্যন্ত জরুরি। অর্থাৎ তিনি হবেন একজন পরিপূর্ণ সংবাদ সচেতন মানুষ। যিনি প্রথমে সংবাদকে বুঝবেন পরে সঠিক উচ্চারণে সংবাদটি দর্শককে বোঝাবেন।

haider-dalim

জাগো জবস :  সংবাদ উপস্থাপনা সংশ্লিষ্ট সমস্যা থেকে উত্তরণে কী করা উচিত?
শামসুদ্দীন হায়দার ডালিম : প্রত্যেক প্রেজেন্টারকে নিউজ, নিউজ ভ্যালু, এফেক্ট, পারসপেকটিভ, অ্যাঙ্গেল ইত্যাদি জানতে ও বুঝতে হবে। ছবি, ভিজ্যুয়ালকে গুরুত্ব দিতে হবে; একইসঙ্গে সংবাদ পাঠককে এখন পার্ট টাইমার না হয়ে ফুল টাইমার হতে হবে। বেশি জানতে হবে দেশি-বিদেশি সব চ্যানেলের নিউজ দেখতে হবে।

জাগো জবস : আপনার কাছে সফলতা মানে কী?
শামসুদ্দীন হায়দার ডালিম : আমাকে দেখে যদি কেউ অনুপ্রাণিত হন, সেটাই আমার সফলতা।

জাগো জবস : আপনাকে ধন্যবাদ আমাদের সময় দেওয়ার জন্য?
শামসুদ্দীন হায়দার ডালিম : আপনাকেও ধন্যবাদ।

এসইউ/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।