অ্যান্টিগুয়া ও বারবুডায় পড়াশোনা-ক্যারিয়ার

আবু তালহা
আবু তালহা আবু তালহা , লেখক
প্রকাশিত: ১২:৪২ পিএম, ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২২

অ্যান্টিগুয়া ও বারবুডা আমেরিকার ওয়েস্ট ইন্ডিজের একটি সার্বভৌম দ্বীপ দেশ, যা ক্যারিবিয়ান সাগর এবং আটলান্টিক মহাসাগরের মধ্যে অবস্থিত। এটি দুটি প্রধান দ্বীপ নিয়ে গঠিত। অ্যান্টিগুয়া ও বারবুডা প্রায় ৪০ কিলোমিটার (২৫ মাইল) দূরে অবস্থিত। আরও আছে ছোট দ্বীপ যেমন গ্রেট বার্ড, গ্রিন, গুয়ানা, লং, মেডেন, প্রিকলি পিয়ার, ইয়র্ক আইল্যান্ডস, রেডোন্ডা প্রভৃতি।

দেশটির আয়তন প্রায় ৪৪০ বর্গমাইল। দেশটিতে স্থায়ী জনসংখ্যা প্রায় ৯৭,১২০ জন। যার ৯৭% অ্যান্টিগায় বসবাস করে। এর রাজধানী, বৃহত্তম বন্দর ও শহর হলো অ্যান্টিগুয়ার সেন্ট জনস। কড্রিংটন বারবুডার বৃহত্তম শহর। অ্যান্টিগুয়া ও বারবুডা লিওয়ার্ড দ্বীপপুঞ্জের মাঝখানে লেসার অ্যান্টিলেসের অংশ। মোটামুটি নিরক্ষরেখার ১৭° উত্তরে। অ্যান্টিগুয়ার প্রায় ৪০ কিলোমিটার (২৫ মাইল) দক্ষিণ-পশ্চিমে রেডোন্ডা নামক ছোট, পাথুরে দ্বীপটি অবস্থিত। যা জনবসতিহীন। দেশটির মানুষ নিজেদের অ্যান্টিগুয়ান ও বার্বুডান বলে পরিচয় দিয়ে থাকেন। দেশটি সাদা বালির সৈকত হিসেবে বিশ্বখ্যাত।

দেশটি ১ নভেম্বর ১৯৮১ সালে যুক্তরাজ্য থেকে স্বাধীনতা লাভ করে। অ্যান্টিগুয়া ও বারবুডা কমনওয়েলথ সদস্যভুক্ত দেশ। দ্বিতীয় এলিজাবেথ দেশটির রাষ্ট্রপ্রধান। ইংরেজি হলো দেশটির সরকারি ভাষা। সেখানে স্প্যানিশ ভাষায়ও প্রায় ১০,০০০ বাসিন্দা কথা বলে।

অ্যান্টিগুয়া ও বারবুডার অর্থনীতি বিশেষ করে পর্যটনের ওপর নির্ভরশীল, যা জিডিপির প্রায় ৮০%। তবে প্রতিবেশী দেশ সেন্ট কিটস এবং নেভিসের মতো অ্যান্টিগুয়া ও বারবুডার ব্যক্তিগত আয়কর প্রদান করতে হয় না। অ্যান্টিগুয়া ও বারবুডার সর্বাধিক জনবহুল শহরগুলো বেশিরভাগই অ্যান্টিগা, সেন্ট জনস, অল সেন্টস, পিগগটস এবং লিবার্টা। বারবুডার সবচেয়ে জনবহুল শহর হলো কড্রিংটন।

অ্যান্টিগুয়া ও বারবুডার রাজনীতি একক, সংসদীয়, প্রতিনিধিত্বমূলক গণতান্ত্রিক রাজতন্ত্রের কাঠামোর মধ্যে সঞ্চালিত হয়। যেখানে রাষ্ট্রের প্রধান হলেন রাজা। যিনি গভর্নর-জেনারেলকে ভাইস-রেগাল প্রতিনিধি হিসেবে নিয়োগ করেন। এলিজাবেথ দ্বিতীয় হলেন অ্যান্টিগুয়া ও বারবুডার বর্তমান রানী। ১৯৮১ সালে যুক্তরাজ্য থেকে দ্বীপগুলোর স্বাধীনতার পর থেকে তিনি এ পদে দায়িত্ব পালন করছেন। বর্তমানে রানীর প্রতিনিধিত্ব করছেন গভর্নর-জেনারেল স্যার রডনি উইলিয়ামস। প্রধানমন্ত্রী, বর্তমানে গ্যাস্টন ব্রাউনের (২০১৪-) পরামর্শে গভর্নর জেনারেল কর্তৃক মন্ত্রীদের একটি পরিষদ নিযুক্ত করা হয়। প্রধানমন্ত্রী হলেন সরকার প্রধান।

পর্যটন অর্থনীতিতে আধিপত্য বিস্তার করে, যা মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) অর্ধেকেরও বেশি। অ্যান্টিগুয়া তার অনেক বিলাসবহুল রিসোর্টের জন্য একটি অতি-উচ্চ ভ্রমণ গন্তব্য হিসেবে বিখ্যাত। প্রতিবছর দেশটিতে প্রায় ১ মিলিয়নের বেশি ট্যুরিস্ট বেড়াতে আসেন। আমেরিকানদের সংখ্যাই উল্লেখযোগ্য। সাধারণত জুলাই-সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সময়কে ট্যুরিস্ট টাইম হিসেবে বিবেচনা করা হয়।

দেশটির পাসপোর্ট দিয়ে ১৫০টি দেশে ভিসা ছাড়াই ভ্রমণ করা যায়। বিশ্বে অ্যান্টিগুয়ান পাসপোর্ট র্যাঙ্কিং ৩০ সূচকে। দেশটির মাথাপিছু আয় ১৮,৪০০ ডলার। অ্যান্টিগুয়া ও বারবুডা দেশে বিনিয়োগের মাধ্যমে নাগরিকত্ব পাওয়া একটি সহজ বিষয়। তা ছাড়া কোনো অ্যান্টিগুয়ান নাগরিককে বিয়ে করলে ৩ বছরের মধ্যে নাগরিকত্ব পাওয়া যায়। কোনো বিদেশি বৈধভাবে ৭ বছর বসবাস করলে ন্যাচারালাইজ সিটিজেনশিপ পাওয়া যায়।

এখানে বিনিয়োগ, ব্যাংকিং এবং আর্থিক পরিষেবাগুলোও অর্থনীতির একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। অ্যান্টিগায় রয়্যাল ব্যাংক অব কানাডা (আরবিসি) এবং স্কটিয়া ব্যাংকের মতো বিশ্বখ্যাত ব্যাংকগুলোর শাখা আছে। এ ছাড়া প্রাইজ ওয়াটার হাউজ কুপারস, ইউএস সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য।

অ্যান্টিগুয়া ও বারবুডার শিক্ষাব্যবস্থা ব্রিটিশ শিক্ষাব্যবস্থার ওপর ভিত্তি করে গড়ে উঠেছে। অ্যান্টিগুয়া ও বারবুডায় ৫-১৬ বছর বয়সী শিশুদের জন্য শিক্ষা বাধ্যতামূলক এবং বিনা মূল্যে। স্কুল বছর সাধারণত সেপ্টেম্বরে শুরু হয় এবং পরের বছরের জুন মাসে শেষ হয়। স্কুলের শিক্ষা সংক্রান্ত সব খরচ সরকার দ্বারা পরিচালিত হয়।

১৯৭২ সালে কারিগরি এবং শিক্ষক প্রশিক্ষণ কলেজগুলো একত্রিত হয়ে অ্যান্টিগা স্টেট কলেজ গঠন করে। বিশ্ববিদ্যালয়ের বাইরে অতিরিক্ত প্রশিক্ষণের বিকল্প হিসেবে অ্যান্টিগুয়া ও বারবুডা ইনস্টিটিউট অব ইনফরমেশন টেকনোলজি (এবিআইআইটি) এবং অ্যান্টিগুয়া অ্যান্ড বারবুডা হসপিটালিটি ট্রেনিং ইনস্টিটিউট (এবিএইচটিআই) গঠন করা হয়।

অ্যান্টিগুয়া দ্বীপে বর্তমানে তিনটি বিদেশি মালিকানাধীন লাভজনক অফশোর বা বিদেশি মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় আছে। দ্বীপের মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় বেশিরভাগই বিদেশি ছাত্র-ছাত্রী উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করে। তবে শিক্ষার্থীরা স্থানীয় অর্থনীতি এবং স্বাস্থ্যসেবায় অবদান রাখে।

বিশ্ববিদ্যালয় ৩টি হলো:
১. আমেরিকান ইউনিভার্সিটি অব অ্যান্টিগুয়া (এইউএ) ২০০৪ সালে প্রতিষ্ঠিত
২. ইউনিভার্সিটি অব হেলথ সায়েন্সেস অ্যান্টিগুয়া (ইউএইচএসএ) ১৯৮২ সালে প্রতিষ্ঠিত
৩. মেট্রোপলিটন ইউনিভার্সিটি কলেজ অব মেডিসিন।

দেশটির সংস্কৃতি মূলত পশ্চিম আফ্রিকান এবং ব্রিটিশ সাংস্কৃতিক প্রভাবের মিশ্রণে গঠিত। দেশটির জাতীয় খেলা ক্রিকেট। অন্যান্য জনপ্রিয় খেলার মধ্যে আছে ফুটবল, বোট রেসিং ও সার্ফিং। অ্যান্টিগা সেলিং সপ্তাহ স্থানীয় এবং বিদেশি দর্শকদের আকর্ষণ করে।

দেশটির ভিসা ইমিগ্রেশন ব্যবস্থা সম্পূর্ণ সয়ংক্রিয় বা ডিজিটাল। দেশটিতে উচ্চশিক্ষার (ডাক্তারি পড়াশোনা), ভ্রমণ, বিনিয়োগ বা ইলেকট্রনিক অথোরাইজেশন ভিসার জন্য আবেদন করতে হয়। বাংলাদেশিদের ভিসার জন্য ১০-১২ কার্যদিবস সময় লাগে। ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল এয়ারপোর্ট থেকে টার্কিশ, কাতার, এমিরেটস, এয়ার ইন্ডিয়া অথবা বাংলাদেশ বিমানে লন্ডন ট্রানজিট হয়ে ব্রিটিশ এয়ারওয়েজ অথবা ভার্জিন আটলান্টিক এয়ারওয়েজের মাধমে সরাসরি অ্যান্টিগুয়া ভি সি বার্ড ইন্টারন্যাশনাল এয়ারপোর্টে পৌঁছতে পারবেন।

এসইউ/এএসএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।