উদ্যোক্তা রাজিবের এগিয়ে চলার গল্প

সাজেদুর আবেদীন শান্ত
সাজেদুর আবেদীন শান্ত সাজেদুর আবেদীন শান্ত , ফিচার লেখক
প্রকাশিত: ০৪:৪৯ পিএম, ২৪ ডিসেম্বর ২০২১

মো. তাজুল ইসলাম রাজিবের বাবা আলহাজ্ব মো. কাশেম ছিলেন ব্যবসায়ী। নব্বই দশকের শেষের দিকে আজাদ নীট নামের প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে তিনি ব্যবসা শুরু করেন। তারপর নানা প্রতিকূলতার মধ্য দিয়ে নারায়ণগঞ্জে দাঁড় করিয়েছেন ডাইং ও গার্মেন্টস প্রতিষ্ঠান। এই প্রতিষ্ঠান থেকে প্রায় ৩ হাজার কর্মকর্তা, কর্মচারী ও শ্রমিক খুঁজে পেয়েছেন কর্মসংস্থান।

১৯৮৬ সালের ১৪ মার্চ নারায়ণগঞ্জে জন্মগ্রহণ করেন রাজিব। নারায়ণগঞ্জ আদর্শ স্কুল থেকে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক সম্পন্ন করেন। পরে সরকারি তোলারাম বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ থেকে পড়াশোনা শেষ করেন তিনি। স্কুলজীবন থেকেই মূলত রাজিবের ব্যবসার প্রতি আগ্রহ জন্মে। স্কুল শেষে সবাই যখন বিনোদন এবং খেলাধুলায় মেতে উঠত; তখন রাজিব সময় কাটাতেন বাবার ব্যবসায়িক কর্মকাণ্ডে। পর্যবেক্ষণ করতেন সবকিছু। তার আগ্রহ দেখে বাবা কলেজ জীবনেই তাকে প্রতিষ্ঠানের পরিচালকের দায়িত্ব দেন। সেই থেকে সুনামের সঙ্গে ব্যবসা পরিচালনা করে আসছেন।

তবে মহামারি করোনাভাইরাসের কারণে রাজিব নিজ প্রতিষ্ঠান এবং প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে জড়িত সবার কথা চিন্তা করেন। সে চিন্তা থেকেই বায়োফ্লক পদ্ধতিতে মাছ চাষের চিন্তা আসে তার মাথায়। যেমন চিন্তা তেমনই কাজ। নেমে পড়েন বায়োফ্লক পদ্ধতি সম্পর্কে জানতে। কিন্তু পর্যাপ্ত তথ্যের অভাবে কিছুই করতে পারছিলেন না।

পরে ইন্টারনেটের কল্যাণে আমেরিকান লেখক ডা. এরামের একটি বই খুঁজে পান। অর্ডার করে আমেরিকা থেকে নিয়ে আসেন বইটি। শুরু করেন গবেষণা। এরই মধ্যে উঠে যায় লকডাউন। কিছুটা স্বাভাবিক হতে শুরু করে করোনা পরিস্থিতি। তখন আগের মতো সময় দিতে থাকেন নিজ ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে। অফিস শেষে বাড়ি ফিরে কাজ করতে থাকেন বায়োফ্লক নিয়ে।

এক সময় কিনে নিলেন বায়োফ্লকের বিভিন্ন যন্ত্রপাতি। মহামারির কারণে বেকার হয়ে পড়া তরুণদের কর্মসংস্থানের সুযোগ করে দিলেন। কয়েকজনকে সঙ্গে নিয়ে তৈরি করলেন আজাদ ফিশারিজ নামে নতুন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। প্রতিষ্ঠানে নিযুক্ত যুবকদের নিজ অর্থায়নে জেলা মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর থেকে প্রশিক্ষণ করিয়ে কাজ শুরু করলেন পুরো উদ্যমে। বাড়ির পরিত্যক্ত স্থানকে কাজে লাগিয়ে তৈরি করেন দেশি-বিদেশি মাছের খামার। যেখানে আছে ৩ লাখ ৮০ হাজার লিটার পানি ধারণ ক্ষমতার ছোট-বড় আটটি চৌবাচ্চা।

রাজিব এখন নিজ জেলায়ই নয়, সারাদেশে সরবরাহ করছেন দেশি-বিদেশি মাছ। পাশাপাশি তার ব্যবহারিক জ্ঞান ছড়িয়ে দিতে চান তরুণদের মাঝে। তাই কোনো প্রকার অর্থ ছাড়াই বায়োফ্লক বিষয়ে নিজে শেখার পাশাপাশি চেষ্টা করেন অন্যদেরও শেখাতে। তিনি মনে করেন, কোনো ব্যবসাই ছোট নয়। ইচ্ছাশক্তি আর পরিশ্রমের সংমিশ্রণে যে কোনো ব্যবসায়ই সফল হওয়া সম্ভব।

তরুণদের কাছে রাজিব এখন আদর্শ দৃষ্টান্ত। যেখানে সিংহভাগ ব্যবসায়ীর ছেলে-মেয়ে আরাম-আয়েশে বা বিদেশে পাড়ি জমিয়ে জীবনযাপন করেন; সেখানে তিনি নিজের দেশেই থাকতে চান। তরুণদের নিয়ে গড়তে চান এমন আরও প্রতিষ্ঠান।

বর্তমানে আজাদ নীটের পাশাপাশি আজাদ টেক্সটাইলের পরিচালক, কাইফ ডেভেলপমেন্ট লিমিটেডের চেয়ারম্যান এবং আজাদ ফিশারিজের প্রোপ্রাইটর। তিনি নিজ এলাকা রসুলবাগ যুবসংঘের সভাপতি, নারায়ণগঞ্জ ফুটবল একাডেমির পৃষ্ঠপোষক ও চেয়ারম্যান, নারায়ণগঞ্জ ক্লাব লিমিটেডের সদস্য। এ ছাড়াও নানা সামাজিক এবং ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সম্পৃক্ত।

এসইউ/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।