আবেদনে অর্থ না নেওয়া প্রসঙ্গে


প্রকাশিত: ০৯:৩৯ এএম, ২২ ডিসেম্বর ২০১৫

বাংলাদেশের মতো স্বল্পোন্নত দেশগুলোয় উচ্চশিক্ষা অর্জন একটি কঠিন বিষয়। কারণ এসব দেশে মধ্যবিত্ত ও নিচু আয়ের মানুষ বেশি। পরিবারের সদস্য সংখ্যা বেশি হলে অনেক ক্ষেত্রেই উচ্চশিক্ষা অর্জন সম্ভব হয়ে ওঠে না। পরিবারের হাল ধরতে হয়। ঝুঁকি নিয়ে বিদেশে পাড়ি দিতে হয়। এরপরও উচ্চশিক্ষা থেমে থাকে না। চলতে থাকে অনেক কষ্টে। অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায়, বাবা-মা ভিটেবাড়ি বিক্রি করেও সন্তানকে পড়ালেখা করান। অনার্স, মাস্টার্স শেষ করান। কিন্তু আমাদের মতো দেশগুলোয় অনার্স, মাস্টার্স শেষ করলেই চাকরি পাওয়া যাবে এমন নিশ্চয়তা কেউ দিতে পারে না।

উচ্চশিক্ষিতদের মধ্যেই বেকারত্বের হার বেশি। অনার্স, মাস্টার্স করে একটা ছেলে যদি বসে থাকে, তাহলে এটা যে তার জন্য কত বড় অপমান তা কেবল ভুক্তভোগীই বোঝে। বাবা-মা চাপ দিতে থাকেন। আত্মীয়স্বজন কটূক্তি করতে থাকেন। চারদিকে সমালোচনার ঝড় বইতে থাকে। প্রতিবেশী বা আশপাশে যারা থাকে, দেখা যায় তাদের অনেকে স্বল্প বয়সে বিদেশে গিয়ে ভালো অর্থ রোজগার করছে। আর্থিক সচ্ছলতা আসছে। ওরাও টিটকারি করতে ছাড়ে না। এ অবস্থায় বেশির ভাগ মাস্টার্স ডিগ্রিধারীর মনে হয়, মাস্টার্স পাস করে অনেক বড় ভুল করে ফেলেছে সে।

বেকার অবস্থায় কেউ অর্থ দিতে চায় না। পড়ালেখাকালীন জমিজমা বিক্রি করে অর্থ দিলেও বেকার মাস্টার্স পাসধারীদের কেউ অর্থ দিতে চায় না। অথচ সরকারি চাকরিতে আবেদন করতে গেলে ১০০ থেকে ৭০০ টাকা পর্যন্ত দিতে হয় ট্রেজারি চালান, ব্যাংক ড্রাফট, পে-অর্ডার, পোস্টাল অর্ডার ইত্যাদির মাধ্যমে। দিন দিন এ অংক বাড়ছে। ৫০০ টাকার ফি করা হয়েছে ৭০০ টাকা। নন-ক্যাডারের যেকোনো পদে আবেদনের জন্য ৫০০ টাকা করে দিতে হচ্ছে।

চাকরিপ্রার্থীদের সব ধরনের চাকরিতেই আবেদন করতে হয়। কোনটিতে চাকরি হবে কেউ বলতে পারে না। ১০০ পোস্টের জন্য ১ লাখ আবেদন পড়ে। একজন চাকরিপ্রার্থীকে কত টাকা চাকরির আবেদন বাবদ খরচ করতে হয় তা সহজেই অনুমেয়। সরকার যদি সদয় হয়, তাহলে এই ফি থেকে বেকার চাকরিপ্রার্থীদের মুক্তি দিতে পারে।

অনেক বেসরকারি সংস্থা আছে যারা চাকরি প্রার্থীদের কাছ থেকে কোনো অর্থ নেয় না। বিশেষ করে ব্যাংকগুলো। অনলাইনে আবেদন করতে হয়। তারা শর্টলিস্ট করে প্রবেশপত্র পাঠায়। সরকারি পর্যায়ে বাংলাদেশ ব্যাংকেও আবেদন করতে কোনো অর্থ দিতে হয় না। বাকি সব ক্ষেত্রেই পরীক্ষার ফি বাবদ অর্থ দিতে হয়। বেসরকারি ব্যাংকগুলো যদি এক্ষেত্রে ছাড় দিতে পারে, তাহলে সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো কেন পারবে না?

বেকার চাকরি প্রার্থীদের সমস্যার কথা বিবেচনা করে তাদের কাছ থেকে কোনো অর্থ না নেয়ার জন্য সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।

এসইউ/আরআইপি

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।