জীবন বীমা কেন করবেন?
রিয়াজুল হক
জীবন বীমার ক্ষেত্রে আমাদের অনেকের একধরনের অনীহা কাজ করে। আমরা বিষয়টিকে তেমন গুরুত্ব দেই না বা দিতে চাই না। অনেকেই মনে করেন, জীবন তো চলেই যাচ্ছে। তাহলে শুধু শুধু আর প্রিমিয়াম দিয়ে কী লাভ? কেউ কেউ জীবন বীমার প্রিমিয়ামকে অহেতুক অপব্যয় মনে করে থাকেন, যা আদৌ সঠিক নয়।
আমারই এক পরিচিত বন্ধু কয়েকদিন আগে ব্লাড ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়েছেন। খরচের পরিমাণ কেমন হবে, সেটা আমরা মোটামুটিভাবে সবাই জানি। অনেক মানুষ প্রতিনিয়তই দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছেন। অথচ চিকিৎসার সময় সামান্য টাকার জন্য অন্যের কাছে হাত পাততে হয়।
আমরা যদি একটু সচেতন হই, সুস্থ থাকা অবস্থায় যদি আমরা জীবন বীমা সম্পর্কে ধারণা রাখি এবং যথোপযুক্ত জীবন বীমা গ্রহণ করি, তাহলে বিপদে পড়লে অবশ্যই ভালো আর্থিক সুবিধা পেতে পারি। জীবন বীমা করার সময় অবশ্যই বিভিন্ন শর্তাবলী ভালোভাবে পড়ে নেওয়া উচিত।
আড্ডায় আমার অনেক বন্ধু-বান্ধব বলে থাকেন, তুমি তো ভালো চাকরি করছো। অবসরের পর পেনশন পাবে। আক্ষেপের সুরে বলতে শুনি, যদি সরকারি চাকরি করতাম। তাহলে চাকরি থেকে অবসরের পর নির্দিষ্ট অঙ্কের টাকা পেনশন পেতাম। অথচ জীবন বীমার বিভিন্ন স্কিমের মাধ্যমে এসব সমস্যার সমাধান অনেকাংশে সম্ভব।
একটি উদাহরণ দেই, বিষয়টি পরিষ্কার হবে। জীবন বীমা কর্পোরেশনের একটি পলিসি স্কীম হচ্ছে- ব্যক্তিগত পেনশন পলিসি। যেকোনো পেশায় নিয়োজিত মানুষ এ পলিসি নিতে পারেন। এর অন্যতম প্রধান আকর্ষণ হলো- কর্মজীবনে অকাল মৃত্যুতে পরিবারের জন্য আর্থিক নিরাপত্তা বিধান করা এবং অবসর জীবনের জন্য আমরণ পেনশনের ব্যবস্থা করা হয়।
পেনশন প্রদান শুরুর ১০ (দশ) বছরের মধ্যে বীমাগ্রহীতার মৃত্যু হলে দশ বছরের বাকি সময়ের জন্য পেনশনভোগীর মনোনীতকে (নমিনীর) পেনশন লাভের গ্যারান্টি প্রদান করা হয়। পেনশন প্রদান শুরুর নির্ধারিত তারিখের আগে বীমাগ্রহীতার স্বাভাবিক মৃত্যু হলে নিম্নোক্ত বিকল্পের যেটিতে বেশি অর্থ পাওয়া যায়, তা মনোনীতকে এককালীন পরিশোধের নিশ্চয়তা প্রদান করা হয়।
ধরুন, যদি ৩৫ বছর বয়স্ক কোনো ব্যক্তি ৫৭ বছর বয়স পূর্তির পর থেকে মাসিক ৫,০০০ টাকা পেনশনের জন্য একটি পেনশন বীমা পলিসি গ্রহণ করেন। এক্ষেত্রে মাসিক ১০০ টাকার পেনশনের জন্য একবছরের প্রিমিয়াম ১৮৪.২০ টাকা। আবার মাসিক ৫,০০০ টাকার জন্য একবছরের প্রিমিয়াম ১৮৪.২০ x ৫০ বা ৯,২১০ টাকা অর্থাৎ ৫৭ বছর হওয়ার আগ পর্যন্ত বার্ষিক প্রিমিয়াম দেবেন ৯,২১০ টাকা।
মেয়াদপূর্তি অর্থাৎ ৫৭ বছর পর তিনি যতদিন বেঁচে থাকবেন; ততদিন মাসিক ৫০০০ টাকা করে পেনশন পাবেন, যা তার ব্যাংক হিসাবে পৌঁছে যাবে। একইভাবে আপনি প্রিমিয়ামের পরিমাণ বাড়িয়ে দিয়ে অবসর সময়ে বেশি পেনশন পেতে পারেন।
আমাদের প্রয়োজনেই জীবন বীমার গুরুত্ব সম্পর্কে উপলব্ধি করা প্রয়োজন। সময় কখন, কোথায়, কোন জায়গায় আমাদের দাঁড় করাবে আমরা কেউই জানি না।
লেখক: অর্থনৈতিক বিশ্লেষক এবং যুগ্ম পরিচালক, বাংলাদেশ ব্যাংক।
এসইউ/জিকেএস