কণ্ঠকেই পেশার মাধ্যম হিসেবে বেছে নিলেন শারমিন

এস কে শাওন এস কে শাওন , উপজেলা প্রতিনিধি, সিদ্ধিরগঞ্জ (নারায়ণগঞ্জ)
প্রকাশিত: ১২:৫১ পিএম, ১৪ মার্চ ২০২১

‘কণ্ঠের কাজ ছিল আমার নেশা। বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ চুকিয়ে তাই আমি এটিকেই পেশা হিসেবে নিয়েছি। ধরা-বাঁধা চাকরিতে আমার আগ্রহ কম থাকায় কণ্ঠের যত কাজ আছে; সেগুলো নিয়েই মোটামুটি ব্যস্ত সময় পার করছি।’- কথাগুলো বললেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থী জেবুন নাহার শারমিন। তিনি একাধারে আবৃত্তিশিল্পী, উপস্থাপক, ভয়েস ওভার আর্টিস্ট ও আবৃত্তি প্রশিক্ষক।

শারমিনের জন্ম কুমিল্লার নাঙ্গলকোট উপজেলায়। বাবার চাকরির সুবাদে চট্টগ্রাম শহরে বেড়ে ওঠা। উচ্চ মাধ্যমিক শেষ করে ২০১২ সালে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিসংখ্যান বিভাগে পড়ালেখার সুযোগ করে নেন। ছোটবেলা থেকে কবিতার প্রতি আগ্রহ থাকায় বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের শুরুতেই চবি আবৃত্তি মঞ্চের সঙ্গে যুক্ত হন।

jagonews24

তখন থেকেই সংগঠনের প্রতিটি কাজে সক্রিয় ভূমিকা রেখেছেন। চবি আবৃত্তি মঞ্চে যুক্ত হওয়ার পর থেকে নিয়মিত অনুষ্ঠানে অংশ নেওয়া, ব্যবস্থাপনায় থাকা, সাংগঠনিকভাবে নিজেকে দক্ষ করে তোলাই ছিল তার কাজ। সময়ের সাথে সাথে ক্যাম্পাসে ও শহরে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে উপস্থাপকের দায়িত্ব পালন করতে শুরু করেন। ক্যাম্পাসের সাংস্কৃতিক অঙ্গন দাপিয়ে বেড়ানো শারমিন ২০১৬ সালে সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব গ্রহণ করেন।

এত অল্প সময়ে কিভাবে সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পেয়েছিলেন জানতে চাইলে শারমিন বলেন, ‘বিষয়টি চমকপ্রদ ছিল। সংগঠনে যুক্ত হওয়ার মাত্র দুই বছরের মধ্যে এ পদ পাওয়া অপ্রত্যাশিত ছিল। কতটা কাজ করেছি জানি না। তবে আমাদের প্রধান উপদেষ্টা মাছুম আহমেদ স্যার ও বড় আপু-ভাইয়ারা ভালোবেসে, আস্থা রেখেই আমাকে এ দায়িত্ব দিয়েছেন। সত্যি বলতে, পদের জন্য নিজেকে উন্নত করার চেষ্টা করিনি কখনোই। সংগঠনকে ভালোবেসে নিজের সর্বোচ্চটা দিয়ে কাজ করার চেষ্টা করেছিলাম। হয়তো এরই ফলাফল।’

jagonews24

তিনি এখন এ সংগঠনের উপদেষ্টা হিসেবে যুক্ত আছেন। আবৃত্তিতে দক্ষতার প্রমাণ দিয়ে বাংলাদেশ বেতার চট্টগ্রাম কেন্দ্রে তালিকাভুক্ত আবৃত্তি শিল্পী হিসেবে কাজ করছেন। চট্টগ্রাম ও চট্টগ্রামের বাইরে সিলেট, কক্সবাজারে সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও কর্পোরেট অনুষ্ঠানগুলোয় উপস্থাপনা করেন তিনি।

পাশাপাশি কবি নজরুল একাডেমি চট্টগ্রামে আবৃত্তি বিভাগের প্রধান প্রশিক্ষকের দায়িত্ব পালন করছেন। নিজের আগ্রহ ও স্বামীর উৎসাহ থাকায় চ্যালেঞ্জিং এ কাজগুলো করা সহজ হয়ে ওঠে। একজন নারী হিসেবে সমাজে যে সমস্যায় পড়তে হয়; সেগুলো তো আছেই। যদিও এসব থেকে উৎরে ওঠার চেষ্টা করছেন প্রতি মুহূর্তেই।

jagonews24

ভবিষ্যতে অন্য কোনো পেশায় যুক্ত হবেন কি-না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমি আবৃত্তি, উপস্থাপনা, সংবাদপাঠ, নেপথ্য কণ্ঠদান, আবৃত্তি প্রশিক্ষণ এসব কাজেই থাকার চেষ্টা করছি। সময়ের প্রয়োজনে কোনো চাকরিতেও যুক্ত হতেও পারি। তবে এখনো তা অনিশ্চিত।’

আবৃত্তিতে অর্জনের গল্প বলতে গিয়ে শারমিন বলেন, ‘বিভিন্ন সংগঠন বা প্রতিষ্ঠান থেকে জাতীয়ভাবে কোনো পুরস্কার পেলে সেটাকে আমরা বাহ্যিকভাবে অর্জন বলে থাকি। আমার বয়সে যখন সবাই প্রতিযোগিতায় অংশ নেয়; তখন আমি প্রতিযোগিতা আয়োজনে ব্যস্ত ছিলাম। ফলে সেদিকে যাওয়া হয়নি কখনো। তবে আমার কাছে আবৃত্তির মাধ্যমে অর্জন হলো- মূলত আমার আত্মবিশ্বাস। আমার কাজের ক্ষেত্র যতটুকু বিস্তৃত; তা পুরোটাই আবৃত্তির কারণে। কাজের ক্ষেত্রে আমার ওপর মানুষের ভরসা, বিশ্বাস, আস্থা রাখার বিষয়গুলোই আমার অর্জন, আমার সাফল্য।’

jagonews24

কণ্ঠের কাজ নিয়ে শারমিনের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা আছে। সামনে তিনি আরও বড় পরিসরে বহুমাত্রিক কবিতার আবৃত্তি নিয়ে কাজ করতে চান। আবৃত্তির পাশাপাশি কবিতা, কথোপকথন নিয়ে কাজ করার আগ্রহের কথাও জানিয়েছেন তিনি। অ্যালবামের চেয়ে এখন ফেসবুক, ইউটিউব ভিডিও নিয়েই সবার আগ্রহ। তাই সে পথেই হাঁটতে চান তিনি।

যারা আবৃত্তিতে আসতে চান, তাদের উদ্দেশ্যে শারমিনের অভিমত, ‘যদি মন থেকে কবিতা ভালো লাগে, কবিতার প্রতি ভালোবাসা কাজ করে, তাহলেই আবৃত্তিতে আসুন। আবৃত্তিতে আসতে চাইলে বেশি বেশি কবিতা পড়তে হবে এবং তা আত্মস্থ করতে হবে। তাহলেই আবৃত্তিতে সফল হওয়া সম্ভব।’

এসইউ/এএসএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।