একবার অংশগ্রহণ করেই বিসিএস ক্যাডার হয়েছেন অরুণ

জাগো নিউজ ডেস্ক
জাগো নিউজ ডেস্ক জাগো নিউজ ডেস্ক
প্রকাশিত: ০৪:৩৬ পিএম, ১০ মার্চ ২০২১

অরুণ কুমার বিশ্বাসের বাবা বঙ্কিম চন্দ্র বিশ্বাস, মা মালতী দেবী। তারা দু’জনই শিক্ষকতা করতেন। জন্ম গোপালগঞ্জ জেলার কোটালীপাড়ার জহরের কান্দি গ্রামে। এসএসসি পাস করেন পূর্ব কোটালীপাড়া ইউনিয়ন উচ্চ বিদ্যালয় থেকে। তারপর নটর ডেম কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করেন। অসামান্য মেধার স্বীকৃতি হিসেবে নটর ডেম কলেজ থেকে লাভ করেন ‘সার্টিফিকেট অব মেরিট’ ও ‘অ্যাওয়ার্ড ফর এক্সেলেন্স’।

তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজি সাহিত্যে সম্মানসহ স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন। ২২তম বিসিএসের মাধ্যমে ২০০৩ সালে ‘কাস্টমস অ্যান্ড এক্সাইজ’ ক্যাডারে ‘সহকারী কমিশনার’ হিসেবে যোগদান করেন। পরে বিশ্বব্যাংকের বৃত্তি নিয়ে লন্ডন যান। সেখানে আন্তর্জাতিক মানবসম্পদ ব্যবস্থাপনা বিষয়ে ডিসটিঙ্কশনসহ পুনর্বার মাস্টার্স কোর্স সম্পন্ন করেন।

সম্প্রতি তার বিসিএস জয়ের গল্প ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে কথা হয় জাগো নিউজের সঙ্গে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন সাজেদুর আবেদীন শান্ত-

jagonews24

জাগো নিউজ: আপনার ছোটবেলা কেমন কেটেছে?
অরুণ কুমার বিশ্বাস: শৈশব কেটেছে গ্রামে। সোনালি শৈশব। সেই দুরন্ত দুর্বার সময়ের কথা মনে হলে এখনো আপ্লুত হয়ে উঠি। সোঁদা মাটির গন্ধ এখনো যেন নাকে এসে ঝাপটা দেয়। বস্তুত শৈশবের অনুভূতি ভোলা যায় না।

জাগো নিউজ: পড়াশোনায় কোনো প্রতিবন্ধতা ছিল কি?
অরুণ কুমার বিশ্বাস: পড়াশোনায় প্রতিবন্ধকতা বলে তেমন কিছু ছিল না। বাবা-মা শিক্ষক হওয়ার সুবাদে সময়মতো সঠিক দিক-নির্দেশনা পেয়েছি। খুব মেধাবী বলে নিজেকে কখনো দাবি করিনি। তবে লক্ষ্যে অবিচল ছিলাম। বরাবরই পরিশ্রমী ছিলাম। খানিকটা জেদিও। আমি বিশ্বাস করতাম যে, মানুষ চাইলে অনেক কিছুই করতে পারে। তবে সেই চাওয়াটা যৌক্তিক ও জোরদার হতে হবে। আকাশ কুসুম কল্পনা না করাই ভালো। আমি প্রায়ই একটি কথা বলি যে, স্বপ্ন দেখতেও যোগ্যতা লাগে। আর সবার ভেতরকার তাগিদ বা আত্মশক্তি সমান নয়। তাই অন্যের সঙ্গে নয় বরং নিজেকে নিজের সঙ্গে তুলনা করুন। গতকালের আমির সঙ্গে আজকের আমি কতটা সমুন্নত, সেটা ভাবলেই সামনের পথে এগিয়ে যাওয়া সম্ভব।

jagonews24

জাগো নিউজ: বিসিএসের স্বপ্ন দেখেছিলেন কখন থেকে?
অরুণ কুমার বিশ্বাস: নাহ, বিসিএস দেওয়ার আগ্রহ খুব একটা ছিল না। আমি বরাবরই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হতে চেয়েছিলাম। তবে বন্ধুদের পাল্লায় পড়ে অনার্স পড়াকালীন একবার মাত্র বিসিএস পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেছি, সফলও হয়েছি।

জাগো নিউজ: কীভাবে বিসিএসের প্রস্তুতি নিতে হয়? ভাইভার ধরন সম্পর্কে যদি বলতেন-
অরুণ কুমার বিশ্বাস: বিসিএসের প্রস্তুতি বিষয়ে আমার স্পষ্ট বক্তব্য- নিজেকে তৈরি করুন। সমসাময়িক বিষয়ে পরিষ্কার ধারণা রাখুন, মনে জোর আনুন। খুব বেশি করে কিছু চাইলেও তা ফসকে যেতে পারে। তাই আত্মবিশ্বাসের সাথে পরীক্ষা দিন। বিসিএস কোয়ালিফাই না করলে জীবন মিথ্যা হয়ে যাবে, এমন ধারণা নিয়ে পরীক্ষায় বসবেন না। তাতে বাড়তি নার্ভাসনেস এসে যাবে। লিখিত পরীক্ষার জন্য বিশেষ প্রস্তুতি প্রয়োজন। চলমান বৈশ্বিক পরিস্থিতির ওপর ভালো জানাশোনা থাকলে লিখিত ও মৌখিক উভয় পরীক্ষায় ভালো ফল পাবেন। মৌখিক পরীক্ষার সাফল্য অনেকাংশে নির্ভর করে আত্মবিশ্বাস ও স্মার্টনেসের ওপর।

jagonews24

আপনি অনেক জানেন কিন্তু সময়মতো পেশ করতে পারলেন না, তাতে সাফল্য আসবে না। আবার আপনার বিষয়ভিত্তিক কোনো জ্ঞানই নেই, কেতাদুরস্ত হয়ে বোর্ড ফেস করলেন, তাতেও ব্যর্থ হবেন। সত্যি বলতে, মৌখিক পরীক্ষায় ভালো করার নির্দিষ্ট কোনো টোটকা আমার জানা নেই। তবে আমি বিশ্বাস করি, একজন প্রার্থী লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে মৌখিক পরীক্ষায় অংশ নিলে তার ব্যর্থ হওয়ার বস্তুত কোনো কারণ নেই। অবশ্য উপস্থিত পরীক্ষকগণের মতাদর্শ এক্ষেত্রে কিছুটা হলেও প্রভাবিত করে। তাই আপনি অবস্থা বুঝে বক্তব্য পেশ করবেন, তর্ক করবেন না, টু দ্য পয়েন্ট কথা বলবেন, কোনো প্রশ্নের সঠিক উত্তর জানা না থাকলে সবিনয়ে তা স্বীকার করুন। একজন মানুষ সব বিষয়ে জানবেন- এমন ভাবনার কোনো কারণ নেই।

জাগো নিউজ: কততম বিসিএসের কোন ক্যাডারে আছেন?
অরুণ কুমার বিশ্বাস: ২২তম বিসিএসের মাধ্যমে ২০০৩ সালে ‘কাস্টমস অ্যান্ড এক্সাইজ’ ক্যাডারে ‘সহকারী কমিশনার’ হিসেবে যোগদান করি। বর্তমানে কাস্টমসের অতিরিক্ত কমিশনার (চতুর্থ গ্রেড) হিসেবে কর্মরত।

jagonews24

জাগো নিউজ: আপনার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কী?
অরুণ কুমার বিশ্বাস: ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা একটাই- সাধ্যমতো কাজ করা, রাজস্ব সংগ্রহ, লেখালিখি আর জনবান্ধব ব্যবসায়িক পরিবেশ নিশ্চিত করা। আপনারা জানেন, আমাদের সংগৃহীত ট্যাক্স বা রাজস্ব দিয়ে দেশ চলে, উন্নয়ন বাজেট বাস্তবায়িত হয়। তরুণদের নিয়ে আমার নানান পরিকল্পনা আছে। সেসব বিষয়ে আরেকদিন বলা যাবে। করোনাকাল কেটে যাবে, যাচ্ছে। খুব শিগগিরই আমরা স্বাভাবিক জীবনে ফিরবো বলে আশা করা যায়।

এসইউ/জিকেএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।