প্রত্যেকের উচিত তার পছন্দের জায়গায় কাজ করা : ডন সামদানি


প্রকাশিত: ০২:৪৯ এএম, ২৪ সেপ্টেম্বর ২০১৫

পুরো নাম গোলাম সামদানি ডন। তবে জি. সামদানি বা ডন সামদানি নামেই পরিচিত। তিনি মোটিভেশনাল প্রশিক্ষক হিসেবে ইতোমধ্যে বেশ সুনাম কুঁড়িয়েছেন।  প্রতিষ্ঠা করেছেন ডন সামদানি ফ্যাসিলিটেইশন অ্যান্ড কনসালটেন্সি ফার্ম।

ডন সামদানি ট্রেনিং নিয়েছেন ফ্রান্স ও যুক্তরাষ্ট্র থেকে। কাজ করার অভিজ্ঞতা রয়েছে আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান ফিলিপ মোরিস ইন্টারন্যাশনালে। বর্তমানে ‘ইন্সপাইর‌্যাশনাল ট্রেইনার’ হিসেবে যুক্ত রয়েছেন কমিউনিকেশন্স, টিম বিল্ডিং অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট এবং নেতৃত্বের গুণাবলী অর্জনসহ ক্যারিয়ার সম্পর্কিত উৎসাহ-উদ্দীপনা দিতে। অবশ্য ইতোমধ্যে নিজেকে যুক্ত করেছেন ইউএনডিপি, গ্রামীণফোন, শেভরন, পারফেত্তি, হোলসিম, এনভয় গ্রুপ, ওমিকন গ্রুপ এবং এনার্জিপ্যাকের মতো জাতীয় ও আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানের প্রশিক্ষক হিসেবে।

এছাড়াও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, নর্থ-সাউথ ইউনিভার্সিটি, ইউল্যাব এবং এআইইউবিসহ দেশসেরা সরকারি ও বেসরকারি নানা প্রতিষ্ঠানে বক্তৃতা ও উৎসাহব্যঞ্জক ভাষণ দিয়ে কেড়ে নিয়েছেন লাখো ভক্তের মন। নিজের নামের সঙ্গে ইন্সপাইর‌্যাশনাল শব্দটি মিলিয়ে কালার’স্ এফ.এম. ১০১.৬-এ উপস্থাপন করছেন ‘ডন্স-পাইরেশন’ নামে একটি শো।

কাজের ক্ষেত্রে উৎসাহ-উদ্দীপনা কতটা কর্মপরিবেশের উন্নতিতে সহায়ক, সে বিষয়েই জাগো জবসের সঙ্গে কথা বলেছেন লিড ট্রেইনার জি. ডন সামদানি। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন গোলাম রাব্বী।  

জাগো জবস : ক্যারিয়ারের সঙ্গে ইন্সপাইর‌্যাশনাল বিষয়বস্তু বা উৎসাহ-উদ্দীপনার সম্পর্ক কী?
ডন সামদানি : আমরা আসলে জরিপ করে দেখেছি, কাজ করতে করতে অনেকেই একসময় কাজের আগ্রহ হারিয়ে ফেলেন। অন্যদিকে, কারো কারো ক্ষেত্রে দেখা যায়- এক কাজ করতে করতে নিজের মধ্যে একটা আলসেমি চলে আসে। আবার কখনও কখনও দুই-একটি কাজে ব্যর্থ হয়ে অনেকেই আগ্রহ হারিয়ে ফেলেন। এসব ক্ষেত্রে অফিসের কর্মপরিবেশ ও কর্মীদের মধ্যে চাঞ্চল্য ফিরিয়ে আনতে ইন্সপাইর‌্যাশনাল ট্রেনিং খুব কাজে দেয়।

জাগো জবস : ইন্সপাইর‌্যাশনাল স্পিকার হওয়ার গল্পটা একটু যদি খুলে বলতেন-
ডন সামদানিঃ : শৈশব থেকেই আমি ভিন্ন কিছু করার একটা তাগিদ অনুভব করতাম। তারপরেও বড় হওয়া পর্যন্ত যখন আমি সবার মতো একটা চাকরিতে ঢুকে পড়ি; দেখলাম- আমি নিজে খুব একটা স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করছি না। কেন যেন নিজের মধ্যে সর্বদা টিচার বা প্রশিক্ষক হওয়ার ইচ্ছেটা থেকেই যাচ্ছে। নিজের মধ্যে এবং আশপাশের মানুষও বলতে লাগলো আমি উৎসাহ-উদ্দীপনার মাধ্যমে অন্যকে খুব তাড়িত করতে পারি। এভাবেই নিজের প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা।
 
জাগো জবস : ইন্সপাইর‌্যাশনাল বক্তা হতে পড়াশোনা আপনাকে কীভাবে সহযোগিতা করেছে?
ডন সামদানি : মূলত আমি ক্যারিয়ার, কনসালটেন্সি, টিচিং, ট্রেনিং এই শব্দগুলো খুব পছন্দ করি। সেজন্য নিজে থেকেই এ সংক্রান্ত বই, ইউটিউব ভিডিও ও মুভি দেখে শেখার চেষ্টা করি। এছাড়া ইউল্যাব থেকে মিডিয়া স্ট্যাডিজে পড়াশোনা ও বিদেশ থেকে প্রশিক্ষণ জ্ঞান এবং কাজের অভিজ্ঞতা এ পথে প্রতিষ্ঠিত হতে সহযোগিতা করেছে।  

জাগো জবস : ফিলিপ মরিস ইন্টারন্যাশনালের মতো প্রতিষ্ঠান ছেড়ে এসে নতুন প্রতিষ্ঠান গড়া কতটা সঠিক বলে মনে করেন?
ডন সামদানি : আমি মনে করি, প্রত্যেক ব্যক্তির উচিত তার পছন্দের জায়গায় কাজ করা। তাই ফিলিপ মরিসে ছয় ডিজিটের বেতন বাদ দিয়েও এ চ্যালেঞ্জ নেই। নিজের পছন্দে আসতে পেরে বরং সৌভাগ্যবান মনে করছি।

জাগো জবস : আপনারা যেসব প্রতিষ্ঠানে প্রশিক্ষণ দিচ্ছেন সবারইতো নিজস্ব এইচআর বিভাগ এবং ট্রেনিং বিষয়ক বিভাগ রয়েছে। কিন্তু তারপরও আপনাদের প্রয়োজন কেন?
ডন সামদানি : দেখুন বড় বড় সব প্রতিষ্ঠানের ট্রেনিং ও এইচআর বিভাগ রয়েছে। কিন্তু আমরা যেভাবে ইন্সপাইর্যাবশনাল, কমিউনিকেশন্স, টিম বিল্ডিং, লিডারশিপ ক্যাপাসিটি অর্জনে প্রশিক্ষণ দিয়ে থাকি, তেমন ব্যবস্থা খুব একটা কিন্তু চোখে পড়ে না। তাই প্রতিনিয়ত আমাদের উৎসাহ-উদ্দীপনা কেন্দ্রীক ভিন্নধর্মী এ ট্রেনিংয়ের চাহিদা কর্পোরেট জগত এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসমূহে বেড়েই চলেছে।

জাগো জবস : এক্ষেত্রে আপনারা নিজেদের প্রতিষ্ঠানের বাইরে থেকে ট্রেইনার নেন কিনা বা কিভাবে কাজটি সম্পন্ন করেন?
ডন সামদানি : অব্যশই বিশেষ ক্ষেত্রে প্রয়োজন পড়লে আমরা বাইরে থেকে বা চুক্তিবদ্ধ প্রতিষ্ঠানের চাহিদামাফিক ট্রেনিং ও ট্রেইনারের ব্যবস্থা করে থাকি।  

জাগো জবস : দেশের তরুণ প্রাণ নিয়ে আপনার ভাবনা কী?
ডন সামদানি : বাংলাদেশের তরুণ নিয়ে আমি শতভাগ আশাবাদী। এমনকি আপনি দেখে থাকবেন, দেশের তরুণরা নিয়মিতিই দেশ ও দেশের বাহিরে তাদের মেধা ও মননের স্বাক্ষর রাখছেন। যেমন ধরুন- আমাদের সালমান খান যুক্তরাষ্ট্রে গিয়ে মাই একাডেমি নামে অনলাইনে শিক্ষা কর্যক্রম প্রতিষ্ঠা করে সুনাম কুড়াচ্ছেন। ঠিক তেমনই হলিউডের মুভিতে ইফেক্টস তৈরি করে এরই মধ্যে অস্কার জিতে নিয়েছেন আমাদেরই একজন নাফিজ। আমি মনে করি, এগুলোই আমাদের অর্জন। যখন আমরা প্রশিক্ষণ দেই, তখন সবসময় দেশের এ অর্জনকে এবং বিদেশের নানা বয়সের মানুষের ভিন্নধর্মী প্রচেষ্টা ও সফলতা তুলে ধরে সবাইকে উৎসাহ দেয়ার চেষ্টা করি।

জাগো জবস : ব্যক্তিজীবনে সফলতা বলতে আপনি কী বুঝেন?
ডন সামদানি : সফলতা বলতে আমি বুঝি, যে দিনটি আপনি অতিক্রম করছেন সে দিনটিকে নিজের মতো করে উপভোগ করা। আর এটি তখনই সম্ভব হবে, যখন আপনি আপনার পছন্দের কাজে সম্পৃক্ত থাকতে পারবেন। আমি দৃঢ়ভাবে বলতে পারি, আমাদের সমাজে অনেকেই হয়তো পরিবার, সমাজ ও নিজেকে চালাতে একটা চাকরি করে থাকেন। হয়তো তিনি সেখান থেকে ভালো বেতনও পান। কিন্তু তিনি সুখী নন। এজন্যই বলা- নিজের পছন্দে চলতে গিয়ে আজকের জন্য কাজটা চ্যালেঞ্জিং হলেও সেটাই মূলত সফলতা।

জাগো জবস : আপনার ‘লিভ ফর টুডে’ স্লোগান নিয়ে যদি কিছু বলতেন-
ডন সামদানি : সত্যি বলতে কী- আমি নিজে যখন এ প্রতিষ্ঠান করিনি, তখন জীবন চলত ঠিকই, কিন্তু মজা খুব একটা পেতাম না। ঠিক তেমনি অনেকেই কাজ করেন, ভবিষ্যতে ভালো থাকার জন্য, বাড়ি-গাড়ি করার জন্য, অনেকে আবার স্থায়ী চাকরি বা পেনশন আছে বিধায় লেগে থাকেন। কিন্তু দেখা যায়, একটার পর একটা অর্জন যখন তিনি করেছেন, তখন তার আরও একটি চাহিদা সামনে এসে দাঁড়িয়ে তার বর্তমান ভালো অবস্থাকে অসুখে পরিণত করে। তাই আমি নিজ ও সবার জন্য এমন স্লোগান দিয়েছি যে, অন্তত ‘আজকের জন্য বাঁচুন’। যতটুকু পেয়েছেন, ততটুকুই উপভোগ করুন। দেখবেন জীবনটা কত সুন্দর!

এসইউ/পিআর

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।