উদ্যোক্তা হওয়ার সিদ্ধান্ত আপনার

মো. আমিনুল ইসলাম শাহিন
মো. আমিনুল ইসলাম শাহিন মো. আমিনুল ইসলাম শাহিন , উদ্যোক্তা ও লেখক
প্রকাশিত: ০৩:১৭ পিএম, ০৪ জানুয়ারি ২০১৮

কয়েকদিন আগে আমরা একটি প্রোগ্রাম করেছিলাম সিএসও সামিট। এই প্রোগ্রামে যারা এসেছিলেন তাদের কাছ থেকে আমরা অনেক অনেক শিক্ষণীয় ঘটনা জানতে পেরেছি। সব মিলে চমৎকার একটি প্রোগ্রাম ছিল। বিশেষ করে উপহারগুলো ছিল অসাধারণ। এ প্রোগ্রামে আমরা স্পিকারদের কাছ থেকে মানসিক, শারীরিক, অর্থনৈতিক সংগ্রামসহ নানা ধরনের সংগ্রামের কথা শুনেছি। শিখেছি অনেক কিছু।

আমার জীবনে একটি বিশেষ ধরনের সংগ্রাম করেছি। ভবিষ্যতেও করতে হবে বলে আশা করছি। সেটি হলো- আমি যাতে সংগ্রামী হতে পারি তার জন্য সংগ্রাম করা। সবাই কিন্তু সংগ্রাম করতে পারে না। অনেকেরই অনেক সীমাবদ্ধতা থাকে। নিজেকে সংগ্রামী করে গড়ে তোলার জন্য সেই কবে থেকে সংগ্রাম করে চলেছি। তারই কয়েকটা ঘটনা বলি-

আমি তখন অনেক ছোট, ক্লাস থ্রিতে পড়ি। কিন্তু এরপর আর যেন বড় হতে পারছিলাম না। একটি বিশেষ কারণে থ্রিতে তিন বার পড়তে হয়েছে। এতে আমার দুঃখ নেই- কারণ এতে হয়তো কিছু বেশি শিখতে পেরেছি, অনেক নতুন বন্ধু পেয়েছি। সে যা-ই হোক, থ্রিতে তিন বছর পড়ার পর যেটা হলো- আমি আর আমার ছোট বোন একসঙ্গে এসএসসি পরীক্ষা দিলাম। আমার ছোট বোন অনেক ভালো ছাত্রী ছিল। সে সময়ে মনিপুর উচ্চ বিদ্যালয় থেকে যে কজন এসএসসিতে বিশের মধ্যে থাকবে বলে আশা করছিল তার মধ্যে ও ছিল। আমার অবস্থাটা হচ্ছে- কোনরকম যদি ফেলের শিটে নাম না এসে পাসের শিটে নাম আসে, তাহলেই আমি খুশি।

আমার আম্মা আমার ছোট বোনকে পরীক্ষা দিতে নিয়ে যেতেন না, উনি আমাকে নিয়ে যেতেন। যথারীতি পরীক্ষা শেষে রেজাল্টের দিন এলে আমি রেজাল্ট দেখে বাসায় ফিরেছি। এসে দেখি ব্যাপক খারাপ অবস্থা। আমার ছোট বোন কান্নাকাটি করছে। সবার মন খারাপ। ছোট বোন সব বিষয়ে ভালো রেজাল্ট করলেও বিশ জনের মধ্যে আসতে পারেনি। অবস্থার কিছুটা পরিবর্তন হলে আব্বা আমাকে মিষ্টি কেনার জন্য টাকা দিলেন। তিনি যখন শুনলেন যে, আমার রোল নম্বর পাস করা ছাত্রদের মধ্যে পাওয়া গেছে। রেজাল্ট কী ছিল, তা আর না বলি।

যখন পলিটিক্যাল সায়েন্সে মাস্টার্স শেষ করলাম; তখন একটা বিষয় আবিষ্কার করলাম যে, আমার আব্বা বংশের মধ্যে প্রথম ইঞ্জিনিয়ার। বড় ভাই বংশের মধ্যে প্রথম ডাক্তার, ছোট বোন বংশের মেয়েদের মধ্যে প্রথম ডাক্তার। ছোট ভাই বংশের দ্বিতীয় জেনারেশনের মধ্যে প্রথম ইঞ্জিনিয়ার। আমি কোনো দিক থেকেই প্রথম নই। কারণ আমার আগে অনেকেই মাস্টার্স পাস করেছে। আমার সন্তান যদি আমার কাছে জানতে চায়, বাবা সবাই তো ডাক্তার-ইঞ্জিনিয়ার, তুমি কেন হলে না? আমি কী উত্তর দেব? তাই আমি আবার ভর্তি হলাম এমবিএ করার জন্য। আল্লাহর রহমতে ভালোভাবেই পাস করলাম। এবার আমি বংশের মধ্যে প্রথম ডাবল মাস্টার্স করা ব্যক্তি।

জীবনের একটি উজ্জ্বল সময় পাড় করেছি সরকারি বাংলা কলেজের রোভার স্কাউটিংয়ের সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকার সময়। রোভার স্কাউটিংয়ের একটি অন্যতম কাজ বা অংশ হলো ক্যাম্প। আমার সীমাবদ্ধতা ছিল, আমি কোনো ক্যাম্পে যেতে পারতাম না। একটি বিশেষ কারণে আমি রাতে বাসার বাইরে থাকতাম না। নিষেধ ছিল উপর মহলের। এই সীমাবদ্ধতার মধ্য দিয়েই আমি কলেজ রোভারিংয়ের সর্বোচ্চ পদে আসীন ছিলাম এসআরএম হিসেবে। আমি সাধারণত সব ক্যাম্পই ঘুরে আসতাম একদিন করে। যদি সেটা ঢাকার কাছাকাছি হতো। দিনে গিয়ে দিনে ফিরে আসব- এই ভেবে কেরানীগঞ্জের একটি ক্যাম্পে গিয়েছিলাম। কিন্তু আসার সময় কী একটা সমস্যার কারণে রাস্তা বন্ধ থাকায় আর ফিরতে পারলাম না। ক্যাম্পেই থাকতে হলো এবং এটা ছিল আমার জীবনের নতুন এক অধ্যায়। এরপর আমি অনেক ক্যাম্পে থেকেছি। কোথাও কোনো সমস্যা হয়নি।

আমি তখন একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করি। বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো বিয়ে, জন্মদিনের জন্য তেমন ছুটি দিতে চায় না। তাই আমার আংটি বদলের দিন ঠিক করেছি ২১ ফেব্রুয়ারি। বিয়ের তারিখ ঠিক করা হলো ১৪ এপ্রিল এবং আমার সন্তানের জন্মদিন ১ জানুয়ারি। জানি, এখনও অনেক পথ পাড়ি দিতে হবে। তবুও হাল ছাড়া যাবে না। কারণ এ যুদ্ধ নিজেকে যোদ্ধা হিসেবে তৈরি করার যুদ্ধ। নিজেকে যদি সৈনিক হিসেবেই তৈরি করতে না পারি, তাহলে যুদ্ধ জয় করবো কী করে।

বিষয়গুলো একান্তই ব্যক্তিগত, তবুও শেয়ার করার উদ্দেশ্য হলো- আমরা অনেকেই উদ্যোক্তা হতে চাই। ব্যবসা করতে চাই। একদিনে কোটি টাকা ইনকাম করতে চাই। এই চাওয়াগুলোর মধ্যে দোষের কিছু নেই। তবে নিজেকে একটু খুঁজে দেখতে হবে। একটু আয়নার সামনে নিয়ে আসতে হবে। যে পথ পাড়ি দেব বলে ঠিক করেছি, তার জোগাড় ঠিকমতো করেছি কিনা? নাকি অন্যের প্ররোচনায় নিজেকে অজানার পথে ঠেলে দিচ্ছি। পরে যার খেসারত দিতে হবে আপনাকে, আপনার পরিবারকে, সবাইকে।

আপনি যে পথের পথিকই হন না কেন, আপনার শুভাকাঙ্ক্ষীরা যদি সঙ্গে না থাকে; তাহলে আপনি একদিন পথহারা পথিক হয়ে ঘুরে বেড়াবেন। নয়তো আপনি এমন অনেক দূরে চলে যাবেন, যেখান থেকে আর কাউকে আপনি খুঁজে পাবেন না। এখন সিদ্ধান্ত আপনার। আপনি কি আপনার শক্তি অনুধাবন করে যুদ্ধে নামবেন? নাকি অন্যের প্ররোচনায় গড্ডালিকা প্রবাহে নিজেকে ভাসিয়ে দিবেন। একটা কথা মনে রাখতেই হবে- উদ্যোক্তা এবং সংগ্রাম, মুদ্রার এপিঠ-ওপিঠ।

এসইউ/আরআইপি

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।