শেখার কোনো শেষ নেই : সালমান
পুরো নাম আবু সালমান মো. আবদুল্লাহ। তবে তিনি আরজে সালমান হিসেবে বহুল পরিচিত বেতারের শ্রোতাদের কাছে। সুললিত কণ্ঠ, কথার বিচিত্র ভঙ্গি আর চমৎকার উপস্থাপনায় মুগ্ধ করেছেন অগণিত শ্রোতাকে। কথাবন্ধু হিসেবে টানা ৬ বছর কাজ করছেন রেডিও টুডে। আরজে জগতে গড়ে তুলেছিলেন নিজের অন্যতম স্থান। তবে নানা কারণে তিনি এ পেশাকে বিদায় জানিয়েন। এ কারণে অনেকদিন ছিলেন মিডিয়াবিমুখ।
তবে সেই বিমুখতা ভেঙে সম্প্রতি তিনি মুখোমুখি হয়েছেন জাগো নিউজের। শুনিয়েছেন দেশের অন্যতম জনপ্রিয় আরজে হয়েও এ পেশাকে বিদায় জানানোর গল্প। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন মাহবুবর রহমান সুমন।
জাগো জবস : প্রথমে আপনার শেকড়ের গল্প শুনতে চাই-
সালমান : বাবার সেনাবাহিনীর চাকরির সুবাদে আমার জন্ম কুমিল্লা সেনানিবাসে। স্কুলজীবন বিভিন্ন স্কুলে কাটালেও মাধ্যমিকের গণ্ডি পেরিয়েছি চট্টগ্রাম বায়েজিদ লাইনস হাইস্কুল থেকে। আর কলেজের গণ্ডি পেরিয়েছি আদমজী ক্যান্টনমেন্ট স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে। তারপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিন্যান্স ডিপার্টমেন্ট থেকে বিবিএ। সর্বশেষ এমবিএ শেষ করেছি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইবিএ থেকে।
জাগো জবস : কীভাবে যুক্ত হলেন এ পেশার সঙ্গে?
সালমান : ২০০৯ সালে আমি তখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথম বর্ষে পড়ালেখা করি। তখন রেডিও আমার থেকে ঘোষণা দেয়া হয়, তারা একটি আরজে কোর্স করাবেন। আমি সেখানে কোর্স করি। কোর্স করে একটি অনলাইন রেডিওতে কয়েকমাস কাজ করেছিলাম। তারপর ২০১০ সালের এপ্রিলে রেডিও টুডের ইন্টারভিউয়ে অংশগ্রহণ করি। তারপর প্রায় চার মাসের প্রশিক্ষণ শেষে সেপ্টেম্বরের ৫ তারিখে রেডিও টুডেতে প্রথম কথা বলার সুযোগ পাই। তারপর অনেকগুলো জনপ্রিয় শো করেছি।
জাগো জবস : দেশের প্রথম সারির আরজে হওয়ার পিছনের গল্পটা কী?
সালমান : দেশের এবং দেশের বাইরের প্রথম সারির রেডিওগুলোতে আমার প্রশিক্ষণের সুযোগ হয়েছে এটা সবচেয়ে বড় কারণ। তাছাড়া আমি জানার চেষ্টা করতাম, আমার শ্রোতা আমার কাছে কী শুনতে চায়? এসব বিষয় নিয়ে গবেষণা করতাম। এগুলোই হয়তো জনপ্রিয়তার কারণ।
জাগো জবস : আরজে সালমানের প্রিয় আরজে কে?
সালমান : দেশের বাইরে রেডিও মির্চির মীর। দেশে রেডিও ফুর্তির রাসেল ভাই। এছাড়া নীরব ভাই, কিবরিয়া ভাইয়ের উপস্থাপনা ভালো লাগে।
জাগো জবস : কী কারণে এ পেশাকে বিদায় জানালেন?
সালমান : এই রহস্য অনেকে না জানলেও এর প্রধান কারণ হচ্ছে পড়ালেখার শেষের দিকে আমি দেখলাম, আমি যে বিষয়ে পড়ালেখা করেছি সেটি মিডিয়ার সাথে সম্পৃক্ত নয়। তাই ২০১৬ সালের ৭ এপ্রিল আমি মিডিয়া পেশাকে বিদায় জানিয়েছি। তাছাড়া যদি অন্য কারণ খুঁজতে যান তবে বলবো, ২০১০ সাল থেকে রেডিও ছাড়ার আগ পর্যন্ত প্রায় ৬ বছর আমার রাতে ঘুমানোর সুযোগ থাকতো না। তাছাড়া মিডিয়াতে যারা কাজ করেন তাদের জীবনে ছুটি বলে তেমন কোন শব্দ নেই। সত্যি কথা বলতে কি এসব কারণে আমি হাঁপিয়ে উঠেছিলাম।
জাগো জবস : বর্তমানে কী নিয়ে ব্যস্ত আছেন?
সালমান : বর্তমানে আমি ঢাকার বাইরে একটি মাল্টি ন্যাশনাল কোম্পানিতে কর্মরত আছি। তাছাড়া আমি এখন একটি স্বেচ্ছাসেবক প্রতিষ্ঠান (ব্লাড-ম্যান) নিয়ে কাজ করছি। তাছাড়া অন্য কয়েকটি প্রতিষ্ঠানে কাজ করছি।
জাগো জবস : লেখক হিসেবেও আপনি বেশ পরিচিত-
সালমান : এখন পর্যন্ত আমার তিনটি বই প্রকাশ হয়েছে। তবে সময়ে অভাবে কবে পরবর্তী বই কবে মুক্তি পাবে সেটা বলতে পারছি না।
জাগো জবস : আবার কি রেডিওতে ফিরে আসার সম্ভাবনা আছে?
সালমান : আগের মত না হলেও বিশেষ কোন সময় বা বিশেষ কোন শো’তে ফিরে আসার সম্ভাবনা আছে। তবে সেক্ষেত্রে ঢাকায় কবে ফিরছি সেটার ওপর নির্ভর করছে।
জাগো জবস : যারা নতুন আরজে হতে চায় তাদের কী পরামর্শ দিতে চান?
সালমান : শেখার কোন শেষ নেই। তাই প্রতিদিন শিখতে হবে। যখন মনে করবেন আমার শেখার কিছুই আর বাকি নেই; তখন মনে করবেন আপনি অন্য পথে চলছেন। আর প্রতিটি শো’তেই নিজেকে প্রমাণ করতে হবে। তাছাড়া এই পেশায় কণ্ঠ শুধু প্রধান যোগ্যতা নয়। এর বাইরেও অন্য অনেক যোগ্যতার দরকার আছে।
জাগো জবস : পাঠকের উদ্দেশ্যে কিছু বলতে চান?
সালমান : আপনারা আরজে সালমানকে মিস করেন কিনা জানি না। তবে ব্যক্তি সালমান আরজে সালমানকে খুব মিস করে। তাই খুব চেষ্টা করবো কিছু সময়ের জন্য হলেও রেডিওতে ফিরতে।
জাগো জবস : জাগো নিউজকে সময় দেয়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ?
সালমান : আপনাকে ও জাগো নিউজকেও ধন্যবাদ।
এসইউ/পিআর