স্বপ্ন সফল করতে ইচ্ছেটাই জরুরি : অনিমা চৌধুরী

সালাহ উদ্দিন মাহমুদ
সালাহ উদ্দিন মাহমুদ সালাহ উদ্দিন মাহমুদ , লেখক ও সাংবাদিক
প্রকাশিত: ১১:১৪ এএম, ০৫ সেপ্টেম্বর ২০১৬

কয়েক বছর আগেও বাংলাদেশে অনলাইন শপিং বলে কিছু ছিল না। কিন্তু দেশে এখন অনলাইন শপিং জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। বর্তমানে অনলাইন শপগুলোতে জামা-কাপড় থেকে শুরু করে সৌখিন ইলেক্ট্রনিক্স পণ্য, নিত্য ব্যবহার্য সামগ্রীসহ প্রায় সব কিছুই পাওয়া যায়। তার-ই ধারাবাহিকতায় অনিমা চৌধুরীর উদ্যোগে গড়ে উঠেছে অনলাইন শপ ‘ঘুড়ি’। রাজশাহী থেকে অপারেট করা ফেসবুকভিত্তিক এই অনলাইন শপটি মেয়েদের জন্য হাতের কাজ করা পোশাক ক্রেতাদের কাছে পৌঁছে দেয়।

সম্প্রতি ঘুড়ির উদ্যোক্তা অনিমা চৌধুরীর সঙ্গে কথা হয় অনলাইন শপের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে। জাগো জবসের পক্ষ থেকে সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন সালাহ উদ্দিন মাহমুদ

anima

জাগো জবস : ঘুড়ির পরিকল্পনা কখন থেকে?

অনিম চৌধুরী : সবসময় ইচ্ছে ছিল নিজে উদ্যোগী হয়ে কিছু করার। ছোটবেলা থেকেই আঁকাআঁকি, পোশাক ডিজাইনসহ এমন সব সৃজনশীল কাজের প্রতি আগ্রহ ছিল প্রবল। এছাড়া পড়াশোনার পাশাপাশি বেশ কিছু ছোটখাটো সামাজিক ইভেন্টে অংশগ্রহণ করতে গিয়ে বিষয়টি উপলব্ধি করি। বলতে পারেন তখন থেকেই।

জাগো জবস : নারী হয়েও উদ্যোক্তা হওয়ার সাহস পেলেন কোথায়?
অনিমা চৌধুরী : বাংলাদেশে নারী উদ্যোক্তার সংখ্যা অনেক কম। আর রাজশাহীতে তো আরও কম। অনেক মেয়েরই পর্যাপ্ত মেধা আর ইচ্ছে থাকা সত্ত্বেও সামাজিক বাধা-নিষেধের কারণে তার পক্ষে সাহস করে উদ্যোগী হয়ে ওঠা সম্ভব হয় না। কিন্তু আমি তখন থেকেই মেয়েদের উদ্যোগী হওয়ার বিষয়ে আগ্রহী হয়ে উঠি। এরপর ঠিক করি পড়াশোনা শেষ করে নিজেই উদ্যোগ নিয়ে নিজের পায়ে দাঁড়াবো।

AMINA

জাগো জবস : ঘুড়ি প্রতিষ্ঠা করলেন কখন?
অনিমা চৌধুরী : রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগ থেকে পড়াশোনা শেষ করার পর ২০১৬ সালের ৯ মে ফেসবুক শপ ঘুড়ি প্রতিষ্ঠা করি। সেটা এক রকম ঝোঁকের মাথায়। পরে ধীরে ধীরে ঘুড়ি সুপরিকল্পিত ও সুদূরপ্রসারি হয়ে উঠেছে।

জাগো জবস : উদ্যোগ নিতে গেলে কোন বিষয়টি বেশি জরুরি?
অনিমা চৌধুরী : কোনো উদ্যোগ নেয়ার জন্য কখনো কখনো অনেক পরিকল্পনার চেয়ে বেশি জরুরি সেই মুহূর্তে ঝুঁকি নেওয়ার সাহসিকতাটুকু থাকার। প্রথম বিষয়- সবাই যে অ্যাপ্রিসিয়েট করবে এটা ভুল ধারণা। কিন্তু সেটুকু সময় আত্মবিশ্বাস আর সাহসিকতার সঙ্গে পার করলে ফলাফল অবশ্যই ভালো কিছু হবে।

জাগো জবস : ফেসবুকভিত্তিক অনলাইন শপের আইডিয়াটা কোথায় পেলেন?
অনিমা চৌধুরী : ঘুড়ি ছিল আমার মধ্যরাতে হঠাৎ আসা একটা আইডিয়া। অনেকে হাতের কাজ বলতে শুধু জামালপুর আর চাঁপাইনবাবগঞ্জের নাম জানেন। কিন্তু রাজশাহীর লোকাল প্রোডাকশনের মাধ্যমেও যে এত সুন্দর, উন্নতমানের অন্যরকম হাতের কাজের জামা পাওয়া যায় এটা অনেকের কাছেই অজানা। আমার প্রথম থেকেই ইচ্ছে ছিল পড়াশোনা শেষ করার পর যেভাবেই হোক নিজেকে একটা জায়গায় দাঁড় করাবো। তাই ঘুড়ির মতো একটা স্বতন্ত্র প্রতিষ্ঠান দাঁড় করানোর চ্যালেঞ্জ নেই।

anima

জাগো জবস : ঘুড়ি প্রতিষ্ঠায় কারো অনুপ্রেরণা পেয়েছিলেন কী?
অনিমা চৌধুরী : সৌভাগ্যক্রমে আমি আমার বাবা ও মায়ের যথেষ্ট সাপোর্ট পেয়েছি। বিশেষত আমার মায়ের। ওনার বিভিন্ন ধরনের হাতের কাজ ও সেলাইয়ের প্রতি আগ্রহ থাকার কারণে উনি আমাকে ঘুড়ির জন্য বিভিন্নভাবে সাহায্য করেছেন এবং উৎসাহ জুগিয়েছেন। আর বাবার আগ্রহ আমার অনেক বড় অনুপ্রেরণা, যা আমাকে প্রতিনিয়ত সাহস জুগিয়ে চলেছে।

জাগো জবস : ঘুড়ির সফলতা কতটুকু?
অনিমা চৌধুরী : ঘুড়ি শুরু হয়েছিল হুজুগে- কিন্তু সবাই যখন আমাদের গোছানো কাজ, ইউনিক ডিজাইন, প্রেজেন্টেশন এবং ম্যানেজমেন্টের প্রশংসা করেন তখন বুঝতে পারি যে এটা শখ থেকে একটা অত্যন্ত প্রফেশনাল অবস্থানে পৌঁছাতে পারে। মাত্র তিন মাসে যে অসম্ভব রকমের সাড়া পেয়েছি তাতে এই বিশ্বাস আরও পাকাপোক্ত হয়েছে। ঘুড়ি শুধু আমাকেই সাবলম্বী করেনি তার পাশাপাশি গ্রামের যারা হাতের কাজে পারদর্শী তাদেরও কিছুটা আয় বৃদ্ধিরও ব্যবস্থা করেছে। তারা যাতে কাজের যতটা সম্ভব ন্যায্য মূল্য পান তা নিশ্চিত করার চেষ্টা করছে।

AMINA

জাগো জবস : ঘুড়ি নিয়ে আপনার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কী?
অনিমা চৌধুরী : ঘুড়িকে শুধু ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান হিসেবে নয় বরং কমিউনিটি ওয়েল ফেয়ারের কাজে লাগানোর ইচ্ছে আছে। এর প্রথম ধাপ হিসেবে আমরা এবারের ঈদে এতিম বাচ্চাদের নিয়ে একটা ইভেন্ট রেখেছি। যেখানে ঘুড়ির লভ্যাংশের ১৫ পারসেন্ট ব্যবহার করা হবে তাদের জামা, খাবার, বই-খাতা, ওষুধের জন্য। এরপর অটিস্টিক বাচ্চাদের জন্য কিছু করতে চাই। এছাড়া নারী অধিকার বিষয়ক কাজেও ঘুড়িকে নিয়ে এগিয়ে যেতে চাই।

জাগো জবস : আপনার মতো যারা হতে চান; তাদের জন্য কী বলবেন?
অনিমা চৌধুরী : মেয়েদের উদ্যোগী হয়ে নিজের পায়ে দাঁড়ানোর অনেক উপায় রয়েছে। এর জন্য শুধু একটু পরিশ্রম এবং সৎ সাহস থাকা প্রয়োজন। যেকোনো নারীই উদ্যোগী হয়ে নিজের পায়ে দাঁড়াতে ফেসবুক শপ বেছে নিতে পারেন। তারা তাদের আগ্রহের জায়গায় অবিচল থেকে নিজেদের স্বপ্ন সফল করতে পারেন। এর জন্য তার দরকার একাগ্রতা।

জাগো জবস : ঘুড়ির জন্য শুভকামনা রইল। ঘুড়ি নিয়ে আপনি অনেক দূর এগিয়ে যান।
অনিমা চৌধুরী : জাগো নিউজের জন্যও আমার অনেক অনেক ভালোবাসা রইল। আমাকে সুযোগ দেয়ার জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি।

এসইউ/এবিএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।