নিজেকে সর্বোত্তম ভাবে প্রকাশ করাটা খুব জরুরি : নিয়াজ আহমেদ

সালাহ উদ্দিন মাহমুদ
সালাহ উদ্দিন মাহমুদ সালাহ উদ্দিন মাহমুদ , লেখক ও সাংবাদিক
প্রকাশিত: ০৬:৪৭ এএম, ২৩ আগস্ট ২০১৬

নিয়াজ আহমেদ একজন প্রফেশনাল সিভি রাইটার, ট্রেইনার ও ক্যারিয়ার এক্সপার্ট। বিভিন্ন পত্রিকায় ক্যারিয়ার নিয়ে তার প্রায় ২শ’র মত লেখা প্রকাশ হয়েছে। প্রায় ১৭টি দেশে তিনি ৬শ’র অধিক সিভি তৈরি করেছেন। এরআগে তিনি একাধিক কোম্পানিতে কাজ করছেন বিজনেস কনসালটেন্ট হিসেবে। এনার্জি সেক্টরে চাকরির অভিজ্ঞতা আছে প্রায় ৫ বছরের। পড়াশোনায় তিনি একজন মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার। পাশাপাশি এমবিএ করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে।

সবশেষে তিনি নিজের চেষ্টায় গড়ে তুলেছেন ট্রেনিং ফার্ম ‘কর্পোরেট আস্ক’। তার প্রতিষ্ঠান ও ক্যারিয়ার নিয়ে কথা বলেছেন জাগো জবসের সঙ্গে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন সালাহ উদ্দিন মাহমুদ

niaz

জাগো জবস : কর্পোরেট আস্ক’র চিন্তা কীভাবে মাথায় এলো?
নিয়াজ আহমেদ : ২০১৫ সালের জুলাই মাসে চাকরি ছেড়ে দেই। লন্ডনের স্যালফোর্ড  ইউনিভার্সিটিতে স্কলারশিপ পাই পেট্রোলিয়াম ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের উপর মাস্টার্স করার। কিন্তু কিছু ব্যক্তিগত কারণে আর যাওয়া হয়ে ওঠেনি। এরপর আবার চাকরির চেষ্টা করি। চাকরি হয়েও যায় কিছু কিছু প্রতিষ্ঠানে। কিন্তু সবাই ‘৩-৫ বছরের আগে চাকরি ছাড়া যাবে না’ এই মর্মে চুক্তিনামায় সই করতে বলে। যে কারণে একটা সময় চাকরির চিন্তা বাদ দেই। তখন মাথায় আসে, আমি আসলে কী করতে ভালোবাসি? আমি দেখলাম দেশ-বিদেশ মিলিয়ে আমার প্রায় ৭০টির মত ট্রেনিং করা আছে। এছাড়া আমি যে কোম্পানিগুলোতে চাকরি করতাম; সেখানে ইনহাউজ ট্রেইনার ছিলাম। তাই সিদ্ধান্ত নেই ট্রেনিং ফার্ম করার। সেখান থেকেই কর্পোরেট আস্ক’র জন্ম।

জাগো জবস : ট্রেনিং থেকে লেখালেখিতে এলেন কীভাবে?
নিয়াজ আহমেদ : একটা সময় মুভি রিভিউ লিখতাম। প্রায় ৩শ’রও বেশি রিভিউ লিখেছি। তবে আমি জানতামই না যে, আমি মোটিভেশনাল কথা লিখতে পারি। ফেসবুকে আমার পোস্ট পড়ে অনেকে আমাকে পত্রিকা অফিসে যোগাযোগ করতে বলতো। কাছের মানুষদের পরামর্শে একদিন একটি পত্রিকা অফিসে ফোন দেই। সেদিন বিভাগীয় সম্পাদকের কথায় কষ্ট পেয়েছিলাম। তবুও নিজের মত লিখতাম। একদিন একটি নিউজ পোর্টাল (জাগোনিউজ২৪.কম) থেকে ফোন এলো। এরপর শুরু হয় আমার লেখা প্রকাশ। সেদিন বুঝলাম- লেগে থাকার ফল, ধৈর্যের ফল কত মধুর।

niaz

জাগো জবস : এতো পড়াশোনা করে এমন উদ্যোগ কেন?  
নিয়াজ আহমেদ : আমি খুব গর্বিত এ কাজ নিয়ে। আসলে নিজেকে সর্বোত্তম ভাবে প্রকাশ করাটা খুব জরুরি। আমরা এই ব্যাপারটি খুব বেশি ইগনোর করি। যে কারণে আমরা পদে পদে ক্ষতিগ্রস্ত হই। কিন্তু তবুও আত্মোন্নয়নের চেষ্টা করি না। আমি চাই, আমার লেখার মাধ্যমে ক্যারিয়ারের সর্বোত্তম দিকগুলো সাবলীল ভাবে ফুটিয়ে তুলতে। আমি এই পর্যন্ত ৬শ’র অধিক সিভি লিখেছি। ১৭টি দেশে প্রবাসী বাঙালিদেরও সিভি লিখে দিয়েছি। কেউ যখন আমার লেখা সিভি দিয়ে বেশি বেশি ইন্টারভিউ কল পায় বা জব পায়, তখন আনন্দে মনটা ভরে যায়।

জাগো জবস : চাকরি পেতে কোন দিকটি বেশি জরুরি?
নিয়াজ আহমেদ : চাকরি জীবন্ত হরিণ নয় যে তাকে ছুটে ছুটে ধরতে হবে, চাকরি সোনার হরিণ। একটি সামান্য জড় পদার্থ- যা তার জায়গায় সদাই স্থির। চলতে ফিরতে পারে না। কাজেই আপনি যদি সেই সোনার হরিণ পাওয়ার যোগ্য হন, তাহলে তা অন্য কেউ নিয়ে যাবে সেই সাধ্য কি কারো আছে? কিন্তু আমরা সবাই চাকরি খুঁজি। তবে যে যেখানে থেকে যে কাজই করুন না কেন। সেটা যদি নিজের জন্য অন্তর থেকে করেন, তাহলে আর সেটাকে চাকরি মনে হবে না কেন?

niaz

জাগো জবস : কর্পোরেট আস্ক থেকে কী কী ট্রেনিং করানো হয়?  
নিয়াজ আহমেদ : মূলত আমরা ক্যারিয়ার বিষয়ক ট্রেনিং করাই। বিভিন্ন সফট স্কিল ডেভেলপমেন্ট, সেলফ ব্র্যান্ডিং- এসব নিয়ে কাজ করছি। ভবিষ্যতে লিডারশীপের ট্রেনিং করানোর ইচ্ছা আছে।

জাগো জবস : শিক্ষার্থীদের ট্রেনিং করা কতটা জরুরি?
নিয়াজ আহমেদ : এক বছরে ৫২ সপ্তাহ, প্রতি সপ্তাহে ২ দিন করে ছুটি। এই হিসেবে বছরে ছুটি ১০৪ দিন। তাহলে উৎসব বা দিবস ভিত্তিক ছুটি বাদেই ১০৪ দিন ছুটি পাচ্ছে শিক্ষার্থীরা। চার বছরে ৪১৬ দিন ছুটি। হিসেব করলে দেখা যায়, চার বছরের প্রায় দেড় বছরই ছুটি। কিন্তু আমাদের দেশের শিক্ষার্থীরা কি সেই ছুটি নিজেদের উন্নয়নের কাজে লাগায়? চার বছরে একটি ট্রেনিং নেই, কোনো পার্ট টাইম জব নেই, কো-কারিকুলাম কিছুই নেই। ফলে এরা কর্মজীবনে চরম হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়ে। আপনি অর্ডিনারি নাকি এক্সট্রা-অর্ডিনারি? তা নির্ভর করছে আপনি কতটুকু এক্সট্রা ইফোর্ট দিচ্ছেন- তার উপর।

niaz

জাগো জবস : হেড হান্টিং কাজটি কেমন?
নিয়াজ আহমেদ : আমাদের আছে বিশাল সিভি ব্যাংক। আমাদের তৈরি করা সিভিই আছে ৬শ’র উপর। কোনো প্রতিষ্ঠানে জনবল প্রয়োজন হলে, তারা আমাদের জানান। আমরা তাদের উপযুক্ত সিভি দিয়ে সাহায্য করি। এর জন্য আমরা কোনো ফি নেই না। আমাদের প্রায় ৩০ জনের একটি টিম কাজ করছে।

জাগো জবস : জীবনের সার্থকতা কীসে?
নিয়াজ আহমেদ : যখন মানুষের চাকরি হওয়ার খবর পাই। যখন লেখা পড়ে বিভিন্ন অঞ্চল থেকে মানুষ দেখা করতে আসে। যখন একজন লোক যার এক হাত নেই, তবুও সে লেখা পড়ে মেইলে শুভেচ্ছা জানায়। এই তো জীবনের সার্থকতা।

জাগো জবস : সফলতার মূলমন্ত্র কী?
নিয়াজ আহমেদ : জোকের মত লেগে থাকা। লোকে কী ভাববে? তা যদি আমিই ভাবি, তাহলে লোকে ভাববে কী? সমালোচনা সবচেয়ে বড় ব্র্যান্ডিং। কাজেই নিজের লক্ষ্য অটুট রেখে আত্মবিশ্বাসী হয়ে ভালো কাজ নিয়ে এগিয়ে যান, বিজয় সুনিশ্চিত।

এসইউ/এইচআর/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।