ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট শিল্পে সম্ভাবনা বাড়ছে : জয়দ বাঙালী


প্রকাশিত: ০১:৪৪ পিএম, ২৮ জুন ২০১৬

সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট ব্যবসায় এসেছে চাকচিক্য ও অপার সম্ভাবনা। একটা সময় নির্দিষ্ট কিছু প্রতিষ্ঠান এ ব্যবসায় জড়িত থাকলেও আজকাল বেশ কিছু প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে ইভেন্ট আয়োজনের। সঙ্গে যুক্ত হয়েছে মিডিয়া ম্যানেজমেন্টও। সাম্প্রতিক সময়ে বেশ কিছু ইভেন্ট আয়োজন করে আলোচনায় এসেছে ক্লাব ইলেভেন ইন্সেপশন মিডিয়া। প্রতিষ্ঠানটির ইভেন্ট ও মিডিয়া ম্যানেজমেন্ট বিভাগের চিফ অপারেটিং অফিসারের (সিওও) দায়িত্ব পালন করছেন জয়দ বাঙালী। উদ্যমী, মেধাবী, পরিশ্রমী এই তরুণ সমাজের বেকার যুবকদের জন্য হতে পারেন অনুপ্রেরণার। জাগো নিউজের মুখোমুখি হয়ে তিনি বলেছেন তার কর্মস্থলের সাফল্য, ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট এন্ড মিডিয়া শিল্পের ভবিষ্যৎ সম্ভাবনাসহ অনেক কিছু। লিখেছেন লিমন আহমেদ

জাগো নিউজ : ক্লাব ইলেভেন এবং ইন্সেপশন মিডিয়া তো আলাদা দুটি প্রতিষ্ঠান ছিলো। দুটো এক হলো কী করে?
জয়দ : দীর্ঘদিন ধরেই আলাদাভাবে ক্লাব ইলেভেন ও ইন্সেপশন মিডিয়া ইভেন্ট ম্যানেজমেন্টের সঙ্গে জড়িত। বেশ কিছু কনসার্ট ও অনুষ্ঠান আয়োজনও করেছিলো প্রতিষ্ঠান দুটি। তবে দিনে দিনে কাজের পরিধি বাড়তে থাকায় বিস্তৃত ভাবনা থেকে দুটি প্রতিষ্ঠানকে এক করে নেয়া হয়েছে। আমাদের উদ্দেশ্য বড় পরিসরে বৈচিত্র্যময় অনুষ্ঠান আয়োজন করা। সেজন্য প্রয়োজন অধিক লোকবল ও ব্যবস্থাপনা। তাই ক্লাব ইলেভেনের সঙ্গে ইন্সেপশন মিডিয়াকে যুক্ত করা হয়েছে। গেল বছরের অক্টোবর থেকে আমরা এই প্রতিষ্ঠানকে সচল রেখেছি।

জাগো নিউজ : নতুন করে পথচলায় আপনাদের এখন পর্যন্ত সাফল্য কী?
জয়দ : সাফল্য উল্লেখ করতে গেলে অনেক। আমরা গেল বছরের শেষদিকে হাবিব ওয়াহিদ ও সুনিধি চৌহানকে নিয়ে জমজমাট কনসার্টের আয়োজন করেছি। এটি বেশ প্রশংসিত হয়েছে। তারপর গেল পহেলা বৈশাখে আমরা রাজধানীর সবচেয়ে বড় মেলা ও অনুষ্ঠান করেছি। বিখ্যাত কলাবাগান মাঠ বর্তমানে যেটি ধানমন্ডি শেখ জামাল মাঠ হিসেবে পরিচিত সেখানে এটি আয়োজিত হয়েছিলো ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের আয়োজনে। এর সহযোগিতায় ছিলো প্রাণ গ্রুপের ব্র্যান্ড অলটাইম। এখানে হাজার হাজার মানুষের আগমন ঘটেছিলো। সবাই শৃংখলভাবে মেলা উপভোগ করেছেন। ক্লাব ইলেভেন ইন্সেপশন মিডিয়ার জন্য এই বৈশাখী মেলার আয়োজনটি ছিলো একটি চ্যালেঞ্জের মতো। আমরা সেটি সফলভাবেই সম্পন্ন করেছি। তবে এটি সফল করার পেছনে মেয়র সাঈদ খোকনের অবদান ছিলো অনেক। তিনি নানাভাবে আমাদের দিকনির্দেশনা দিয়েছেন। পাশাপাশি আরো বেশ কিছু কাজ আমরা করেছি যেগুলো প্রশংসিত হয়েছে।

জাগো নিউজ : আপনাদের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কী?
জয়দ : আগেই বলেছি আমরা বিশাল পরিসরে কাজ করতে চাইছি। তাই আমাদের দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা রয়েছে। আমরা ইভেন্ট আয়োজনের পাশাপাশি মিডিয়া নিয়েও অনেক পরিকল্পনা করেছি। এর মধ্যে টিভিসি নির্মাণ, নাটক-টেলিফিল্ম ও চলচ্চিত্র নির্মাণ উল্লেখযোগ্য। এই অঙ্গনে ক্লাব ইলেভেন ইন্সেপশন মিডিয়া হবে সবার প্রিয় ও ভালোবাসার প্রতিষ্ঠান।

জাগো নিউজ : দেশের চলচ্চিত্রের বর্তমান অবস্থা খুব নাজুক। সহজে কেউ টাকা লগ্নি করতে সাসহ পাচ্ছেন না। সেখানে আপনাদের পরিকল্পনা ঠিক কেমন?
জয়দ : আমরা বিশ্বাস করি ভালো চলচ্চিত্র নির্মাণ করলে দর্শক সেটি হলে গিয়ে দেখবেন। আর দর্শক যদি হলে যান, তবে টাকা লগ্নি করতে ভয়ের কিছু নেই। উদাহরণ হিসেবে ‘ছুঁয়ে দিলে মন’ ছবির কথা বলা যায়। মন্দার বাজারেও কিন্তু ছবিটি দারুণ ব্যবসা করেছে এবং সব শ্রেণির দর্শকদের বিনোদন দিয়েছে। তবে এ কথা সত্যি, আমাদের হল সংকটসহ অনেক সংকটই রয়েছে। সবাই মিলে চেষ্টা করলে এসব সমস্যা দূর করা সম্ভব। আমরা হৃদয় ছোঁয়া, মৌলিক গল্প নিয়ে ছবি নির্মাণ করবো। বাণিজ্যিক, অফ ট্র্যাক- সব ধরনের ছবিই নির্মাণ করতে চাই। সেগুলো হতে পারে ক্লাব ইলেভেন ইন্সেপশন মিডিয়ার নিজস্ব পরিচালক দিয়ে, আবারো দেশের জনপ্রিয় নির্মাতারাও আমাদের সঙ্গী হতে পারেন।

জাগো নিউজ : এখন পর্যন্ত কোনো নির্মাণ নিয়ে পরিকল্পনা হয়েছে?
জয়দ : না। আমরা কোরবানি ঈদের পর এদিকে নজর দেব। এর আগে বেশ কিছু কাজ আছে, সেগুলো আগে গুছিয়ে নেয়া জরুরি। আমরা কয়েকটি কনসার্ট, ঈদ পুনর্মিলনী করার প্ল্যান নিয়েছি।

Jobes

জাগো নিউজ : একটু ভিন্ন প্রসঙ্গে যাই। আপনি এই প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে অনেকদিন ধরেই কাজ করছেন। এর ইভেন্ট আয়োজনগুলোর সঙ্গে আপনি পরিকল্পনা থেকে শুরু করে বাস্তবায়ন পর্যন্ত জড়িত থাকেন। এই প্রক্রিয়ায় প্রতিষ্ঠান থেকে কতোটা সাহয্য পান?
জয়দ : দেখুন, আপনি যে প্রতিষ্ঠানেই কাজ করুন, যদি সেখানে সর্বাত্মক সহযোগিতা না পান তবে আপনি সফলভাবে কিছুই করতে পারবেন না। আমি খুবই সৌভাগ্যবান যে আমার ঊর্ধ্বতনরা আমাকে কাজের সর্বোচ্চ স্বাধীনতা দেন। এখানে আমি একটা কিছু পরিকল্পনা করলে সেটাকে তারা সুবিবেচনা করেন এবং সেটি বাস্তবায়নের জন্য আমাকে সাহায্য করেন। চেয়ারম্যান স্যার আকবর হায়দার মুন্না সবসময়ই বলেন, চ্যালেঞ্জ নিয়ে এগিয়ে যাও। সিইও খান মোহাম্মদ বদরুদ্দীন স্যার আমাকে সবসময় সাহস দেন। বিশেষ করে বলতে চাই জেনারেল ম্যানেজার তাসফিনা হায়দারের কথা। তিনি আমার অভিভাবক এই প্রতিষ্ঠানে। আমার ভালো কাজগুলোর প্রশংসা করেন, অপরদিকে ভুলগুলো শুধরে দেন। এটা কাজের ক্ষেত্রে খুবই প্রয়োজন। পাশাপাশি আমার সহকর্মী ও সহযোগীরাও সবদিক থেকে সাহায্য করেন বলেই আমি নিখুঁতভাবে কাজ সম্পন্ন করতে পারি।

জাগো নিউজ : ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট নিয়ে আপনার অনুপ্রেরণা কে বা কারা?
জয়দ : আমি ইভেন্ট ম্যানেজমেন্টের ভলান্টিয়ার হিসেবে কাজ করিনি। এক্ষেত্রে আমি সৌভাগ্যবান। দীর্ঘদিন পরিচালক শিহাব শাহীনের সঙ্গে কাজ করেছি তার সহকারী হিসেবে। তার কাছ থেকে অনেক কিছু শিখেছি। তারপর কাজ করেছি আবদুস সামাদ স্যারের সঙ্গে। সেখান থেকে অনীক মাহমুদের সঙ্গেও দীর্ঘদিন কাজ করেছি। এই মানুষগুলো আমাকে হাতে ধরে ইভেন্টের কাজ শিখিয়েছেন। আমি তাদের সহচর্য পেয়েই আজকের এই অবস্থানে এসেছি। আর এই প্রতিষ্ঠানে আমার অনুপ্রেরণা জেনারেল ম্যানেজার তাসফিনা হায়দার।

জাগো নিউজ : আজকাল ইভেন্ট  ম্যানেজমেন্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর বিরুদ্ধে অনেক অভিযোগ দেখা যায় আইনি প্রক্রিয়ায় অসচ্ছতার। পাশাপাশি বিদেশি শিল্পীদের নিয়ে কনসার্ট করতে গিয়ে দেশীয় শিল্পীদের হেয় করার অভিযোগও উঠে। এ বিষয়ে আপনার বক্তব্য কী?
জয়দ : এটি আসলে খুব স্পর্শকাতর বিষয়। তবে আমি বলবো আপনি যে ব্যবসাই করুন তার জন্য দেশে প্রচলিত আইন মেনে চলতেই হবে। যারা এখানে ফাঁক রাখেন তাদের অবশ্যই শাস্তি হওয়া উচিত। পাশাপাশি বিদেশি শিল্পী ও দেশি শিল্পীদের ব্যাপারে যেটি বললেন সেটি আসলে নিজের দৃষ্টিভঙ্গির উপর নির্ভর করে। আমরা যখন সুনিধি চৌহানকে নিয়ে অনুষ্ঠান করলাম তখন সঙ্গে ছিলেন আমাদের জনপ্রিয় শিল্পী হাবিব ওয়াহিদ ভাই। আমরা তাকে প্রাইওরিটি দিয়েই অনুষ্ঠান করেছি। একটা বিষয় কী, আমরা নিজের দেশের শিল্পীকে বিক্রয় করতে চাই না। তিনি আমাদের শিল্পাঙ্গনের সম্পদ। কিন্তু ব্যবসার জায়গায় বিদেশি শিল্পীকে নিয়েই আমাদের বিজনেস পলিসি ঠিক করতে হয়। তাই প্রচারণা বা পোস্টারিংয়ে প্রায় সময় বিদেশি শিল্পীদেরই প্রাধান্য দেয়া হয়।

Jobes

এটাকে নেতিবাচকভাবে না নিয়ে ইতিবাচকভাবেই দেখা উচিত। ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর এই কৌশলটি সবাইকে বুঝতে হবে। কেউ চায় না তার দেশ ও দেশকে ছোট করতে। দেশীয় শিল্পীর মূল্যায়ন কেন পোস্টারে হবে? তিনি বা তারা আমাদের অন্তরেই প্রাধান্য পাবেন বিদেশি শিল্পীদের থেকে অনেক বেশি। তবে এই কথাও সত্যি, কিছু প্রতিষ্ঠান এসব ব্যাপারে তালগোল পাকাচ্ছে। তারা একটু সতর্ক হলেই আর সমস্যা থাকবে না। পাশাপাশি এই ব্যবসার প্রতি সরকারেরও আন্তরিকতা প্রয়োজন। একজন বিদেশি শিল্পীকে নিয়ে অনুষ্ঠান আয়োজন করতে গেলে আইনগত অনেক জটিলতার মুখোমুখি হতে হয়। এগুলো আরেকটু সহজ হলে ভালো হয়।

জাগো নিউজ : আপনার ব্যক্তিগত বিষয় সম্পর্কে জানতে চাই।
জয়দ : আমি খুবই সাধারণ একজন মানুষ, কাজপাগল মানুষ। কাজ করতে ভালোবাসি। ঢাকা থেকেই পড়াশোনা শেষ করেছি। আমার বাবা মুক্তিযোদ্ধা জান্নাতুল ফেরদৌস। মায়ের নাম নাসিমা বেগম। আমার ছোট এক বোন আছে। তার বিয়ে হয়েছে। তার মেয়ে পমপমকে নিয়ে আমার ব্যক্তিজীবনের উচ্ছ্বাস। আর বিশেষ কেউ বলতে, আর দশজনের মতো আমিও স্বপ্ন দেখি সুন্দর, সুখী একটা জীবনের। সেই জীবনের সঙ্গী হিসেবে একজন আছেন মনের মধ্যে। তাকে ভালোবাসি, সারা জীবন তাকে নিয়েই কাটিয়ে দিতে চাই। আর পেশার জায়গায় স্বপ্ন দেখি ক্লাব ইলেভেন ইন্সেপশন মিডিয়াকে নিয়ে অনেক দূর যাবার। এই প্রতিষ্ঠান আমার অনেক স্বপ্নকে ডানা মেলতে শিখিয়েছে। আমিও তাই প্রতিষ্ঠানের হয়েই সাফল্যের আকাশে উড়তে চাই।

জাগো নিউজ : ক্যারিয়ার হিসেবে ইভেন্ট ম্যানেজমেন্টের সম্ভাবনা কেমন?
জয়দ : এক কথায় প্রচুর। দিনে দিনে এটি শিল্পে রূপ নিচ্ছে। একজন বেকার তরুণ-তরুণী বসে না থেকে ইভেন্ট ব্যবসার উদ্যোগ নিতে পারেন। প্রথমে ছোট আয়োজনে শুরু হতে পারে। এখন প্রচুর প্রতিষ্ঠান হচ্ছে যারা প্রতিনিয়তই নানা ইভেন্টের আয়োজন করে। তাই এই ধরনের কাজ পাওয়া কঠিন কিছু নয়। তবে এই পেশায় সফল হতে হলে মেধা, শিক্ষা, পরিশ্রম, যোগাযোগে দক্ষতা, ব্যবস্থাপনায় দক্ষতা রাখা প্রয়োজন।

এলএ/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।